রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

পাম চাষিদের হতাশা দূর করতে এখনই উদ্যোগ নিন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২২

দিন ভোজ্য তেলের চাহিদা বাড়ছে। দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার সিংহভাগ পূরণ করা হয় আমদানি করা সয়াবিন ও পাম তেলের মাধ্যমে। অথচ দেশের মাটিতে পাম চাষ করে প্রক্রিয়াজাত করতে না পেরে বিপদে আছেন সিলেটের চাষিরা। সম্প্রতি দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে সিলেটের পাম চাষিদের দুঃখ গাঁথা প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে,বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল সিলেট। বিপুল পরিমাণ জমি এখনো অনাবাদি। আর সেই জমিতে বিদেশী পাম চাষ করে তেল উৎপাদনের সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। অনেক উদ্যোক্তাই তখন এগিয়ে এসেছিলেন। কেউ কেউ শুরুও করেছিলেন পাম চাষ। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণের অভাবে সেটি আর শিল্পে রূপ পায়নি। ফলে পাম বাগানে সম্ভাবনা তো দূরে থাক, উল্টো যেন রূপ নিয়েছে গলার কাঁটায়। সিলেটের সবচেয়ে বড় পাম বাগানটি গড়ে উঠেছে শহরতলির খাদিমপাড়া এলাকার খাদিম চা বাগানের ভেতর। ৩০০ একর ভূমিতে লাগানো হয়েছে চার হাজার গাছ। দিনে দিনে গাছগুলো বেশ উঁচু ও হূষ্টপুষ্ট হয়েছে। দৃষ্টিকাড়া বাগানে তাই প্রতিদিন ভিড় করেন দর্শনার্থীরা। বড় গাছগুলো থেকে সফলভাবেই উৎপাদন হচ্ছে পাম। সেগুলো বিক্রি হচ্ছে স্বল্প দামে। তবে সিলেটে পাম তেল প্রক্রিয়াজাতের ব্যবস্থা না থাকায় কোনো লাভই পাওয়া যাচ্ছে না। খাদিম পাম বাগান কর্তৃপক্ষ পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনার খরচ তুলতে পারলেও জৈন্তাপুরের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ আলী মাক্কুরের গল্পটা খুবই করুণ। ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি নিজের জমিতে লাগানো সাড়ে চার হাজার পাম গাছ কেটে ফেলেছেন। সেখানে নতুন করে লাগিয়েছেন মাল্টার চারা। তার ২০০৮ সালে লাগানো সাড়ে চার হাজার পাম গাছের চারা ১০ বছর পরিচর্যা করে ১ টাকাও আয় হয়নি, বরং গাছগুলো পরিচর্যা করতে গিয়ে জলে ফেলতে হয়েছে লাখ লাখ টাকা। আর সেই খরচ জোগাতে গোয়ালের গরু ও স্ত্রীর স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করতে হয়েছে। একসময় হতাশ হয়েই পাম গাছগুলো কেটে ফেলেন এ উদ্যোক্তা। তাদের অভিযোগ,পাম চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল কৃষি বিভাগ ও কিছু কোম্পানি। তাদের প্রলোভনে সিলেটের অনেকেই বিদেশী পাম চাষে পা বাড়িয়েছিলেন। একটি কোম্পানির কাছ থেকে ২৫০ টাকা করে সেই গাছের চারা কিনেছিলন। ফলও ধরেছিল কিন্তু প্রক্রিয়াজাতের মেশিন না থাকায় তেল করা সম্ভব হয়নি। একপর্যায়ে পচে নষ্ট হয়েছে সে ফল। মীনা আফজাল ইন্ডাস্ট্রিজের সিলেট অঞ্চলে প্রচুর টিলাভূমি রয়েছে। এখানে অনেক বৃষ্টিপাতও হয়। সব মিলিয়ে পাম চাষের জন্য উপযোগী জায়গা। অন্যদিকে বাগানের বেশকিছু ভূমি অনাবাদি পড়েছিল। ফলে অনেকেই দখলের চেষ্টা করে। তাই কয়েক বছর আগে বাগানের সীমানা এলাকার প্রায় ৩০০ একর ভূমিতে পাম চাষ করেছিল। সেই গাছগুলোয় এখন ফল ধরছে। কিন্তু প্রক্রিয়াকরণের অভাবে সম্ভাবনা থাকলেও তিনি কোনো কাজেই লাগাতে পারছেন না। বর্তমানে কিছু ফল ৬০-৭০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করছেন একটি সাবান কোম্পানির কাছে। সব মিলিয়ে যে টাকা পাওয়া যায় বাগান পরিচর্যায় নিয়োজিত তিন কর্মচারীর বেতন হয়। এর বাইরে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। ব্যক্তি পর্যায়ে সিলেটে যারা দুটি, চারটি, দশটি করে পাম গাছ কিনে লাগিয়েছিলেন, তারাও আজ হতাশ। সঠিক দিকনির্দেশনা না পেয়ে অধিকাংশ চাষিই গাছগুলো কেটে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেণন এটি প্রক্রিয়াজাত করার কোনো মেশিন এখনো আসেনি। আমরা মনে করি, সিলেটে পাম চাষের সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা আদৌ লাভবান হবেন নাকি ক্ষতির মুখে পড়বেন, বিনিয়োগের আগে তা যাচাই-বাছাই করতে হবে। তাছাড়া যতই স্বপ্ন দেখানো হোক না কেন, সিলেটে তেল প্রক্রিয়াজাতের জন্য কারখানা গড়ে না তুললে এ পাম চাষ কখনো শিল্পে রূপ নেবে না। আমরা মনে করি, সঠিক ব্যবস্থাপনা,সরকারের সহযোগিতার পেলে সম্ভাবনাময় পাম চাষ শিল্পে রূপ নিবে। তেল উৎপাদনে যেতে হলে প্রক্রিয়াকরণ মেশিন দরকার, যার দাম প্রচুর। সবচেয়ে ছোট মেশিন স্থাপন করতে হলেও অন্তত পাঁচ হাজার একর জমিতে পাম চাষ করতে হবে। তবে সিলেটের চা বাগানগুলোতে যে পরিমাণ অনাবাদি ভূমি রয়েছে তাতে এটি সম্ভব। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে পরিকল্পনা নেয়া জরুরি। তা না হলে অঙ্কুরেই মৃত্যুর ্আশংকা রয়েছে সম্ভাবনাময় এই শিল্পের, যা আমাদের কারো কাম্য নয়। আমরা আশা করি, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com