বরিশালের গণসমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপির পরিস্কার কথা, শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। সেই কমিশনের অধীনে নির্বাচন হবে।
গতকাল শনিবার (৫ নভেম্বর) অসহনীয় দ্রব্যমূল্য, লাগাতার লোডশেডিং, দুর্নীতি-দুঃশাসন, লুটপাট, মামলা-হামলা, গুম, হত্যা, জনগণের ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে বিভাগীয় মহা সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। প্রধান অতিথি হিসেবে ১০ মিনিট বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল। বরিশাল মহানগর বিএনপি আহবায়ক মোঃ মনিরুজ্জামান খান ফারুকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব এ্যাড, মীর জাহিদুল কবির জাহিদের সঞ্চলনায় বরিশালের গণ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস,ড, আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী,বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বির বিক্রম, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চেীধুরী সহ কেন্দ্রীয় বিএনপি বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ প্রর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার দুর্নীতি করেনি এমন একটা জায়গা দেখান। একটা চাকরিও কি তারা দিয়েছে?। দিয়েছে তবে সেটি আওয়ামী লীগের ছেলেদের। ২০ লাখ টাকা নিয়ে দিয়েছে। বিনা পয়সার সার দেওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে তিন গুণ দেশি দামের সার দিচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, সরকার হামলা আর মামলা করছে। ভোলায় লঞ্চে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধেই আবার মামলা দিয়েছে। এখন দেশে কেউ নিরাপদ নয়। এ সময় খালেদা জিয়া বরিশালকে বিভাগ করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় দিয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে চুরি আর ঘুষ ছাড়া আর কিছু নেই। ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে বলেছিল। কতো টাকায় চাল খাওচ্ছে। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে বলেছিল। দিয়েছে? চাকরি দিয়েছে আওয়ামী লীগের ছেলেদের। প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়ে। বিনা পয়সায় সার দেবে বলেছিল। দিয়েছে? আমাদের সময়ের চেয়ে তিন গুণ দামে সার কিনতে হচ্ছে। আওয়ামী লীগ এখন বর্গীতে রূপ নিয়েছে। আওয়ামী লীগের চরিত্রে দুটি জিনিস আছে। একটি হল চুরি আর অন্যটি সন্ত্রাস। এই দুটি তারা করবেই। তিনি বলেন, ভোট চুরি করে, নতুন নতুন বুদ্ধি করে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করছে। আমরা পরিস্কার ভাষায় বলছি, হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। সংসদ বিলুপ্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
মির্জা ফখরুল দলের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, টেক ব্যাক বাংলাদেশ। রাজপথে ফায়সালা করে বাংলাদেশকে আমরা ফিরিয়ে আনব। কোনো দ্বিমত নয়, ঝগড়াঝাটি নয়, ঐক্যবদ্ধভাবে আমাদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে। এই আন্দোলন সমগ্র জাতিকে রক্ষা করার জন্য। এটি বিএনপি’র কোনো আন্দোলন নয়।
আওয়ামী লীগ বর্গীর (লুটতরাজ প্রিয়) রূপ নিয়েছে বলে বরিশালের গণ-সমাবেশে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ আওয়ামী লীগ বর্গীর রূপ নিয়েছে। ভোটের অধিকার নিয়ে একবার নয়, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই ভোট চুরি করে। তারা সন্ত্রাস করবে, চুরি করবে এটা হয় না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসেছে তারা। এখন আবার নতুন করে ভোট চুরি ফন্দি আঁটছে। নতুন বুদ্ধি এঁটে নতুন কমিশন দিয়ে আবার কৌশলে ভোট চুরির চিন্তা করছে। কিন্তু এই হাসিনা-এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে কোন নির্বাচন হরে না।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন করতে হবে। এখন উন্নয়ন ছাড়া কিছুই দেখা যায় না! কিন্তু বাস্তবে গেলে কোনো কিছুতেই হাত দেওয়া যায় না। আমরা মুক্তি চাই, এ থেকে পরিত্রাণ চাই। আমাদের এই আন্দোলন বিএনপির জন্য নয় খালেদা জিয়ার জন্য নয় তারেক রহমানের জন্য নয় কিংবা আমাদের নেতাদের জন্য নয়। এ আন্দোলন জাতি ও দেশের প্রয়োজনে সমগ্রজাতিকে রক্ষা করার জন্য।