পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশের দু’কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। জাতিসঙ্ঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৭-এ এক আলোচনায় তিনি বলেন, এটা সারা বিশ্বের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি। মিশরের শারম আল শাইখে কপ-২৭-এ জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিবাসন বিষয়ে আলোচনায় যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। সেখানে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজকে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত। বিভিন্ন হিসেবে দেখা গেছে, এ সংখ্যা দু’কোটিতে গিয়ে পৌঁছাবে।
জলবায়ু অভিবাসন ও নিরাপত্তা ঝুঁকি: মোমেন আরো বলেন, এর বাইরে নিজের স্বাভাবিক আবাস হারাবার ঝুঁকিতে আছেন এর প্রায় দ্বিগুণ। বিশ্বব্যাংক বলছে, লবণাক্ততা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অন্য সব কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ চার কোটি মানুষ তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হবেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি অন্য যেকোনো অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতির চেয়ে বেশি হবার আশঙ্কা আছে। এই মানুষগুলোর বাস্তুচ্যুতি বিশ্বকে ঝুঁকিতে ফেলছে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, এর দায়িত্বও তাই সবাইকে নিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তৈরি হওয়া উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের দায়ের ভাগ নিতে বিশ্ব নেতৃত্বের এগিয়ে আসতে হবে এখনই।
আমরা যদি এখনি সংশোধনমূলক ব্যবস্থা না নেই তাহলে এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বের জন্য একটা নিরাপত্তা ইস্যুতে পরিণত হবে।
প্রভাব মোকাবেলায় দ্বিগুণ অর্থ চায় বাংলাদেশ: জলবায়ু সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ সপ্তাহের শুরু হয়েছে সোমবার। এদিন বিকেলে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান উল্লেখ করেছে। বাংলাদেশ বলছে, বৈশ্বিক অর্থায়ন এখনো পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রকল্পেই যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের প্রয়োজন এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াবার জন্য অর্থ। কপের শুরুতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান বা জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তুলে ধরে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ২০৫০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রতি বছর গড়ে প্রয়োজন সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার বা পঁচাশি হাজার কোটি টাকা। বিকেলে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, আপনি জানেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশ সপ্তম সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। গত ৩১ অক্টোবর ২০২২ বাংলাদেশ জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা জমা দেয়। পরে ২৭ বছরের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার দরকার হবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীলতা বা অভিযোজনের জন্য তহবিল দ্বিগুণ করার দাবি করেছে। ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনে যে প্রতিশ্রুতি করা হয়েছিল যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে দেবে, তা বাস্তবায়িত হয়নি এবং এর প্রায় ৮০ ভাগ যাচ্ছে কার্বন নিঃসরণ কমানোর খাতে।
বন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আরো বলেন, ৭০ ভাগেরও বেশি ঋণ হিসাবে সরবরাহ করা হয় এবং তা বাজারমূল্যে দেয়া হয়। জলবায়ু অর্থায়নের নামে, অর্থ প্রবাহের এমন ধারা অব্যাহত থাকলে তা দুর্বল অর্থনীতির ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন করে ঋণের বোঝা তৈরি করতে পারে। আমরা জোরালোভাবে প্যারিস চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে সুষমভাবে বরাদ্দ এবং অভিযোজনের জন্য অনুদান-ভিত্তিক অর্থায়নের পক্ষে। বাংলাদেশের পক্ষে যে দাবিগুলো তোলা হয় তা হলো- ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণ ৪৫ ভাগ হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ চূড়ান্ত করা, দেড় ডিগ্রির লক্ষকে বাঁচিয়ে রাখা, জলবায়ু অর্থায়নে গতিশীলতা তৈরি করা এবং এ বছর থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা এবং লস এন্ড ড্যামেজ তহবিলের বাস্তবায়ন করা। সূত্র: ডয়েচে ভেলে