শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:১৯ পূর্বাহ্ন

জ্বালানি অনিশ্চয়তায় যেন বিনিযোগ বন্ধ না হয়

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২

জ্বালানি অনিশ্চয়তায় বিনিযোগে আগ্রহ কমছে। অথচ ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) আওতায় ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার কথা বলা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী বিনিয়োগের প্রত্যাশা রয়েছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন। জাপান, ভারত ও চীনের জন্য পৃথক অর্থনৈতিক অঞ্চলের কার্যক্রমও কম-বেশি এগিয়েছে। তবে বিদ্যমান জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটে বেজার উজ্জ্বল সম্ভাবনা ফিকে হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ্য করা হয়েছে,অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগের বৃহৎ পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বর্তমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটের পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাবে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগ আসা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। যখন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর পরিকল্পনা নেয়া হয়, সে সময় চীন থেকে অনেক বিনিয়োগই বাংলাদেশে আসবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান সংকটে কোনো কোনো উদ্যোক্তা বিনিয়োগের পরিকল্পনা স্থগিত করে রেখেছেন। কারণ কোনো অর্থনৈতিক অঞ্চলে কারখানা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন হওয়ার নিশ্চয়তা এখন পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলেও তেল সরবরাহ নিশ্চিত না হলে কী করে সম্ভব হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
আমরা মনে করি, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক এমন একটি ইতিবাচক প্রকল্প যে কোন মূল্যে বাস্তবায়ন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে আশার আলোকে দেখিয়েছে বেজা কর্তৃপক্ষ। বেজা সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে যে কার্যক্রম চলমান আছে সেগুলোয় শিল্পের ধরনে ভিন্নতা রয়েছে। সব শিল্পই যে গ্যাসনির্ভর এমন নয়। বিদ্যুতের চলমান সমস্যা অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পকেও ছুঁয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। জেনারেটর দিয়ে উৎপাদন চলমান রাখা ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। তবে গ্যাসনির্ভর যে শিল্পগুলো হয়েছে, সেগুলোয় প্রভাব পড়বে না। কারণ গ্যাসনির্ভর শিল্প সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। বেশির ভাগ শিল্পেরই বিদ্যুৎনর্ভরতা বেশি। বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে চারটি শিল্প উৎপাদনে গিয়েছে। চারটিই বিদ্যুৎনির্ভর। বিকল্প হিসেবে এ শিল্পগুলোর জেনারেটর সংযোগ রয়েছে।
বেজার অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা বলছেন, সহজলভ্য শ্রমের প্রেক্ষাপটে দক্ষিণ এশিয়ায় বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশের বিকল্প কম। থাকার মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আছে ইন্দোনেশিয়া। মিয়ানমারে বিনিয়োগকারীদের যাওয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম। এখন পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা ইতিবাচক। কিন্তু এখন সরকারকে উঠে পড়ে লাগতে হবে বড় না হলেও মাঝারি আকারের বিনিয়োগকারী আকর্ষণের জন্য। বর্তমানে জ্বালানি সংকট একটা অস্থায়ী যুদ্ধের মতো। এ পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার বিষয়ে আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা। তবে আমলাতন্ত্রকে সহজ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা। বিনিয়োগকারীরা যেন অনলাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সব সেবা পেতে পারেন, এমন নিশ্চয়তা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ ধরে রাখতে অন্তত একটা অর্থনৈতিক অঞ্চল খুব ভালো করে সক্রিয় করা প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, তাদের এই প্রত্যাশার সাতে দ্বিমত করার কোন সুযোগ নেই। যদিও শুধু অর্থনৈতিক অঞ্চল নয়, এর বাইরেও গ্যাস সংকট রয়েছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগ কোনো সংকটেই থেমে থাকেনি। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিনিয়োগ ব্যয় বাড়বে। তবে এর কারণে কেউ বিনিয়োগ করবে না এমন ধারণা সঠিক নয়। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বর্তমান সংকট কৃত্রিম। এ সংকট আজীবন থাকবে না। বর্তমানে সব ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন চলছে, যার মাধ্যমে ডলার সাশ্রয় হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত ব্যয় পরিহার করতে হচ্ছে। তা না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে এমন শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যেও যতটুকু সম্ভব অর্থনৈতিক কর্মকা- সক্রিয় থাকতে হবে। জ্বালানি অনিশ্চয়তার কারণে যেন বিনিযোগ বন্ধ না হয়। আশা করি,সকল আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে প্রকল্প এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক ভূমিকা পালন করবেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com