বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব আলিবর্দি খানকে দিল্লির সম্রাট প্রদত্ত দুটি খেতাবের একটি সুজা উল-মুলক ও হাসেম উদ-দৌলা। একটির মানে রাষ্ট্রের বীর, অন্যটি রাষ্ট্রের তরবারি।
ভারতের কেন্দ্রীয় শাসন যখন ভেঙে পড়ছিল, ঔপনিবেশিকীকরণের প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়েছিল, ক্ষমতার দ্বন্দ্বে হত্যাকা- যখন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আলিবর্দি খান ১৬ বছর প্রচ- প্রতিরোধের মুখে বাংলার কল্যাণমুখী একটি শাসন ব্যবস্থা চালু রেখেছেন; বর্গি লুণ্ঠন থেকে বাংলাকে রক্ষা করেছেন। ‘মুর্শিদাবাদ কাহিনি’ গ্রন্থের লেখক নিখিলনাথ রায় লিখেছেন: ‘আলিবর্দিকে মুর্শিদাবাদ বা বাংলার আকবর বলিয়া নির্দেশ করা যাইতে পারে। মুর্শিদাবাদের নবাবদিগের মধ্যে হিন্দু ও মুসলমানের প্রতি সম্প্রীতি জমাইয়া, মহাবিপদের মধ্যেও শান্তভাবে প্রজাপালন করিতে তাঁহার ন্যায় আর কেহই সমর্থ হন নাই। তাহার প্রভু ও পূর্ববর্তী নবাব সুজাউদ্দিন এই হিন্দু মুসলমানের প্রতি সম্প্রীতির সূচনা করিয়া যান এবং আলিবর্দি খাঁ তাহা সম্পূর্ণরূপে কার্যে পরিণত করেন।’বর্গি দমন প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন: ‘নবাব আলিবর্দি খাঁর ন্যায় রাজনীতিবিদ পুরুষ বাঙ্গলার সিংহাসনে অতি অল্পই উপবেশন করিয়াছেন বলিয়া মনে হয়। দুর্দান্ত মহারাষ্ট্রীয়দিগকে দমন করিয়া সঙ্গে সঙ্গে বাঙ্গলারাজ্যের প্রজাদিগকে শান্তির হিল্লোলে ভাসাইয়া তিনি রাজনীতির চূড়ান্ত পরিচয় দিয়াছেন।’
চার্লস স্টুয়ার্টের বর্ণনায় আলিবর্দি খানের মহানুভবতা অতুলনীয়, তিনি যখন নিতান্ত সাধারণ মানুষ ছিলেন তখন যারা তাকে এতটুকু সহায়তাও করেছেন তিনি অনেক বৃহদাকারে তাদের ঋণ শোধ করেছেন। তার শাসনকালে মানুষ নাগরিকের প্রকৃত সন্তুষ্টি লাভ করে। তিনি জ্ঞানী ছিলেন এবং জ্ঞানীর মর্যাদা দিতে জানতেন। তিনি এতটা দূরদর্শী ছিলেন যে তিনি তার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন: তার মৃত্যুর পর ইউরোপীয়রাই হিন্দুস্থানের অধিকাংশ জায়গার মালিকানা নিয়ে নেবে। আলিবর্দি খানও তার প্রকৃত নাম নয়। তার নাম মীর্যা মুহাম্মদ আলী, কিন্তু মীর্যা বন্দি নামেই তার অধিক পরিচিতি। তার পিতামহ ভাগ্যান্বেষণে আরব থেকে ভারতে এসেছিলেন এবং নিজ যোগ্যতায় সম্রাট আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে মনসবদার হয়েছিলেন। তার বাবা মীর্যা মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব পুত্র আযম শাহের স্বল্প বেতনের খেদমতগার, তার মা খোরাসানের আফগান তুর্কি বংশোদ্ভূত নারী। জাজুয়ার যুদ্ধে আযম শাহ নিহত হলে তিনি চাকরিহারা হয়ে পড়েন। ভাগ্যান্বেষণে তার দুই পুত্র বাংলায় এলেও প্রথম নবাব মুর্শিদ কুলি খানের দরবারে আলিবর্দি সমাদৃত হননি। কিন্তু তিনি মহানন্দা নদীর তীরে উড়িষ্যার কটক শহরে গিয়ে আশাতীত সমাদর পেলেন। সেখানকার শাসক সুজাউদ্দিন মুহাম্মদ খান তাকে ১০০ টাকা বেতনে মর্যাদপূর্ণ চাকরি প্রদান করেন। কিন্তু তার নিষ্ঠা, একাগ্রতা, দক্ষতা, বিশ্বস্ততা ও বিদ্রোহী জমিদার দমনে সফলতা তাকে সুজাউদ্দিনের আরো কাছে এনে দেয়।
তিনিও ঋণ শোধের অভিপ্রায়েই পুত্রহীন নবাব মুর্শিদ কুলি খানের মৃত্যুর পর তার কন্যার স্বামী সুজাউদ্দিনকে নবাবের স্থলাভিষিক্ত করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। সন্তুষ্ট নবাব তাকে রাজমহলের ফৌজদার নিয়োগ করেন এবং আলিবর্দি খেতাব দেন।
১৭৩২ সালে কেন্দ্রীয় দিল্লি প্রশাসন বিহারকে বাংলার সাথে সংযুক্ত করলে নবাব সুজাউদ্দিন আলিবর্দি খানকে বিহার শাসনের দায়িত্ব দেন। ১৭৩৯ সালে নবাব সুজাউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র সরফরাজ খান নবাব হলে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত ছিলেন তাদের মধ্যে আলিবর্দি ও তার ভাই হাজি আহমদও ছিলেন। পর্যায়ক্রমে সব প্রতিদ্বন্দ্বী সরিয়ে ১৭৪০ এপ্রিল গিরিয়ার যুদ্ধে সরফরাজকে পরাজিত করেন। যুদ্ধে নবাব সরফরাজ নিহত হন। তার পরই আলিবর্দি খান বাংলার মসনদে আরোহণ করেন।
নবাবী আমল: বাংলার নবাবী আমলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক আলিবর্দি খান। বাংলার নবাব কিংবা মুর্শিদাবাদের নবাব বলা হলেও কার্যত তা বাংলা বিহার ও উড়িষ্যার নবাব। দিল্লির সার্বক্ষণিক শাসনের বাইরে অনেকটাই স্বাধীন সত্তা নিয়ে মুর্শিদ কুলি খান ১৭১৭ থেকে বাংলার শাসনকাল পরিচালনা করতে শুরু করেন। নায়েবে নিজাম, সুবাদার ইত্যাদি নামে সরকারপ্রধান অভিহিত হলেও পদটি তখনো নবাব ছিল না। তবুও সিংহাসনে আসীন ব্যক্তি নবাব হিসেবেই পরিচিত ছিলেন, দিল্লির সাথে সম্পাদিত ব্যবস্থা অনুযায়ী এটি ছিল ‘হেরিডিটরি’ আয়োজন, নবাবের উত্তরাধিকারীই নবাবের পর ক্ষমতাসীন হবেন। কে উত্তরাধিকারী হবেন নবাব নিজে তা ঠিক করে দিয়ে যাবেন। মুর্শিদ কুলি খান বাংলার দিওয়ান থাকাকালে আওরঙ্গজেবের পৌত্র বাংলার সুবাহদার শাহজাদা আজিম-উস-সানের সঙ্গে সম্পর্কের এতটাই অবনতি ঘটে যে ১৭০২ সালে তিনি তার দপ্তর ঢাকা থেকে বর্তমান মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। তার নামানুসারেই এই স্থান মুর্শিদাবাদে পরিণত হয় এবং বাংলার রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে। কার্যত মুর্শিদ কুলি খানের সময় থেকে (১৭১৭) থেকে নবাব সিরাজদ্দৌলার সময়েই (১৭৫৭) নবাবী আমল বলা হয়। রমেশচন্দ্র মজুমদার মনে করেন, মীর কাশিমের কাল সমাপ্তি অর্থাৎ ১৭৬৫ পর্যন্ত নবাবী আমল বিস্মৃত। সিরাজুল ইসলাম লিখেছেন: মুর্শিদ কুলি খান থেকে শুরু করে সিরাজদ্দৌলার সময় পর্যন্ত নওয়াবি যুগ, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে কেউই নবাব খেতাব গ্রহণ করেননি। ১. মুর্শিদ কুলি খান ১৭১৭-২৮ ২. সরফরাজ খান ১৭২৭-২৭ ৩. সুজাউদ্দিন মুহাম্মদ খান ১৭২৭-২৯ ৪. সরফারাজ খান ১৭২৯-৪০ ৫. আলিবর্দি খান ১৭৪০-৫৬
৬. সিরাজদ্দৌলা ১৭৫৬-৫৭ ৭. মীর জাফর আলী খান ১৭৫৭-৬০ ৮. মীর কাশিম ১৭৬০-৬৩ ৯. মীর জাফর আলী খান ১৭৬৩-৬৫
মুর্শিদ কুলি খানের হাতে নবাবীর শক্ত গোড়াপত্তন হয়। আলিবর্দি খানের ১৬ বছর শাসনকালে ১১ বছরই যুদ্ধ ব্যবস্থাপনায় কেটেছে, তিনি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যাকে সংহত করতে পেরেছেন। এর পরবর্তী অংশ ষড়যন্ত্র, দুর্ভাগ্য ও শঠতায় পরিপূর্ণ। ১৭৫৭-তে সিরাজদ্দৌলার পতন একই সাথে বাংলা ও ভারতের পতন নির্ধারণ করে। পরবর্তী ১৯০ বছর কার্যত পরাধীনতার।
আলিবর্দির বেগম: নিখিলনাথ রায় এই শিরোনামের একটি পূর্ণাঙ্গ রচনা লিখেছেন। নবাবের বিদুষী স্ত্রী শরফ্-উন-নিসাকে নিয়ে লেখা এই অনুচ্ছেদটি মূলত নিখিলরায়ের রচনা অনুকরণে অথবা রচনা থেকে উদ্ধৃত।
“কর্মবীর আলিবর্দি খান রাজনীতিক জীবনে তাহার প্রিয়তম মহিয়সী সহায়তার পূর্ণতা লাভ করিয়াছিল বলিয়া কথিত আছে। আলিবর্দির উশৃঙ্খল সংসার যেমন এই মহিয়সী মহিলার তর্জনীতাড়নের অধীনে ছিল, সেইরূপ বিপ্লবসাগএর নিমগ্ন সমগ্র বঙ্গরাজ্যের শাসন ও তারই পরামর্শনুসারে চালিত হত। জ্ঞান, উদারতা, পরহিতেচ্ছা ও অজান্য সদগুণে তিনি রমনীজাতির মধ্যে অতুলনীয় ছিলেন।… তাহার জ্ঞান ও দূরদর্শিতা এত দূর বিস্তৃত ছিল যে নবাব সর্বদা বলিতেন যে বেগমের সিদ্ধান্ত ও ভবিষ্যত্বাদী কদাচ অন্যথা হইবার নহে।’
তিনি মুর্শিদাবাদের রাজপ্রাসাদে পুষ্পশয়নে থেকে সুরম্য ভাগীরথীর দৃশ্য অবলোকন করে সময় অতিবাহিত করেননি; তিনি স্বামীর সাথে রণাঙ্গনে গিয়েছেন, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন। ল-া নামের এক হস্তীর পিঠে অসীন অবস্থায় মারাঠিদের হাতে প্রায় বন্দি হয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু তিনি বিচলিত হননি। দিল্লির সম্রাজ্ঞী কোনো সম্রাটের বেগম আলিবর্দির স্ত্রীর মতো এমন সাহসের পরিচয় দিতে পারেনি। আফগানদের দমনে নবাবকে উত্তেজিত করে তুলেছিলেন এই শরফ্-উন-নিসা।
ইংরেজদের ব্যরসায় বুদ্ধিমত্তার সাথে পদক্ষেপ নিতে তিনি তরুণ নবাব সিরাজদ্দৌলাকে পরামর্শ দিয়েছেন। হলওয়েল সাহেব নিজেই লিখেছেন মুর্শিদাবাদে বন্দি থাকাকালীন তিনি প্রহরীদের কাছে শুনেছেন যে তাদের মুক্তি দেয়ার জন্য নবাব আলিবর্দির বেগম সিরাজকে অনুরোধ করেছেন। মুক্তি পাওয়ার পর জীবন রক্ষার জন্য তিনি বারবার বেগম সাহেবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। অবশ্য হলওয়েলের লেখার যথার্থতা নিখিলনাথ সন্দেহ পোষণ করেছেন। যেখানে আলিবর্দি খান ইংরেজদের বিশেষভাবে দমন করতে সিরাজকে পরামর্শ দিয়ে গেছেন, সেখানে তাদের ব্যাপারে শরফ্-উন-নিসা নমনীয় হওয়ার কথা নয়।
আলিবর্দির কন্যা ও জামাতারা: তিন কন্যার জনক আলিবর্দি খান। কোনো পুত্রসন্তান ছিল না তার। কাজেই মসনদের উত্তরাধিকার কাকে করবেন এ নিয়ে কিছু বাস্তব জটিলতা ছিল। বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলী খানও পুত্রহীন হওয়ার কারণে কন্যার স্বামী সুজাউদ্দিন মুহাম্মদ খানকে উত্তরাধিকারী করতে বাধ্য হন। আলিবর্দি খানের জ্যেষ্ঠ কন্যা মেহেরুননেসার আসল নামটি চাপা পড়ে গেছে, তিনি ঘষেটি বেগম নামেই পরিচিত, দ্বিতীয় কন্যা মায়মুনা বেগম ও কনিষ্ঠ কন্যা আমিনা বেগম। আলিবর্দি খান তার কন্যার জামাতাদের জন্য দিল্লির সম্রাটের কাছ থেকে খেতাবও গ্রহণ করেনÍঘষেটির স্বামী নওয়াজিশ মোহাম্মদের নামের সঙ্গে শেহামত জঙ্গ, মায়মুনার স্বামী সাইয়িদ আহমদের সঙ্গে ‘মাওলাত জন’ এবং আমিনার স্বামী জয়নুদ্দিনের সঙ্গে ‘শওকত জঙ্গ’ খেতাব যুক্ত হবে। ঘষেটি নিঃসন্তান ছিলেন, মায়মুনার একমাত্র পুত্রও শওকত জঙ্গ খেতাব ধারণ করেন। আমিনার দুই পুত্র, জ্যেষ্ঠ মীর্জা মাহমুদ; তিনিই ইতিহাসখ্যাত নবাব সিরাজদ্দৌলা। আলিবর্দি খান তার প্রিয় এই নাতির জন্য সিরাজদ্দৌলা, শাহ কুলি খান, বাহাদুর খেতাব সংগ্রহ করেছিলেন। সিরাজের ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলা নামটিও খেতাব।
আলিবর্দি খান নিজেও যেহেতু একটি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়েই ক্ষমতাসীন হয়েছেন, তিনি যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন যেন তাকে অনুরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে না হয়, সেজন্য স্বজনদেরই বড় বড় পদে বসিয়েছেন। সে আমলের সাবেক রাজধানী ঢাকার সরকারের দায়িত্ব লাভ করেন বড় জামাতা নওয়াজিশ মোহাম্মদ, সে সময় সিলেট, ত্রিপুরা ও চট্টগ্রামও ঢাকার প্রশাসন অধিক্ষেত্রের ভেতর আনা হয়। দ্বিতীয় জামাতা সাইয়িদ আহম্মদকে দেয়া হয় উড়িষ্যা সরকারের দায়িত্ব এবং বিহারের শাসনভার গ্রহণ করেন জয়নুদ্দিন। নওয়াজিশ, সাইয়িদ ও জয়নুদ্দিনÍতিনজনই আলিবর্দি খানের ভাই হাজি আহমদের পুত্র। তারা একই সঙ্গে নবাবের ভাতুষ্পুত্র ও জামাতা। নিঃসন্তান ঘষেটি-নওয়াজিশ দম্পতি সিরাজের ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলাকে দত্তক গ্রহণ করেন। সিরাজের পিতা জয়নুদ্দিনের দেহ মারাঠা আক্রমণ প্রতিহত করার সময় দ্বিখ-িত হয়ে যায়।
আলিবর্দির তিন কন্যাই তার জীবদ্দশায় বিধবা হয়ে যান। তার প্রতাপশালী ভাইও বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। আমিনা বেগমও বন্দি হন। উচ্চাভিলাষী ঘষেটি সিরাজদ্দৌলাকে আলিবর্দি খানের সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মেনে নিতে পারেননি। তিনি সিপাহসালার মীর জাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রধান রবার্ট ক্লাইভের সঙ্গে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত, এমনকি হত্যা করার জন্যও অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। নওয়াজিশ আহমদকে নিষ্ক্রিয় করতে সিরাজ তার প্রিয়ভাজন হোসেন কুলি খান ও তার ভাইকে হত্যা করেন। হোসেন কুলির সঙ্গে ঘষেটি বেগমের একটি দাম্পত্যবহির্ভূত সম্পর্কের কথা উদ্ধৃত হয়েছে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর পর সিরাজের মা আমিনারও তার প্রতি একটি দুর্বলতা গড়ে ওঠে, সিরাজ তা মেনে নিতে পারেননি বলে মনে করা হয়। এতে ঘষেটিও বোনের প্রতি অধিকতর শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠেন। নিখিলনাথ রায় মনে করেন, পারিবারিক এই কলঙ্ক থেকে পরিত্রাণের জন্য ঘষেটির প্ররোচনায়, আলিবর্দি খানের স্ত্রীর সম্মতিতেই সিরাজ হোসেন কুলি খানকে হত্যা করেন। অবশ্য আমিনার প্রণয়ের বস্তুনিষ্ঠ কোনো বিবরণী মেলেনি। যদিও সিরাজদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত ও হত্যা করার ষড়যন্ত্রে প্রধান ভূমিকা ঘষেটি বেগমের, কিন্তু তিনি মীর জাফর কিংবা কোম্পানির বাহবা পাননি। মীর জাফরের পুত্র মীরণ আলিবর্দি খানের স্ত্রী, দুই কন্যা ঘষেটি ও আমিনা, সিরাজের শিশুকন্যাকে বন্দি করে মুর্শিদাবাদ থেকে ঢাকায় নির্বাসন দিয়ে শোচনীয় জীবনযাপনে বাধ্য করেন। জীবিত থাকলে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে পারেন, এ আশঙ্কায় ঢাকার নায়েব যশরৎ খানের কাছে তাদের মৃত্যু পরোয়ানা পাঠানো হলেও তিনি হত্যায় অস্বীকৃতি জানান। মীরন বাধ্য হয়ে তার ঘনিষ্ঠ একজন দোসরকে মৃত্যু পরোয়ানা দিয়ে পাঠালে সেই ঘাতক নবাব আলিবর্দি খানের স্ত্রী, সিরাজদ্দৌলার স্ত্রী ও কন্যাকে অব্যাহতি দেয় এবং ঘষেটি বেগম ও আমিনা বেগমকে নৌকা থেকে বুড়িগঙ্গা নদীতে নিক্ষেপ করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, আলিবর্দি খানের পরিবারের সদস্যরা ভয়ংকর ট্র্যাজিক পরিণতির শিকার হয়েছন। বাংলার স্বাধীনতা হরণের কিছুটা দায় তাদের ওপরও বর্তায়। (সংকলিত) লেখক: এম এ মোমেন: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা