বাংলাদেশে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে ইভিএমে যে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র যোগ করতে পারে, এর বাইরে কিছু করতে পারে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীর। তিনি বলেন, নির্বাচনে যেসব প্রার্থী থাকেন ইভিএম তাদের ভোটটা যোগ করতে পারে। আর কিছু করতে পারে না। প্রোগ্রামিংটা ওইভাবে করা। কাজেই কেউ যন্ত্রে বা বাইরে কেউ ম্যানিপুলেশন করবে সে সুযোগ নাই। গতকাল মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান তিনি।
মো. আলমগীর বলেন, ইভিএমে ভোট নেওয়ার সুবিধা হলো ভোটের আগে-পরে ভোট দেওয়ার সুযোগ অথবা ভোটার ছাড়া কেউ এসে ভোট দিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। একটা দুর্বলতা আছে যে গোপন বুথে যদি ভোটারকে ঢুকতে না দেওয়া হয়, এই সুযোগটা আছে। তবে ভোটার কেন্দ্রে না আসলে সেই সুযোগ নেই। যদি ১০ শতাংশ ভোটার আসেন তবে ১০ শতাংশ ভোটই কাস্ট করতে পারবে। আর ব্যালটে ১০ শতাংশ ভোটার আসলে শতভাগ ভোট দেওয়া সম্ভব। এটার (ইভিএম) মাধ্যমে জালিয়াতি কোনো সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন যে ইভিএম একটা কারচুপির মেশিন। আসলে আমরা এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। অতীতের নির্বাচনের যে অভিজ্ঞতা নিয়েছি, তাতে দেখেছি, ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা তো কারিগরি দিক থেকে এক্সপার্ট না, যারা এক্সপার্ট তারা বলেছেন। দলগুলোকেও ডেকেছিলাম তাদের কারিগরি টিম এনে পরীক্ষা করে দেখার জন্য।
সাবেক এই ইসি সচিব বলেন, ইভিএম নিয়ে প্রথমেই যেটা বলা যে, প্রোগ্রামিং করে ফল উল্টিয়ে দেওয়া যায়। তো তাত্ত্বিক দিক দিয়ে যারা বলেন তারা হয়তো ঠিকই বলেন। কিন্তু বাস্তবতার দিক দিয়ে এটা মোটেই ঠিক না। আপনি বলতেই পারেন যেকোনো একটা কোম্পানির ওষুধে ভেজাল থাকতে পারে, তবে সব কোম্পানির ওষুধে কিন্তু ভেজাল না। বিষয়টা হলো যে আমাদের ইভিএম এটা ভিন্ন ধরনের ইভিএম। অনেকেই বলেন এটা ভারতের ইভিএমের মতো। আসলে ভারতের সঙ্গে এটার তুলনা করা যায় না। ভারতের ইভিএমে ভোটার আইডেন্টিফিকেশন করে ম্যানুয়ালি। আমাদের ইভিএমে আইডেন্টিফিকেশন করা হয় ডিজিটালি। যেহেতু আমাদের ভোটার ডাটাবেজ আছে ছবিসহ এবং ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ। কাজেই ভোটার আসলেই এই কেন্দ্রের ভোটার কি না, আসল ভোটার নাকি অন্য কোনো ব্যক্তি; এটা মেশিনই আইডেন্টিফাই করে। যেটা ভারতের ইভিএমে করার সুযোগ নাই।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিষয় হলো এই ইভিএমটায় যে প্রোগ্রামিং করা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র যোগ করতে পারে। যে প্রার্থী আছে তাদের ভোটটা যোগ করতে পারে। আর কিছু করতে পারে না। প্রোগ্রামিংটা ওইভাবে করা। কাজেই কেউ যন্ত্রে বা বাইরে কেউ ম্যানিপুলেশন করবে সে সুযোগ নাই। কারণ এটার যে চিপস ব্যবহার করা হয়েছে, যেখানে রাইট করা হয়, এটা হলো ওয়ানটাইম ইউজেবল। কাজেই একবার রাইট করা গেলে রিরাইট বা এডিট করার কোনো সুযোগ থাকে না।
নির্বাচন কমিশনার আলমগীর আরও বলেন, আরেকটা বিষয় হলো যে ইন্টারেন্টের সঙ্গে আমাদের ইভিএমের কোনো সংযোগ নেই। ব্যালট ইউনিটের সঙ্গে যে সংযোগ দেওয়া হয়, এটা কিন্তু কাস্টমাইজ করা। বাজারে কেনা কোনো ক্যাবল, ড্রাইভ- কোনোকিছুই এটার মধ্যে ইনসার্ট করতে পারবেন না। কেবল এই ইভিএমের জন্য যে ডিভাইস তৈরি করা হয়েছে, সেটা ছাড়া আর কোনো ডিভাইস যোগ করতে পারবেন না।
তিনি বলেন, এটা কেবল যোগ-বিয়োগ করে। ক্যালকুলেটরের মতো। ক্যালকুলেটরে যেমন প্রোগ্রাম পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। আমাদের ইভিএমে তেমনি সে সুযোগ নেই। ইভিএম নিয়ে যে অপপ্রচার আছে, যারা বলেন তারা না জেনে না বুঝে বলেন। তারা চাইলে যেকোনো ইভিএমে চেক করে দেখতে পারেন।
এসময় তিনি ভোটগ্রহণে কারচুপি করলে প্রার্থীদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্টরা কারচুপিতে সহায়তা করলে বা কারচুপি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই বলে এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে থেকে বাইরে রাখা যাবে না। এটা কোনো দলই মানবে না। মশারির ভেতরে মশা ঢুকলে মশারি পুড়িয়ে দিলে তো হবে না, মশা তাড়াতে হবে। তেমনই কোনো এজেন্ট অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নিতে হবে।