বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

আমার পরিচয় : আমি একজন মুসলিম

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২২

সৃষ্টির ধর্মই হলো ইসলাম। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, গ্রহ-তারা-নক্ষত্র, জীব-জানোয়ার এই বিশে^ যা কিছু আছে এমনকি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সব কিছুই মুসলিম, আর মুসলিম না হয়ে উপায়ও নেই। অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যে সবাই আল্লাহর বিধান মেনে চলছে। শুধু মানুষের রয়েছে ভিন্ন আরেকটি সত্তা যেটিকে বলা হয় নৈতিক সত্তা, অর্থাৎ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, বোধ-উপলব্ধি এবং এ কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ। মানুষের মধ্যে বিবেকবোধের পাশাপাশি দান করা হয়েছে কিতাব ও রাসূল যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেয়া হয়নি। সবাই আল্লাহর দেয়া নিয়মের অধীন। আল্লাহর সব সৃষ্টি ও আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকেই কেবল দান করেছেন। এসব সৃষ্টিকে কল্যাণ ও অকল্যাণ সব কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। যদি আল্লাহর নাফরমানি বা অকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে জমিনসহ অন্যান্য সৃষ্টি ও হাত-পা-জিহ্বা, চোখ-কান আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দেবে, কারণ আল্লাহই তাদেরকে সেই নির্দেশ দেবেন।
আল্লাহপাক তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন; যার কারণে মন্দ কাজে বিবেক তিরস্কার করে। বিবেক-বুদ্ধির পাশাপাশি দান করেছেন নবী ও রাসূল। আদম আ: প্রথম মানুষ হওয়ার সাথে সাথে ছিলেন একজন নবী। সব নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীরা ছিলেন মুসলিম। মুসলিম অর্থ অনুগত অর্থাৎ- যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলে তারা মুসলিম (অনুগত) এবং যারা অমান্য করে তারা কাফের (অমান্যকারী)। আমরা নিজেদের পরিচয় দেই ‘মুসলিম’ বলে অর্থাৎ- আমরা আল্লাহর অনুগত ও এই মুসলিম নামকরণ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। তাঁর বাণী, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহিমের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত হও। আল্লাহ তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বেও এবং এই কিতাবেও, যাতে করে এই রাসূল তোমাদের ওপর সাক্ষী হয় আর তোমরাও সাক্ষী হও মানব জাতির ওপর’ (সূরা হজ-৭৮)। হজরত ইবরাহিম আ: তাঁর পুত্র ইসমাইল আ:-কে সাথে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, “হে আমাদের প্রভু! আমাদের দু’জনকেই তোমার প্রতি ‘মুসলিম’ (অনুগত-আত্মসমর্পিত) বানাও, আর আমাদের বংশধরদের থেকেও তোমার প্রতি একটি ‘মুসলিম উম্মাহ’ (অনুগত জাতি) বানাও” (সূরা বাকারা-১২৮)। ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম সবাই ইবরাহিম আ:-এর বংশধর। কিন্তু আল্লাহপাক ইবরাহিম আ:-কে উপস্থাপন করেছেন এভাবে- ‘ইবরাহিম ইহুদিও ছিল না, নাসারাও (খ্রিষ্টান) ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না’ (সূরা আলে ইমরান-৬৭)। সর্বাবস্থায় নিজের পরিচয় এভাবে প্রদান করা হয়েছে, ‘বলো, আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং আমিই প্রথম মুসলিম’ (সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩)।
নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারী সবাই নিজেদের মুসলিম পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর ঈসা যখন তাদের থেকে কুফরি অনুভব করল, তখন তাদের বলল, আল্লাহর পথে কারা হবে আমার সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারিরা বলল, আমরা হবো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)’ (সূরা আলে ইমরান-৫২)। তিনি আরো বলেন, ‘ওই ব্যক্তির চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজে আমলে সালেহ করে আর বলে, নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম (আল্লাহর অনুগত)’ (সূরা হামিম আস সাজদাহ-৩৩)।
আল্লাহপাক সতর্ক করে দিয়েছেন, মুসলিম না হয়ে যেন তাঁর কাছে ফিরে না আসা হয়। তাঁর বাণী- ‘হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো ভয় করার মতো এবং মুসলিম না হয়ে মরো না’ (সূরা আলে ইমরান-১০২)। সাথে সাথে তাঁর অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। তাঁর বাণী- ‘যারা আমার আয়াতসমূহের ওপর ঈমান এনেছিলে এবং মুসলিম হয়েছিলে, সে দিন তাদের বলা হবে, হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো দুঃখও আজ তোমাদের স্পর্শ করবে না। তোমরা দাখিল হও জান্নাতে তোমাদের স্ত্রী-স্বামীকে নিয়ে আনন্দচিত্তে’ (সূরা আজ জুখরুফ : ৬৮-৭০)।
ঈমানদার জনগোষ্ঠীর একটিই প্রার্থনা- তাদের মৃত্যু যেন হয় মুসলিম অবস্থায়। জাদুকরদের ঈমান আনার পর ফেরাউন বলেছিল, আমি বিপরীত দিক থেকে তোমাদের হাত ও পা কেটে দেবো, সেই শাস্তি ঘোষণার পর জাদুকরদের দোয়া ছিল- ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের সবর করার শক্তি দাও এবং আমাদের মৃত্যু দান করো মুসলিম হিসেবে’ (সূরা আ’রাফ-১২৬)। ইউসুফ আ:-এর দোয়া ছিল- ‘এই পৃথিবীর জীবনে এবং আখিরাতে তুমিই আমার অভিভাবক! মুসলিম হিসেবে আমাকে মৃত্যু দান করো এবং আমাকে সাথি বানিয়ে দাও সালেহ লোকদের’ (সূরা ইউসুফ-১০১) মুসলিম হিসেবে নামকরণ, মুসলিম পরিচয় দান, মুসলিম না হয়ে মরার ক্ষেত্রে ভীতি প্রদর্শন, মুসলিম হিসেবে মৃত্যু কামনা করা, মুসলিমদের সুসংবাদ দান ইত্যাদি নানা বিষয়ে অসংখ্য আয়াতের মধ্য থেকে এখানে কুরআনের কিছু উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। মূলত আল্লাহপাক তাঁর নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের মুসলিম হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন এবং এটিই আমাদের পরিচয়। এ ছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই। আমাদের মধ্যে নানা ফেরকা ও বিভক্তি সবই শয়তানের চালবাজি। দুর্ভাগ্য, আজ আর আমরা মুসলিম পরিচয়ে গর্ববোধ করি না। আমরা এখন পরিচয় দেই- শিয়া-সুন্নি, আহলে কুরআন, আহলে হাদিস, হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি, হাম্বলি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, আরো কত কী? শুধুই কি তাই? মসজিদগুলো পর্যন্ত পৃথক করে ফেলেছি। আমরা একটু ভেবে দেখি, আমাদের এই বিভক্তি কী নিয়ে? ফরজ-ওয়াজিবে আমাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে। মুস্তাহাব আমলের মধ্যে পার্থক্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা:-এর আমলেই ছিল। উম্মাহর ঐক্যের ভিত্তি হলো সালাত। আল্লাহর বাণী- ‘তারা যদি তওবা করে, সালাত কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই’ (সূরা তওবা-১১)। কোনো ব্যক্তি তওবা করে এবং দু’টি মৌলিক ইবাদত সালাত ও জাকাত পালন করে তাহলে সে ইসলামী সমাজে অন্যান্য মুসলমানের মতো সামাজিক ও আইনগত সব অধিকার ভোগ করবে।
সালাতে সবচেয়ে বড় শিক্ষা হলো মুসলমানদের মধ্যে পরস্পর ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত মসজিদে এসে ইমামের পেছনে আদায়ের মাধ্যমে প্রমাণ করে যে, তাদের মধ্যে আছে শৃঙ্খলা, আনুগত্য ও ভ্রাতৃত্ব। সালাতে মুক্তাদির কোনো ভুল নেই, ভুল তখনই হবে যদি ইমামের আনুগত্যের ক্ষেত্রে কোনো ব্যত্যয় ঘটে। আবার ইমামেরও ভুল হতে পারে। সেই ভুলের সহনীয় মাত্রা কতখানি। ফরজে ভুল হলে সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে। ওয়াজিব ছুটে গেলে ইমাম সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে এবং সাহু সেজদার মাধ্যমে তা সংশোধন করতে হবে। এরপর সুন্নাত-মুস্তাহাবের ভুল এতটা ধর্তব্য নয়, অর্থাৎ- সালাত হয়ে যাবে। অথচ যত বিরোধ সেই সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে এবং তা সালাতিদের মধ্যেই। বেসালাতির কোনো ভুল নেই এবং তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাঁটিও নেই। যেসব আমল নিয়ে দলাদলি বা মতপার্থক্য করে সেগুলো পালনে বড়জোর সুন্নাতের সওয়াব পাবে; কিন্তু দলাদলি ও অনৈক্যের কারণে কুফরির গুনাহ হবে। ( অসমাপ্ত) লেখক : উপাধ্যক্ষ (অব:), কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com