মানুষকে কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র দাওয়াত দেয়া অনেক বড় দায়িত্বপূর্ণ কাজ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম দায়িত্বও ছিল কালেমার দাওয়াত। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী ব্যক্তির অন্যতম কাজ এটি। আন্তরিকভাবে এ কালেমা পড়ার মাধ্যমেই একজন মানুষ ঈমানের প্রকৃত স্বাদ গ্রহণ করে থাকেন। একনিষ্ঠতার সঙ্গে এ কালেমা পড়ার মাধ্যমেই মানুষ নাজাত পাবে। লাভ করবে সুনিশ্চিত জান্নাত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ কালেমা গ্রহণ করবে, যা আমি আমার চাচা (আবু তালিবের) কাছে পেশ করেছিলাম আর তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। সেই কালেমা ওই ব্যক্তির নাজাতের উপায় হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ) কালেমার দাওয়াত পাওয়ার যদি কোনো ব্যক্তি বিশ্বাসের সঙ্গে এ কালেমা পড়ে তবে অবশ্যই সে চূড়ান্ত মুক্তি লাভ করবে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে; একদিন না একদিন এ কালেমা অবশ্যই তার উপকারে আসবে। যদিও এর আগে তাকে কিছু শাস্তি ভোগ করতে হবে।’ (মুসনাদে বাযযার, আত-তাবারানি) কালেমা পড়ার আমল সম্পর্কেও রয়েছে হাদিসের একাধিক বর্ণনা। যেখানে কালেমা পড়ার ফজিলত ও মর্যাদা বর্ণনা করা হয়েছে। হাদিসের কিছু বর্ণনা তুলে ধরা হলো- – হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন একদিন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামতের দিন আপনার শাফাআত দ্বারা কোন ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- হাদিসের প্রতি তোমার আগ্রহ দেখেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, তোমার আগে এ বিষয়ে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না। অতপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার শাফাআত দ্বারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে ওই ভাগ্যবান ব্যক্তি যে অন্তরে ইখলাসের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)
– হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : নুহ আলাইহিস সালাম তাঁর ইনতেকালের সময় তাঁর দুই ছেলেকে ডেকে বলেছেন, ‘আমি তো অক্ষম হয়ে পড়েছি। তাই আমি তোমাদেরকে অসিয়ত করে যাচ্ছি। আমি তোমাদেরকে দু’টি বিষয়ে আদেশ করছি এবং দু’টি বিষয় থেকে নিষেধ করছি। – আমি তোমাদের শিরক এবং অহংকার থেকে নিষেধ করছি।
আর যে দুটি বিষয়ের আদেশ করছি তার একটি হলো- > ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। কেননা সব আসমান ও জমিন এবং এর মাঝে যা কিছু আছে সব কিছু যদি এক পাল্লায় রাখা হয় আর ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অপর পাল্লায় রাখা হয়, তবে কালেমার পাল্লাই বেশি ঝুলে যাবে (ভারি হবে)।
আর যদি সব আসমান-জমিন (সাত আসমান ও সাত জমিন) এবং এর মধ্যকার যা কিছু আছে (এ সব), একটি হালকা বা গোলাকার করে তার উপর এ কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ রাখা হয়, তবে তা ওজনের কারণে তা ভেঙ্গে যাবে।
> আর আমি তোমাদের আদেশ করছি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামাদিহি’ (পাঠ করার জন্য); কেননা এটা প্রত্যেক বস্তুর তাসবীহ, এর দ্বারাই প্রত্যেক বস্তুকে রিজিক দেয়া হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ)
– হজরত ইতবান বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে, কেয়ামতের দিন সে এমনভাবে উপস্থিত হবে যে, তার উপর জাহান্নাম হারাম হয়ে গেছে।’ (মুসনাদে আহমাদ, বুখারি, মুসলিম, বায়হাকি ও দূররে মানসুর) এ কারণেই সর্বোত্তম জিকির হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। যে জিকিরের বিনিময় শুধুই জান্নাত। এ তাওহিদের কালেমাই ঈমানের সর্বোচ্চ চুড়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কালেমা এ জিকিরের বিনিময় ঘোষণা করেছেন জান্নাত।
নিয়মিত তাওহিদের কালেমার আমল করে জান্নাতে যেতে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব হাদিসগুলোর পাশাপাশি ইবনে হিব্বানের ছোট্ট এ হাদিসটিও স্মরণ রাখা জরুরি। যা বর্ণনা করেছেন হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেছেন- ‘যে ব্যক্তি ইখলাসের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলবে; সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (ইবনে হিব্বান)
সর্বোপরি কথা হলো তাওহিদের কালেমার একনিষ্ঠ আমলকারীর জন্যই রয়েছে সুনিশ্চিত মুক্তি। কেননা এ হলো মহান রবের একত্ববাদের ঘোষণা। যা মানুষকে কুরআন-সুন্নাহর বিধিনিষেধ মেনে চলতে সহায়তা করে। দ্বীনের সঠিক পথের দিশা দেয়। যে বিশ্বাস ও আমলের উপর প্রতিষ্ঠিত হয় মানুষ দুনিয়া ও পরকালের সব বিষয়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী তাওহিদের কালেমার যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। হাদিসে ঘোষিত ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।