তীব্র শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও জনজীবনে শীতের অনুভূতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি আছে ব্যাপক কুয়াশার দাপট। দেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। রোববার সাত জেলা ও দুটি বিভাগে এ পরিস্থিতি বিরাজ করে। আবহাওয়া বিভাগ (বিএমডি) জানিয়েছে, শৈত্যপ্রবাহের ব্যাপ্তি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। আগামী দু-এক দিনে শীতের ব্যাপ্তি আরও কমবে।
সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম তাপমাত্রার মধ্যকার কম পার্থক্য এবং বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে শৈত্যপ্রবাহ আগের মতো না থাকলেও শীতের অনুভূতিটা অনেক বেশি। সব মিলিয়ে শীতে একটা জবুথবু অবস্থা। এ কারণে রোগ-বালাই বেড়েছে। শীতজনিত নানা রোগে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর ঘটনা অব্যাহত আছে। রোববার শীতে দু’জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। শীত নিবারণ করতে গিয়ে একজন আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। তিনি হলেন কুড়িগ্রাম শহরের কৃষ্ণপুর ডাকুয়াপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী (৬৬)। অপরজন বগুড়ার শেরপুরের খামারকান্দি পূর্বপাড়ার মোজাম ফকি (৭০)। সরকারি হিসাবে ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৭৫ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের (বিএমডি) এক কর্মকর্তা বলেন, প্রায় সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা নিন্মমুখী। তবে সর্বোচ্চ ও সর্বনিন্ম তাপমাত্রার পার্থক্য কমে এসেছে। সাধারণত পার্থক্য যত কম থাকবে, শীতের অনুভূতি তত বেশি থাকবে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা এর নিচে নামলে শীতের অনুভূতি বাড়বে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত বয়স, বাতাসের গতি, কুয়াশার প্রকোপ, সূর্যের কিরণকাল ইত্যাদির ওপর শীতের অনুভূতি নির্ভর করে। বাতাসের গতি কম থাকলেও শীতের অনুভূতি ও প্রকোপ বেশি মনে হয়। বর্তমানে প্রকৃতিতে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বয়স বেশি হলে শীতের অনুভূতি বেশি হয়। এদিকে, শীত কমে যাওয়ার পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব ঘটেছে শীতজনিত নানা রোগের। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।
দিনাজপুরে বাড়ছে শীত, ডিসেম্বরের শেষে শৈত্যপ্রবাহের শঙ্কা: দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রভাব অনেকটা বেশি। পাশাপাশি শীতের আাগমন ঘটে একটু আগেই। তার ব্যতিক্রম হয়নি দিনাজপুরেও। গত কয়েক দিনে দিনাজপুরে তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে বাড়ছে শীত। খুব সকাল পর্যন্ত বেশ কুয়াশা দেখা দিচ্ছে।
মহাসড়কগুলোতে সেই সময় হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে রয়েছেন নিম্ন আয়ের ছিন্নমূল খেটে খাওয়া মানুষ। তারা চেয়ে আছেন সরকারি-বেসরকারি সহায়তার দিকে। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, দিনাজপুরে গত কয়েক দিনে ১২ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ওঠা নামা করছে। পাশাপাশি কিছুটা থাকছে হিমেল বাতাস।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসুদুজ্জামান জানান,গত বৃহস্পতিবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সকালে বাতাসের আদ্রতা ছিল ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত। চলতি মাসের শেষার্ধে একটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ রয়েছে। সেই সময় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে আসতে পারে বলেও জানান তিনি।
নওগাঁর মহাদেবপুরে হঠাৎ করে বেড়েছে ঘন কুয়াশা আর শীত। গত কয়েক দিন ধরেই সন্ধ্যা রাত থেকে সকাল পর্যন্ত চলছে শীতের আভাস। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা। যার কারণে শৈত্য প্রবাহ অনেক বেড়েছে। উত্তরাঞ্চলে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হতে পারে বলে ধারণা করেছে বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক হামিদুল ইসলাম।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকালের রাস্তাঘাট একেবারে জনশূন্য। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। অতিরিক্ত সতর্কতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে গণপরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে রেখে চলাচল করছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হঠাৎ করে এই কুয়াশা ও শীতের কারণে ঠান্ডাজনিত কারণে সর্দি কাশি জ্বরসহ বিভিন্ন রোগ বাড়ার সম্ভবনাও রয়েছে।উপজেলার দক্ষিণ হোসেনপুর গ্রামের মো: আমজাদ হোসেন, কলনী পাড়ার আবুল কালাম ও চৌমাশিয়া মোড়ের মোজাম্মেল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে হালকা শীত ছিল। হঠাৎ শীত বেড়েছে সেই সাথে কুয়াশা পড়েছে। তবে গতকাল থেকে অল্প অল্প কুয়াশা পড়া শুরু হয়েছে। আজ আরো বেশি পড়ছে। সে কারণে যেন শীত আরো বেড়েছে।
বদলগাছী আবহাওয়া অফিসের উচ্চমান পর্যবেক্ষক হামিদুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল ৬টায় নওগাঁর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও বাতাসের আদ্রতা শতভাগ। গতকাল নওগাঁর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।