স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, বাংলাদেশ পুলিশ বিশ্বের যুদ্ধবিধ্বস্ত ও সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বিশ্বশান্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
গতকাল রবিবার (৩০ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁয়ে ‘ইউএনপোল ডে-২০২২’ এর উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন। জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পিস অপারেশনসের পুলিশ ডিভিশন এবং বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় ‘ইউনাইটেড নেশনস পুলিশ ডে-২০২২’।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের পাঁচশ’ সদস্য ‘জাতিসংঘ পুলিশ’ হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন শান্তিরক্ষা মিশনে পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। তাদের অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সম্মান ও মর্যাদা বেড়েছে।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক সদস্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে মোতায়েন করা হলে তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সেবায় দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবেন।’
শান্তিরক্ষা মিশনে নারী পুলিশ প্রেরণে বাংলাদেশ বর্তমানে শীর্ষ অবদানকারী দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের নারী শান্তিরক্ষীরা জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, সংঘাত এবং সংঘর্ষ কমাতে বিশেষ করে নারী ও শিশুর নিরাপত্তা প্রদানে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছেন।’
আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বে শান্তি ও সহযোগিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববাসীর সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর চেতনা ধারণ করে বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের গৌরবময় পদযাত্রা সূচিত হয় ১৯৮৯ সালে।’
আইজিপি বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশের বীর সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও সততা দিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসা অর্জন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে আমাদের নারী পুলিশ সদস্যরা নিজেদেরকে আইকনিক শান্তিরক্ষী হিসেবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।’
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ‘শান্তিরক্ষা মিশনের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সংহতি রেখে আমরা আধুনিক সরঞ্জাম ও অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের পুলিশ সদস্যদের প্রি-ডেপ্লয়মেন্ট সক্ষমতা বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমাদের সোয়াত, কেনাইন, নৌ এবং ফরেনসিক ইউনিট জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে সক্ষম।’
আইজিপি জাতিসংঘ সদর দফতর এবং শান্তিরক্ষা মিশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ পর্যায়ে বাংলাদেশ পুলিশের আরও বেশি অংশগ্রহণ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশকে ‘ইউএনপোল ডে-২০২২’ এর ভেন্যু নির্বাচিত করায় আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
জাতিসংঘের পুলিশ ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অ্যাডভাইজার কমিশনার জুন টান শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ পুলিশের শান্তিরক্ষীদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ সদর দফতরের পুলিশ ডিভিশন ‘ইউএনপোল ডে’ উদযাপনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ইউনাইটেড নেশনস ট্রেনিং আর্কিটেকচার প্রোগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক পুলিশিংয়ের জন্য কৌশলগত গাইডেন্স ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জাতিসংঘের পুলিশিং কার্যকারিতা বৃদ্ধির বিষয়ে পুলিশ প্রেরণকারী সদস্য রাষ্ট্র ও পিসিকিপিং প্রশিক্ষকদের অবহিত করে থাকে। এছাড়া, পুলিশ সদস্যরা নিজেদের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উপযোগী করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ, দক্ষতা এবং লজিস্টিকস্ সক্ষমতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করেন।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে নিউজিল্যান্ড এবং পেরুতে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব পিসকিপিং ট্রেনিং সেন্টারস (আইএপিটিসি) এর বার্ষিক সম্মেলনের আগের দিন ‘ইউএনপোল ডে’ আয়োজন করা হয়। এ বছর আইএপিটিসি’র ২৬তম বার্ষিক সম্মেলন ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত গাজীপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট)-এ অনুষ্ঠিত হবে।