গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় পুলিশ প্রতিটি গাড়ি ও যাত্রীদের তল্লাশি করছে। গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীতেও পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। উত্তরবঙ্গের সব যানবাহন কালিয়াকৈর হয়ে এবং ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জের যানবাহন শ্রীপুরের জৈনাবাজার দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে। চেকপোস্টে থাকা পুলিশ সদস্যরা সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল, পিকআপ, দূরপাল্লার বাস, ট্রাক গতিরোধ করে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করছে। যাত্রীদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগ, বস্তা, মোবাইল ফোন চেক করছে। এতে যাত্রী ও চালকরা অনেকেই অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম দেখা গেছে। রেলপথ ও সড়কপথে যাত্রী সংখ্যাও তুলনামূলক অনেক কম। রেল ও যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোতে দাঁড়ানো যাত্রী দেখা যায়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জৈনাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর অ লের যাত্রীবাহী বাসগুলো থামিয়ে বাসের ভেতর ও পরিবহন চালকদের কাগজপত্র তল্লাশি করছে। বিশেষ করে ঢাকামুখী পরিবহনে এসব তল্লাশি চালাতে দেখা গেছে।
আলম এশিয়া পরিবহনের চালক আবু সাঈদ বলেন, তল্লাশি থেকে কোনও যাত্রীবাহী পরিবহন বাদ পড়ছে না। একই পরিবহনের যাত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, তল্লাশি করে পুলিশ গাড়িতে কিছু পায়নি। কিন্তু আমাদের আধা ঘণ্টার মতো সময় নষ্ট হচ্ছে।
কালিয়াকৈর থানার এসআই আজিম হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও নাশকতামূলক কর্মকা- যেন না ঘটে, সে জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। চেকপোস্টের মাধ্যমে কাউকে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
আব্দুল্লাহ সাখাওয়াত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি মোটরসাইকেলযোগে উত্তরা যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, যেভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে আজ আমার কাছে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে ঢাকা অভিমুখে যেতে পারতাম না।
টঙ্গী ব্রিজের উত্তর পাশে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানা পুলিশ তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা যাত্রীবাহী পরিবহন ছাড়াও ট্রাক, পিকাপভ্যান, মোটরসাইকেল আটকে চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করছে। বুধবার থেকেই ঢাকামুখী সন্দেহভাজন যানবাহন তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
বিনিময় পরিবহনের চালক আবুল আরীম বলেন, ঢাকায় যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর ও কালিয়াকৈর চন্দ্রায় পুলিশের চেকপোস্ট চোখে পড়েছে। তারা আমাদের যাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ঢাকায় ১০ তারিখের বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করেই এ তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে ধারণা। যাত্রীদের অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না। যে যার মতো জরুরি কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে পুলিশ তাদের গাড়ি থামিয়ে দেহ তল্লাশিসহ মোবাইল ফোনের ব্যক্তিগত তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ, ছবি ঘাটাঘাটি করে দেখছে। তবে তল্লাশির তালিকায় বেশি রয়েছে মোটরসাইকেল। ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার মানুষের চলাচলের সহজ পথ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। ফলে ঢাকায় প্রবেশ করতে হলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার হয়ে টঙ্গীর তল্লাশি চৌকিটি পার না হওয়ার সুযোগ নেই।
টঙ্গী পূর্ব থানার এসআই মিলন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা দায়িত্ব পালন করছি। এখানে কাউকে কোনও হয়রানি করা হয়নি। কেউ যেন নাশকতা তৈরি করতে না পারে বা আইনশৃঙ্খলার অবনতি না ঘটাতে না পারে সেজন্য তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গাজীপুর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহমেদ সরকার জানান, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে গাড়িতে এখন সাধারণ মানুষ (যাত্রী) কমে গেছে। তাদের মধ্যে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুলিশ যাত্রী ছাড়াও চালক/গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষা/নিরীক্ষা করছে। তবে কোথাও কাউকে হয়রানির তথ্য পাওয়া যায়নি। গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম জানান, ১ ডিসেম্বর থেকেই আমাদের বিশেষ অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় মহাসড়কে গাড়িতে তল্লাশি চলছে। প্রতি থানার আওতায় দুটি করে চেকপোস্টে এ অভিযান চলছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) আলমগীর হোসেন বলেন, বিভিন্ন স্থানে পুলিশের চেকপোস্ট স্থাপন করলেও কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্লা নজরুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় যেহেতু ১০ লাখ লোকের সমাগম করার কথা শোনা যাচ্ছে সেহেতু গমনকারীদের সঙ্গে অবৈধ কিছু রয়েছে কি না তা দেখা হচ্ছে। এতগুলো লোকের সমাগম হলে দেশের অনেক জেলার লোকজন গাজীপুরের ওপর দিয়েই রাজধানীতে প্রবেশ করবে। সেজন্য অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ তৎপর রয়েছে। আর এ তৎপরতার জন্যই তল্লাশি চালানো হচ্ছে।