জনতার ঢল নেমেছে শুক্রবার থেকেই
আজ ১২ নভেম্বর শনিবার,ফরিদপুরে বিএনপির মহাসমাবেশ। কিন্তু জনতার ঢল নেমেছে শুক্রবার থেকেই। ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পাঁচ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মী-সমর্থক কোমরপুরের আব্দুল আজিজ স্কুলের গণসমাবেশের মাঠেই খোলা আকাশের নিচে রাতযাপন করেছেন। খ- খ- জটলা করে তারা সেখানে অবস্থান করছেন। তাদের রাতের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে গণসমাবেশ সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে। শুক্রবার জুমার নামাজও তারা মাঠেই আদায় করবেন বলে জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার রাত পৌণে ১২টার দিকে দেখা গেছে, মাইকে দেশাত্মবোধক সংগীত বাজছে। আর রাতের খাবার খাচ্ছেন অনেকে। দূরদূরান্ত হতে আসা এসব মানুষের অনেকে রাতটির বাকি অংশ এই মাঠেই পার করবেন কোনোভাবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতেই নেতাকর্মীতে পূর্ণ হতে থাকে মাঠ। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে চারপাশ। মাঠেই চলছে রান্না-খাওয়া। তাদের উজ্জীবিত রাখতে কেন্দ্রীয় নেতারা ঘুরে ঘুরে কথা বলছেন নেতাকর্মীদের সাথে। শনিবার এই মাঠে অনুষ্ঠিত হবে গণসমাবেশ।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জনসভায় আসতে শুরু করে। সন্ধ্যায় বাড়তে থাকে নেতাকর্মীদের ভিড়। ফরিদপুরের বাইরের জেলা গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও রাজবাড়ী থেকে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী এসেছেন সেখানে। রাতে দেখা গেছে, ফরিদপুর বিভাগীয় গণসমাবেশের আপ্যায়ন কমিটির পক্ষ থেকে মাঠের পাশেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখান থেকে বিলি হচ্ছে তিন বেলার খাবার। গণসমাবেশের শৃঙ্খলা উপকমিটির প্রধান শহর বিএনপির যুগ্ন আহ্বায়ক এমটি আক্তার টুটুল জানান, গণসমাবেশ স্থানের সার্বিক শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে কাজ করছে তাদের কর্মীরা।
বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সমন্বয়কারী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম জানান, সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানুষ আসছে। এটি শুধু বিএনপির কর্মসূচি নয়, এখন সাধারণ মানুষও এখানে এসে একাত্মতা জানাচ্ছেন। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, আমাদের এই গণসমাবেশ কোমরপুরের মাঠ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়বে বহু দূর।
ঢাকা থেকে এক শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সোজা ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে এসে থামলো গাড়ি। রাত তখন ১১টা ৪৫ মিনিট। গাড়ি থেকে নামতে নামতেই ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো আলো-আধারী মাঠের ভেতর থেকে সহস্র কণ্ঠের স্লোগান ভেসে এলো-‘জিয়া, খালেদা’, ‘খালেদা জিয়া।’ সামনে এগুতেই দেখা গেল অভিনব সব চিত্র। যে স্লোগান ভেসে আসছিল, সেখানে এগিয়ে গেলে দেখা যায় ঝাঝালো বক্তব্য দিচ্ছেন যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। প্রায় হাজার খানেক নেতা-কর্মী তার কথা শুনছেন আর উদ্দীপ্ত হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন। এরই মধ্যে খোলা আকাশের নিচে দেখা গেল বহু মানুষ কাথা-চাদড় মুড়িয়ে ঘুমাচ্ছেন। মনে হলো, আহা! এভাবে কী ঘুম হয়? অন্যদিকে চলছে খাবার পরিবেশন। ওয়ান-টাইম প্লেটে খিচুড়ি এমন পরিবেশে দারু মানানসই, এটা বলা চলে। এরই মধ্যে চোখ পড়লো ছোট ছোট বেশ কয়েকটি তাবুর দিকে। কেন এসব? জানা গেল, কর্মীদের সাথে নেতারাও রাতে থাকবেন মাঠেই। এটাই হাইকমান্ডের নির্দেশ। ফরিদপুরের এই মাঠে বিএনপির গণসমাবেশ আজ শনিবার। বৃহস্পতিবার রাতে দেখা গেল এমন দৃশ্য। অর্থাৎ নেতা-কর্মীরা তিন দিন আগেই এখানে জড়ো হতে শুরু করেছেন।
মাঠে দাঁড়িয়ে কথা হয় কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিমের সাথে। তিনি বলেন, গোপালগঞ্জ থেকে দুই হাজার নেতা-কর্মী এসেছেন। ওই যে সামিয়ানা (মঞ্চের পাশে) সব গোপালগঞ্জের। এরকম সব জেলা থেকেই নেতা-কর্মী আসছেন বলে জানান সেলিম। এসময় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির দায়িত্বে থাকা যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল হাসান পিঙ্কু ভূঁইয়া বলেন, ফরিদপুর কারো পৈত্রিক সম্পত্তি নয়। নেতা-কর্মীদের আটকাতে পারবে না কোনো বাধাই।
পিঙ্কু জানান, গতরাতে ৭/৮ হাজার নেতা-কর্মীর মাঝে রাতের খবার বিতরণ করা হয়েছে। জেলার নেতারা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এসব ব্যবস্থা করছেন। বিএনপির এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে জেলার শ্রমিক সংগঠনগুলো আজ ও কাল দু’দিনের ধর্মঘট ডেকেছে। এই ঘোষণা আসার আগেই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে উপস্থিত হতে শুরু করেন। যা আজ আরো বহুগুণে বাড়বে বলে জানিয়েছেন নেতারা। সমাবেশবকে ঘিরে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নয়জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গণসমাবেশের প্রস্তুতিও প্রায় শেষের পথে। মঞ্চ প্রস্তুত। সমাবেশকে ঘিরে রাস্তা-ঘাট সর্বত্র সাজসাজ রব। সমাবেশস্থল ও সড়কে শোভা পাচ্ছে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানার। বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশ কর্মসূচি চলছে ১২ অক্টোবর থেকে। ফরিদপুর হবে ষষ্ঠ সমাবেশ, যা শেষ হবে ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে।