মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৩৭ পূর্বাহ্ন

দ্বীন প্রচারে নারীর ভূমিকা

আব্দুল কাদের রুহানী:
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২

ইসলাম প্রচারে পুরুষদের যেমন ভূমিকা আছে, তেমনি নারীদেরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। দ্বীনের প্রচার-প্রসারে নারীদের যথাযথ ভূমিকা পালনের মাধ্যমে মানবজীবনে পূর্ণ দ্বীন বাস্তবায়ন সম্ভব। ইসলামের দৃষ্টিতে ঈমান-আমল ও ইবাদতে নারী-পুরুষের মর্যাদাগত কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য আছে বলে মনে করাও অজ্ঞতা। ইসলাম সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছে, মর্যাদা-লাঞ্ছনা ও মহত্ত্ব-নীচুতার মাপকাঠি হচ্ছে- তাকওয়া তথা পরহেজগারি এবং নৈতিক চরিত্র। তাকওয়া ও চরিত্রের মাপকাঠিতে যে যতটা খাঁটি প্রমাণিত হবে আল্লাহর কাছে সে ততটাই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। এমনকি সভ্যতা বিকাশে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। এই পৃথিবীতে পারিবারিক বন্ধন, বংশবৃদ্ধির ক্রমধারা অব্যাহত রাখা, মানবীয় গুণাবলির সম্মিলন ঘটানো, সর্বোপরি জীবনকে সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গরূপে গড়ে তোলার ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়ের সমান অংশীদারত্ব রয়েছে।
বিশ্ববাসীর শান্তির বার্তাবাহক সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব আমাদের প্রিয় নবীজী সা:-এর সাহাবিদের মধ্যে পুরুষদের পাশাপাশি নারী সাহাবিও ছিলেন। ইসলামের দৃষ্টিতে নারীর জীবন এক মহিমান্বিত জীবন। দ্বীন ইসলাম ধর্ম প্রচার ও প্রসারে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে যেসব নারী জীবনের মায়া ত্যাগ করে সোনালি ইতিহাস গড়ে গেছেন, তাদের অনুসৃত পথেই বর্তমানে নারীদের চলতে হবে। সে পথে চলার জন্য সম্মিলিতভাবে সব নারীকে আহ্বান করতে হবে। তা হলেই নারী জীবনে পূর্ণতা আসবে। তাই নারীদের প্রধানতম কর্তব্য হলো সমাজের বিভিন্ন মহলের নারীদের কাছে ইসলামে অমিয় বাণী পৌঁছানো, দ্বীনের আলো ছড়ানো। সুতরাং পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করে যারা এগিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সে জান্নাত লাভের প্রয়াসে, যা প্রশস্ততায় আকাশ ও জমিনের মতো।’ (সূরা হাদিদ-২১) ইতিহাস সাক্ষী, বহু নারী আল্লাহর রাস্তায় মেহনতের মাধ্যমে অলঙ্কৃত করে গেছেন এই দ্বীনকে। যুগ শ্রেষ্ঠ সেই নারীদের সংখ্যা কিন্তু কম নয়। প্রত্যেক সচেতন নারীকে ভাবতে হবে, শান্তির বাণী প্রচারের জন্য দাওয়াতের চিন্তাও করতে হবে। কিভাবে, কোন পথে ছোট-বড়, ধনী-গরিব, ফকির-মিসকিন, অহঙ্কারী-বদমেজাজি ও বিশেষ করে দ্বীনের প্রতি উদাসীন মা-বোনদের কর্ণকুহরে শাশ্বত ইসলামের দাওয়াত পৌঁছানো যায়। ইসলামের পথে সে তার চিন্তাচেতনা, বুদ্ধি-বিবেক, জানমাল ও সময়কে ব্যয় করার ফিকিরও করা লাগবে। কিভাবে পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে দ্বীনী পরিবেশ তৈরি করা যায় সে জন্য প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
নারীদের ছোট ছোট প্রচেষ্টাতেই গড়ে উঠতে পারে একটি সুন্দর সোনালি সমাজব্যবস্থা। নারী কোনো অবহেলার পাত্র নয়, নারীকে অবলাও মনে করে না ইসলাম; বরং ইসলাম বলে, হে নারী সম্প্র্রদায়, জেনে রাখুন একজন নারীর ভেতর অশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা লুকিয়ে আছে। এই মর্যাদার দরুন নারীরাই পারে ইসলামের শিক্ষায় সুন্দর শিক্ষিত ও আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে। একজন আদর্শবান মা পারে আদর্শবান সন্তান তৈরি করতে।
এটি ঠিক যে, নারীদের জন্য দাওয়াতি আমল শুরু করা খুব সহজ নয়। তবে শুরু করলে সফলতা আসবে। আপনাকে হতাশ হলে চলবে না। নিজেকে অক্ষম মনে করা যাবে না। বারবার তার দুয়ারে কড়া নাড়তে হবে। এক সময় সে সাড়া দেবেই। এরপর সেও কড়া নাড়বে আরেকজনের দুয়ারে। এমনিভাবেই একের পর এক জয়যাত্রা এগিয়ে যাবে বিশ্বময় প্রতিটি মানুষের হৃদয় দুয়ারে। আর দুনিয়ায় বইবে জান্নাতের সুবাতাস, শুধু নারীদের কল্যাণে।
ইতিহাস সাক্ষী, যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্ম ও সভ্যতায় নারী জাতি নানাভাবে উপেক্ষিত, নিগৃহীত ও লাঞ্ছিত হয়ে এসেছে। পুরুষরা নারীকে বাদ দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ও বাস্তবায়ন করেছে। চাই সমাজে শান্তি আসুক বা না আসুক। কিন্তু ইসলাম সম্পূর্ণ এর বিপরীত। ইসলামই একমাত্র জীবন ব্যবস্থা যা কি না পুরুষের সাথে সব কাজেই নারীকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন ও মুমিনা একে অপরের বন্ধু। তারা সৎকাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজে বাধা দেয়।’ (সূরা আত তওবা-৭১) সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই সামাজিক বিষয়ের সাথে সাথে অর্থনৈতিক বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণে এমনভাবে গুরুত্ব দিতে হবে, যেন শুরু করার আগেই শেষ না হয়ে যায়। ইসলামী শরিয়তের আলোকে নারীদের ইজ্জত, সম্মান, মর্যাদা ও মূল্যবোধ রক্ষা তাদের মাতৃত্বমূলক দায়িত্বে বিঘœ সৃষ্টি না করে দেশ ও জাতির অগ্রগতি এবং উন্নতির লক্ষ্যে নারীদের জন্য আলাদা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মানবিক বিপর্যয় ঘটবে। ভেঙে যাবে পারিবারিক সম্পর্ক ও স্বামী-স্ত্রীর বন্ধন। যার বাস্তব চিত্র আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, পশ্চিমা জীবন ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। ইসলামের ইতিহাসে নবী পরিবারের নারীরাও বিভিন্ন সমাজসেবা ও দেশসেবার কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। রোগীর সেবা-শুশ্রুষা ও যুদ্ধাহতদের পরিচর্যায় তারা অনবদ্য, অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। নারীকে গৃহাভ্যন্তরে আটকিয়ে না রেখে ও ইসলামকে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে ঠেলে দিয়ে জীবন জীবিকাকে অভিশপ্ত না করে সবার অধিকার রক্ষায় এবং চির শাশ্বত কল্যাণমুখী কার্যকর ভূমিকায় নারীদেরকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা। লেখক : দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com