পচনশীল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব দেশের শহর-গ্রাম সর্বত্র। গ্রামগুলোতে নগরায়নের ছোঁয়া লাগলেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে কারো নজর নেই। সম্প্রতি দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে, পচনশীল বর্জ্য শহুরে জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত বিপজ্জনক করে তুলেছে। কঠিন বর্জ্যের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রান্তিক মানুষ। তাই জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় নিয়ে টেকসই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প ভিত্তিক নয়, কর্মসূচী ভিত্তিক হতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে বাদ দিয়ে নয়, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। গত বৃহস্পতিবার দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনস্থ এলডি হলে ইউএসএআইডি ও কাউন্টার পার্ট ইন্টারন্যাশনাল (সিপিআই)’র সহযোগিতায় দুঃস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে), বারসিক, ইনসাইটস ও কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর (কাপ) যৌথভাবে ‘টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অংশীজনের সম্পৃক্ততা, শিখন ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল। এতে ‘টেকসই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: অংশীজনের সম্পৃক্ততা, শিখন ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা বলেছেন, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রতিনিধিরা উল্লেখিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। সভায় ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে এলজিআরডি মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, উন্নয়নের সাথে শিল্পায়ন বাড়ছে। এ থেকে বর্জ্যও বাড়ছে। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এই বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নীতিমালা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে বর্জ্য সংগ্রহ শুরু করা হবে। তিনি আরো বলেন, বর্জ্য থেকে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। সেটা নিয়ে আমরা এখন কাজ করবো। আমাদের সাথে অনেক সংস্থা কাজ করছে। তারা বিনিয়োগ করবে এবং আমরা তাদেরকে বর্জ্য সরবরাহ করবো। এতে দেশে সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সভায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, দেশে আইনের কমতি নেই। কিন্তু আইন আমরা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারি না। তেমনি বর্জ্য ব্যবস্থপনা সংক্রান্ত নীতিমালা বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
আমরা জানি,দেশে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্য অর্জনে সম্প্রতি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১ পাশ হয়েছে। কিন্তু এতে সামগ্রিকভাবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সরকার কি কর্মকৌশল বা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে, তার কোন সুস্পষ্ট পথরেখার ধারণা পাওয়া যায় না। ২০১৪ সালের বর্জ্য ডাটাবেসে করা অনুমান অনুসারে, ২০২৫ সালে মোট বর্জ্য ৪৭ হাজার টন উৎপন্ন হবে। যদি এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে কঠিন বর্জ্য উৎপাদন ২০৩০ সালে ৫৭ হাজার টন এবং ২০৪০ সালে ৭৭ হাজার টন ছাড়িয়ে যাবে। শহরের ৫০ শতাংশ বর্জ্য সংগ্রহ হচ্ছে না। ফলে এসব বর্জ্য শহরে মারাত্মক দূষণ ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে বস্তি এলাকায় পড়ে থাকা বর্জ্যের কারণে নি¤œ আয়ের মানুষদের দুর্বিষহ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এছাড়া ঢাকার আশপাশের ল্যান্ডফিলগুলো থেকে প্রচুর পরিমাণ মিথেন নিঃসরণ করছে। যা কার্বন ডাই অক্সাইডের থেকে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকারক। তাই বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমাদের ল্যান্ডফিল ধারণা নিয়ে ভাবতে হবে।
আমরা মনে করি, শুধু নীতিমালায় কাজ হবে না। বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়ের অপরিহার্য দবি। বিষয়টি সরকারের সংশ্ষ্টি কতৃপক্ষ গুরুত্ব সাথে বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন -এই আমাদের প্রত্যাশা।