শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

দেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া: অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল স্থগিত

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছে। অ্যাস্ট্রেজেনেকা এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে করোভাইরাসের এই সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি এই ভ্যাকসিন গ্রহণকারী এক স্বেচ্ছাসেবী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে ভ্যাকসিনে ট্রায়াল স্থগিত রেখেছে। যুক্তরাজ্যে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন গ্রহণকারী এক স্বেচ্ছাসেবীর দেহে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এই ঘটনাকে ব্যাখ্যাযোগ্য নয় এমন অসুস্থতা হিসেবে উল্লেখ করে রুটিনমাফিক ভ্যাকসিনের ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যাস্ট্রেজেনেকা। পুরো বিশ্বেই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। প্রথম থেকেই এই ভ্যাকসিনকে সবচেয়ে নিরাপদ বলে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এমনকি এখন পর্যন্ত করোনার যতগুলো সম্ভাব্য ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে সবগুলোর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে এগিয়ে আছে অক্সফোর্ড। আশা করা হচ্ছিল যে প্রথম এবং দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষে তৃতীয় ধাপও সফলভাবে পার করে বাজারে আসবে করোনার এই ভ্যাকসিন। কয়েক সপ্তাহ আগেই তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শুরু করে অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকার প্রায় ৪২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী এতে অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে এটি পুশ করবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। এদিকে ব্রাজিলেও ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন করা হয়েছে। গত ২ জুন দেশের দুই হাজার স্বেচ্ছাসেবীর দেহে অক্সফোর্ডের তৈরি করোনার এই ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের অনুমোদন দেয় ব্রাজিল সরকার। স্বেচ্ছাসেবী নির্বাচন করার কাজও শেষ হয়েছে সেখানে।
তবে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, আন্তর্জাতিকভাবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের যে ট্রায়াল চলছিল তার সবগুলোই আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনা করা হচ্ছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, বিশাল পরিসরে ট্রায়ালের ক্ষেত্রে অনেক সময় ভ্যাকসিন গ্রহণকারী অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তবে নিরাপদভাবে এটি যাচাই করে দেখতে হবে। তবে এটিই প্রথম নয়। এর আগেও একবার অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল স্থগিত করা হয়েছিল। বড় পরিসরে ভ্যাকসিনের পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ ঘটনা খুব সাধারণ। যে কোনো সময় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক সময় ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর দেহে তীব্র প্রতিক্রিয়ার কারণে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।
ধারণা করা হচ্ছে যে, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো ভ্যাকসিনের ট্রায়াল আবারও শুরু করা সম্ভব হবে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১৮০টি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চলছে। তবে এদের মধ্যে কোনটিরই এখনও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ হয়নি। এর আগে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নিরাপদ এবং করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক বলে ঘোষণা দেয়া হয়।
প্রথম ধাপে ১ হাজার ৭৭ জনের শরীরে ভ্যাকসিনটি পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, এই ভ্যাকসিনটি যাদের প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং শ্বেত রক্তকণিকা (হোয়াইট ব্লাড সেল) তৈরি করে; যা শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। অক্সফোর্ড বিজ্ঞানীদের এই ভ্যাকসিনকে বড় ধরনের প্রতিশ্রুতিশীল উদ্ভাবন হিসেবে মনে করা হয়। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে, চলতি বছরের শেষ দিকে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতার ব্যাপারে তারা চূড়ান্ত তথ্য-উপাত্ত পাবেন বলে আশা করছেন। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাজনিত কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিকে ‘দ্বৈত প্রতিরক্ষা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। চ্যাডক্স১ এনকোভ-১৯ নামের এই ভ্যাকসিনটি নজিরবিহীন গতিতে তৈরি করেছেন অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা। নভেল করোনাভাইরাসের দুর্বল প্রজাতির একটি অংশ (যা মূলত সাধারণ সর্দিকাশির দুর্বল ভাইরাস বা অ্যাডেনোভাইরাস হিসেবে পরিচিত) ও জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এই ভ্যাকসিন। ভাইরাসের দুর্বল সংস্করণটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। অক্সফোর্ডের গবেষকরা ভাইরাসটির জেনেটিক পরিবর্তন ঘটিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন।
আরো জানা যায়,‘অজ্ঞাত অসুস্থতা’ দেখা দেয়ায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির করোনা টিকার পরীক্ষা অস্থায়ী ভিত্তিতে স্থগিত রাখা হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে একজন রোগির শরীরে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের টিকার কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা জানার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। বার্তা সংস্থা এপি/ওয়ান নিউজকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে নিউজিল্যান্ডের টেলিভিশন চ্যানেল টিভিএনজেড অনলাইন। এতে বলা হয়, এই টিকা আবিষ্কারক কোম্পানি এস্ট্রাজেনেকা একটি বিবৃতিতে বলেছে, নিরাপত্তা ডাটা পর্যালোচনার জন্য এই টিকার পরীক্ষা আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। এই টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে এমন একজনের শরীরে অসুস্থতা দেখা দিয়েছে। একে ‘বড় ধরনের অজ্ঞাত অসুস্থতা’ (পোটেনশিয়াল আনএক্সপ্লেইন্ড ইলনেস) আখ্যায়িত করা ছাড়া এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। এটা এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কিনা সে বিষয়েও কিছু বলেনি তারা।
ফলে টিকার পরীক্ষা স্থগিত রাখার বিষয়ে প্রথম রিপোর্ট করে সংবাদ ভিত্তিক সাইট এসটিএটি। এতে বলা হয়, এই টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বৃটেনে।
উল্লেখ্য, অক্সফোর্ড ইউনির্ভার্সিটির আবিষ্কার করা এই টিকার ওপর এখন পর্যন্ত বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষের আস্থা রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের অণুজীববিজ্ঞানী ড. সোক্সসি উইলস জুলাইয়ে বলেছিলেন, বিশ্বে করোনা ভাইরাসের যত টিকার পরীক্ষা চলছে তার মধ্যে সবচেয়ে প্রতিশ্রুতিশীল টিকা হলো অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির আবিস্কার করা টিকা। এ বিষয়ে তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে এই টিকার প্রয়োগ স্থগিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এস্ট্রাজেনেকার একজন মুখপাত্র। যুক্তরাষ্ট্রে এই টিকা পরীক্ষার জন্য গত মাসে ৩০ হাজার মানুষকে রিক্রুট করা শুরু করে এস্ট্রাজেনেকা। এ ছাড়া বৃটেনে হাজার হাজার মানুষের ওপর, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় কম সংখ্যক মানুষের ওপর এই টিকার পরীক্ষা করা হচ্ছে।
এর বাইরে আরো দুটি টিকার পরীক্ষা চলছে যুক্তরাষ্ট্রে চূড়ান্ত পর্যায়ের। এর একটি তৈরি করেছে মডার্না। অন্যটি তৈরি করেছে ফাইজার এবং জার্মানির বায়োএনটেক। এস্ট্রাজেনেকার টিকার চেয়ে ভিন্নভাবে কাজ করছে এই দুটি টিকা। তারা এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবকের তিন ভাগের দুই ভাগ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে।
টিভিএনজেড তার রিপোর্টে বলেছে, অস্থায়ীভিত্তিতে পরীক্ষা স্থগিত রাখা কোনো মেডিকেল পর্যবেক্ষণে অস্বাভাবিক বিষয় নয়। বরং নিরাপত্তার প্রয়োজনে যেকোনো অজানা প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অনুসন্ধান করাটাই বাধ্যতামুলক। এস্ট্রাজেনেকা মনে করছে, যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা কাকতালীয় হতে পারে। হাজার হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হচ্ছে এই টিকা। সেখানে যেকোনো রকম অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। তবু কোম্পানি তার বিবৃতিতে বলেছে, পরীক্ষা চলাকালীন কোনো রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তা সর্বনিম্ন হলেও তা পর্যালোচনার কাজ করবো আমরা।

করোনায় দেশে আরো ৪১ মৃত্যু, শনাক্ত ১৮২৭

প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫৯৩ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এক হাজার ৮২৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে করোনা শনাক্ত হলো মোট ৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৮ জনের। গতকাল বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সংস্থার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৯৯৫ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৮০৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় আগের নমুনাসহ পরীক্ষা করা হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫৫টি নমুনা। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১৬ লাখ ৭৪ হাজার ৪৫২টি নমুনা। বিভিন্ন বিভাগে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, রাজশাহীতে ৫ জন, খুলনায় ৪ জন, বরিশালে ১ জন, সিলেট ২ জন, ময়মনসিংহে ১ এবং রংপুরে ৫। এর মধ্যে পুরুষ ২৯ জন, নারী ১২ জন। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৯.৭৭ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৬৯.৭১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৩৯ শতাংশ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com