ইউরোপে এরই মধ্যে চলে এসেছে শীত। ইউরোপের সরকারগুলো হাউজহোল্ড ও ব্যবসাকে সহায়তা করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে। বিশেষ করে যারা জ্বালানি বিল পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে। অ লটিতে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সেখানে দুই বছর আগের তুলনায় গ্যাসের দাম বেড়েছে ১৭৭ শতাংশ ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ৯৪ শতাংশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর সরবরাহ ইস্যুকে কেন্দ্র করেই মূলত সংকটে পড়ে ইউরোপ। সরকারগুলো মনে করছে ভর্তুকি দিলে শুধু ব্যবসাই বেঁচে থাকবে না বরং নাগরিকরাও স্বস্তিতে থাকবে। বেঁচে থাকবে নাগরিকদের জীবন।
ধারণা করা হচ্ছে, শুরু হওয়া শীত ইউরোপের জন্য মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। কারণ এতে বেড়ে যাবে হার্ট অ্যাটাক, স্টোক ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ। ইকোনমিস্টের মডেল অনুযায়ী, জ্বালানি মূল্যের কারণে শীতকালীন মৃত্যু অনেক বেড়ে যেতে পারে। কারণ মানুষকে জ্বালানি ব্যবহার থেকে বিরত রাখা হতে পারে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে সরকারগুলোর পরিকল্পিত সহায়তায় কত মানুষের জীবন বাঁচানো সম্ভব।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে জ্বালানির দাম ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। তখন একদিকে করোনার বিধিনিষেধ শিথিল করা হয় অন্যদিকে বেড়ে যায় অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জ্বালানির দাম আও বেড়ে যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো নাগরিক ও ব্যবসায় সহায়তা করতে এরই মধ্যে ৬০০ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করছে জার্মানি। দেশটি মূলত গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। জার্মান সরকার ২৬০ বিলিয়ন ইউরো খরচের ঘোষণা দিয়েছে, যা ইউরোপের এক-তৃতীয়াংশ। তাছাড়া এই অর্থ দেশটির জিডিপির সাত শতাংশ। সুইডেন ও ফিনল্যান্ড যথাক্রমে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ও ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো ব্যয় করবে। যা যথাক্রমে দেশ দুইটির জিডিপির শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ ও শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। ইউরোপের সব দেশের সহায়তা পদ্ধতি এক রকম নয়। তবে অধিকাংশ দেশই সবার জন্য জন্য মূল্য কমিয়েছে। তিনটি ছাড়া বাকি সবাই জ্বালানির ওপর কর বা ভ্যাট কমিয়েছে। অধিকাংশ দেশই ভোক্তাদের জন্য মূল্যসীমা নির্ধারণ করছে।
তবে সরকারগুলোর নানা পদক্ষেপের পরও চলতি বছর মূল্য ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের চেয়ে বেশি রয়েছে। ইকোনমিস্ট জ্বালানির মূল্য ও মৃত্যুর মধ্যে সম্পর্ক নির্ধারণে একটি মডেল ব্যবহার করেছে। মনে করা হচ্ছে, যে সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে ১৯ দেশের আবাসিকে জ্বালানি খরচ গড়ে ২২ শতাংশ কমাবে। এতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের এপ্রিল সময়কালে ব্যয় হবে ১৪০ বিলিয়ন ইউরো। ফলে একই সময়ে প্রায় ৭৫ হাজার জীবন বাঁচবে। দেখা যাচ্ছে, প্রতিটি জীবন রক্ষায় খরচ পড়ছে ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন ইউরো। তবে এই সুবিধা যে শুধু জীবন রক্ষা করবে তা নয়। একদিকে অনেক মানুষ উষ্ণ থাকবে অন্যদিকে অন্যান্যখাতে তারা ব্যয় করতে পারবে। ব্রুগেল নামের একটি অর্থনৈতিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক দ্বারা সংগৃহীত তথ্যে দেখা গেছে, ইউরোপের ২৯টি দেশের মধ্যে দুইটি ছাড়া সবাই নিম্ন আয়ের মানুষকে নগদ অর্থ দিয়েছে। গবেষণা দেখা গেছে, এই পদক্ষেপেও অনেকের জীবন বেঁচে যাবে, বয়স্কদের স্বাস্থ্যে উন্নতি হবে। কারণ তারা তাদের ঘর উষ্ণ রাখতে সক্ষম হবে।