করোনাভাইরাসের কারণে রাজধানী ঢাকার প্রায় সব পার্ক ও উদ্যান বন্ধ রয়েছে। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হলেও এখনও এসব বিনোদন কেন্দ্র চালু হয়নি। কবে নাগাদ খোলা হবে সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছে। তারা জানিয়েছেন, এজন্য এখনও তাদের কাছে কোনও নির্দেশনা আসেনি। তবে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো চালু করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। আর ঢাকা জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের জারি করা বিধিনিষেধ শেষ হলে পার্কগুলো পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জারি করা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) দিয়ে পরিচালিত হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর প্রায় সবকটি বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক, জাতীয় চিড়িয়াখানা, বোটানিক্যাল গার্ডেন, বলধা গার্ডেন, ডিএনসিসি ওন্ডারল্যান্ড, জাতীয় জাদুঘর, শাহবাগ শিশু পার্কসহ অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে। গণপরিবহন ও সরকারি অফিস আদালত পুরোদমে চালু হলেও এখনও এসব বিনোদন কেন্দ্র চালু হয়নি। তবে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগুলো চালু করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছে সরকার। বন্ধ রয়েছে জাতীয় জাদুঘর। কবে নাগাদ খোলা হবে সে বিষয়েও কোনও তথ্য নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে এখনও জাতীয় জাদুঘর বন্ধ রয়েছে। তবে এর প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। শুধু দর্শনার্থীদের জন্য এখনও উন্মুক্ত করা হয়নি। আমাদের কাছে এখনও মন্ত্রণালয় থেকে কোনও নির্দেশনা আসেনি।
বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক হক মাহবুব মোরশেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনও বোটানিক্যাল গার্ডেন খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকেও কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে যতদূর জানি এ নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে একটা আলোচনা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, পরিবেশ পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, তাহলে আগামী অক্টোবরের দিকে এগুলো খুলে দেওয়া যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করতে। তবে এখনও আমাদের কাছে কোনও নির্দেশনা আসেনি। বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানাও। কবে নাগাদ চিড়িয়াখানাটি চালু হবে তারও কোনও তথ্য দিতে পারেননি কিউরেটর ডা. মো. নূরুল ইসলাম। তবে মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখনও চিড়িয়াখানা চালুর সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে এর কিউরেটরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কীভাবে এটি চালু করা যায় সে বিষয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য। যেহেতু সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে সেহেতু চিড়িয়াখানাও খুলে দেওয়া হবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাঠ ও পার্কগুলোও বন্ধ রয়েছে। তবে যেসব মাঠ ও পার্কে টিকিট কেটে প্রবেশ করতে হয় না, সেসব মাঠ ও পার্ক খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের যতগুলো মাঠ প্রস্তুত হয়েছে আমরা সব খুলে দিয়েছি। স্থপতিদের নির্দেশনা ক্রমে সপ্তাহের যত দিন খোলা রাখলে মাঠ ও পার্কগুলো ভালো থাকবে সে অনুপাতে শিডিউল করে দেওয়া হয়েছে। এরপর করোনার কারণে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে সব খুলে দেওয়া হয়নি। তবে কোথাও কোথাও স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে মাঝে মাঝে খোলা হয়। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে শাহবাগের শিশুপার্ক বন্ধ রয়েছে। খুব সহসা এটি খোলা হবে না। এর বাইরে আমাদের মালিকানাধীন এখন আর কোনও শিশুপার্ক নেই। স্বাভাবিক সময়ের শিশু পার্কসংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মুক্তি আবুল হাসেম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের মাঠগুলোর মধ্যে আব্দুল আলিম খেলার মাঠ, রসুলবাগ ও নবাবগঞ্জ শিশুপার্ক খোলা রয়েছে। করোনাকালীন সময়ে কিছু নির্দেশনা থাকলেও তা স্থানীয়রা মানতে চান না। আমি কয়েকদিন গিয়ে দেখেছি সবকটিতে বাচ্চারা খেলছে।
বন্ধ রয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন শ্যামলীর ডিএনসিসি ওয়ান্ডারল্যান্ড। জানতে চাইলে সংস্থাটির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমাদের শ্যামলীর ওয়ান্ডারল্যান্ড বন্ধ রয়েছে। আমরা এটা ইজারা দিয়ে দেওয়ার পর তা দেখাশোনার দায়িত্ব ঢাকা জেলা প্রশাসকের। এটা কবে খুলবে সেটা ডিসি সাহেব বলতে পারবেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের আরোপিত বিধি নিষেধের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মতো পার্কগুলো চালু হবে। তখন পার্কগুলো পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জারি করা এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) দিয়ে চলবে।- বাংলা ট্রিবিউন