শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন

ব্রির গবেষণা: কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০২৩

দেশে এখন বোরো মৌসুমে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৫০০ টাকা। আমন মৌসুমে তা ৪৪০ টাকা। আমন ও বোরো মৌসুমের কৃষি মজুরিকে সমন্বয় করে কৃষি শ্রমিকের দৈনিক গড় মজুরি ৪৭০ টাকা হিসাব করেছেন ব্রির গবেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, দেশে বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করে মূলত কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের পর। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি আরো গতিশীল ওঠে। মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে দেশের বাজারে মোটা চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৬৭ শতাংশ। গোটা এশিয়ায় চালের মূল্যবৃদ্ধির হার এখন বাংলাদেশেই সর্বোচ্চ। প্রধান খাদ্যশস্যটির দামের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এখন মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাসে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে।
ব্রির বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ সময় কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সামনের দিনগুলোয় চালের চাহিদা আরো বাড়বে। এজন্য সব সংস্থা, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। একদিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে কৃষিজমি কমছে। ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। এ জটিল পরিস্থিতিতে চাল উৎপাদন বাড়াতে হলে গবেষণায় আরো জোর দিতে হবে। একই সঙ্গে উদ্ভাবিত জাত দ্রুত সম্প্রসারণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, চালকল মালিকেরা ও খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন। চালকল মালিকেরা কেজিতে ৮-১৪ টাকা লাভ করছেন। কৃষকের উৎপাদন খরচও কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া করপোরেট গ্রুপগুলো চালের বাজারে প্রবেশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
গবেষণায় আরো দেখা যায়, করোনার পর থেকে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে মোটা চাল খাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে ২০১৯ সালে মোটা চাল খাওয়ার হার ছিল ৮২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৯২ শতাংশে। আর মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে এ সময়ে মোটা চাল খাওয়ার হার ৩৫ থেকে ৪৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে গবেষক দলের প্রধান ও ব্রির জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘দিন দিন কৃষি মজুরির বিপরীতে শ্রমিকদের দৈনিক চাল কেনার সক্ষমতা কমছে। এর কারণ হলো গত কয়েক বছরে দেশে চালের পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামও অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে এ দরবৃদ্ধির হার ছিল অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। এজন্য কৃষি শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণগুলো খুঁজে বের করা।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক বলেন, চালের দাম কমানো যাবে না। চালের দাম কমাতে গেলে কৃষকরা চাষাবাদে নিরুৎসাহিত হবেন। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার পরেও ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা উৎপাদন করছেন। ফলনও ভালো হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৃষকদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিতে হবে। কীভাবে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। কৃষকদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, পরিবারের স্বাস্থ্যসেবার খরচ ও সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দিতে হবে। মজুরি বাড়াতে গেলেও আবার উৎপাদন খরচ বেড় যাবে। বাজারে অন্যান্য যে খাদ্যদ্রব্য আছে সেগুলো কৃষকদের কাছে কীভাবে সহজলভ্য করা যায় সে চিন্তা করতে হবে।
কভিড প্রাদুর্ভাবের আগেও দেশের কৃষি শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির বিপরীতে ক্রয়ক্ষমতা ছিল বাড়তির দিকে। কিন্তু মহামারী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে ক্রমেই ক্রয়ক্ষমতা কমছে মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের। ২০১৯ সালেও একজন কৃষি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি দিয়ে দৈনিক ১৩ দশমিক ৪ কেজি চাল কেনা যেত। বর্তমানে সে সক্ষমতা নেমে এসেছে সাড়ে আট কেজিতে। এ অনুযায়ী গত চার বছরে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে ৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও ইন্টারন্যাশনাল রাইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (ইরি) যৌথ এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘অ্যান অ্যাসেসমেন্ট অব রাইস প্রাইস হাইক ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কৃষি মজুরির বিপরীতে শ্রমিকদের ক্রয়ক্ষমতা এখন ২০১৫ সালের পর সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। ২০১৫ সালে একজন শ্রমিক তার মজুরি দিয়ে দৈনিক ১০ দশমিক ১ কেজি চাল কিনতে পারতেন। এরপর ২০১৬ সালে কৃষি শ্রমিকের গড় সক্ষমতা ছিল ১০ দশমিক ৬ কেজি। ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৪ কেজিতে। কিন্তু এর পর থেকেই মজুরিভিত্তিক কৃষি শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। তা ২০২০ সালে ৯ দশমিক ১ কেজি, ২০২১ সালে ৮ দশমিক ৬ ও ২০২২ সালে ৮ দশমিক ৫ কেজিতে নেমে আসে। দেশে খানাপ্রতি খরচের বড় একটি অংশই ব্যয় হয় চাল কেনায়। ব্রির আগের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, দেশে খানাপ্রতি বার্ষিক ব্যয়ের প্রায় ৩৪ শতাংশ যায় খাদ্যে। এ খাদ্য ব্যয়ের ৪১ শতাংশের বেশি খরচ হয় চাল কেনায়। চালের বাজারদর ক্রয়ক্ষমতার অবনমনে বড় ধরনের ভূমিকা রাখে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com