বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৮:৫৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোটে প্রভাব বিস্তাব করবেন না, মন্ত্রী-এমপিরা: ইসি মো. আলমগীর কোরআনের বর্ণনায় সফল ব্যক্তিদের গুণাবলী তীব্র গরমে কালীগঞ্জে বেঁকে গেছে রেললাইন, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক মেলান্দহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী দিদার পাশা জনপ্রিয়তায় এগিয়ে শ্রীপুর পৌরসভার উদ্যোগে খাবার পানি ও স্যালাইন বিতরণ অভিবাসী কর্মীদের পুনঃএকত্রীকরণে কর্মশালা রায়পুরায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থিতা ঘোষণা আলী আহমেদের কমলগঞ্জের মিরতিংগা চা বাগানে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সভা অব্যাহত পলাশবাড়ীতে প্রচন্ড গরমে ঢোল ভাঙ্গা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে তরমুজ বিতরণ জুড়ীতে টিলাবাড়ি ক্রয় করে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ

দ্রুত রূপ বদলাচ্ছে করোনা,ভ্যাকসিনের কার্যকারীতা নিয়ে সন্দেহ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বাংলাদেশ শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সম্প্রতি করোনার জিনোম সিকোয়েন্স করে জানতে পেরেছে যে, সারা বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে প্রায় দ্বিগুণ গতিতে করোনা তার রূপ বদলাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে করোনার রূপ যদি এভাবে পাল্টাতে থাকে,তাহলে ট্রায়ালে থাকা ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কি থাকবে এ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন ক্যাটাগরি বদলে গেলে অ্যান্টিবডি বদলাতে পারে। আবার কেউ বলছেন দ্রুত পরিবর্তনের কারণে নির্দিষ্ট স্টেজ থেকে ভ্যাকসিন ফের মোডিফাই করা লাগতে পারে। কেউবা বলছেন ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার ওপর এর প্রভাব পড়বে না।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে রূপ পরিবর্তন করছে। বিশ্বে করোনাভাইরাসের রূপান্তরের হার ৭ দশমিক ২৩ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে করোনাভাইরাষৈল রূপান্তরের হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরির এক দল গবেষক এ তথ্য জানিয়েছেন।
এই গবেষকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে মোট ২৮টি প্রোটিন থাকে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পাইক প্রোটিন, যার মাধ্যমে বাহককে আক্রমণ করে। করোনার নমুনা বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, স্পাইক প্রোটিনে ৬১৪তম অবস্থানে অ্যাসপার্টিক এসিড পরিবর্তন হয়ে গ্লাইসিন হয়েছে। এতে ‘জি৬১৪’ নম্বর ভ্যারিয়েন্টটি শতভাগ ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করেছে। এই আধিপত্যের কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি হচ্ছে।
গবেষকরা জানান, এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশে SARS-CoV-2 ভাইরাসের সংক্রমণ, মিউটেশনের হার, জিনগত বৈচিত্র্য, নন-সিনোনিমাস মিউটেশন এবং জেনোমিক ফাইলোজেনি পর্যবেক্ষণ করা এবং গবেষণালব্ধ ফলকে কোভিড-১৯ মহামারি রোধে কার্যকর ভূমিকা পালনে যথাপোযুক্ত ব্যবহার করা। জিনগত বৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করার জন্যে SARS-CoV-2 ভাইরাসের সর্বমোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়।
২৬৩টি SARS-CoV-2 ঝঅজঝ-ঈড়ঠ-২ জিনোম বিশ্লেষণ করে জানা যায় যে, সর্বমোট ৭৩৭টি পয়েন্টে মিউটেশন হয়, যার মধ্যে ৩৫৮ নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটায়। এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত SARS-CoV-2 ভাইরাসের মিউটেশনের হার বার্ষিক ২৪ দশমিক ৬৪ নিউক্লিওটাইড। সারা বিশ্বে নমুনাপ্রতি মিউটেশন হার ৭ দশমিক ২৩, যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৬০ লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ, অন্য যে কোনও দেশের তুলনায় বাংলাদেশে SARS-CoV-2 ঝঅজঝ-ঈড়ঠ-২ ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে এর রূপ পরিবর্তন করছে। এছাড়া, স্পাইক প্রোটিনের জিনে ১০৩টি নিউক্লিওটাইড মিউটেশনের মধ্যে ৫৩ টি নন-সিনোনিমাস অ্যামিনো এসিড প্রতিস্থাপন ঘটে যার মধ্যে ৫টি স্বতন্ত্র। যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি ।
বিসিএসআইআরের বায়োলোজিক্যাল রিসার্চ ডিভিশনের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার ড. মো. সেলিম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সিকোয়েন্সিং আর ভ্যাকসিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি মনে করেন করোনাভাইরাস ‘এ’ ক্যাটাগরির বিপরীতে আমার শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়, তাহলে ওই ক্যাটাগরির বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। যদি করোনা ‘এ’ বদলে যায় তাহলে তো অ্যান্টিবডি পাল্টে যাবে। যারা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছেন এবং তৈরি করছেন তারা কিন্তু আমরা যে পরিবর্তন দেখাচ্ছি, পুরোটাই কিন্তু আমলে নিয়ে ভ্যাকসিনের কাজ করছেন।’
তিনি বলেন, ‘এখন করোনাভাইরাস র‌্যাপিডলি চেঞ্জ হচ্ছে। চেঞ্জ থামছে না বলেই কিন্তু ভ্যাকসিন আসতে দেরি হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, পুরো বিশ্বে দুই হাজার ধরনের চেঞ্জ হচ্ছে। ঘুরে ফিরে কিন্তু এই দুই হাজারের মধ্যেই থাকছে, এর বাইরে যাচ্ছে না। তাতে কিন্তু আমাদের জন্য ভ্যাকসিন হয়ে যাবে। কিন্তু এই দুই হাজারের বাইরে যদি দুই হাজার এক নম্বরও বেরিয়ে আসে, পরবর্তী লটে সেটাও ওই ভ্যাকসিনের মধ্যে ধরা হবে। আমরা যখন এই সিক্যুয়েন্সিং করছি, সেটা সঙ্গে সঙ্গে আমরা ‘ইন্টারনাল জিন ব্যাংকে’ দিয়ে দিচ্ছি। যারা ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছেন, তারা কিন্তু সেই ডাটাগুলো সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন। কোন দেশে কতগুলো সিকোয়েন্সিং হচ্ছে, করোনা কী ধরনের মিউটেশন হচ্ছে সেখানে তো আমরা ডাটাগুলো দিচ্ছি। আবার এককভাবে আমরা ডাটাগুলো দিয়ে দিচ্ছি তাদের গবেষণার কাজের জন্য। এটা অবশ্যই কাজে লাগবে এবং ভালো একটা প্রতিফলন ঘটবে। আমরা যখন অ্যানালাইসিস করছি তখন সফটওয়্যার কিন্তু আমাদের বলে দিচ্ছে, কোন কোন জায়গায় ভাইরাসটি মিউটেশন করছে। এই মিউটেশন আগেও হয়েছে কিনা কিংবা বাংলাদেশে প্রথম ঘটলো কিনা, সব কিন্তু বলে দিচ্ছে। আমরা মিউটেশন পেয়েছি অনেকগুলো, কিন্তু ৫টি ইউনিক মিউটেশন আছে যেগুলো অন্য কোথাও হয়নি। এর বাইরে আরও আছে কিনা সেটা দেখতে হলে কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ সামনে শীতকাল আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র বাংলাদেশের জন্য ভ্যাকসিন তৈরি করার সুযোগ নেই। আমরা বলছি এই মুহূর্তে করোনার ৫টি মিউটেশন বা ইউনিট আছে, যেগুলো বিশ্বের কোথাও ঘটেনি। এখন যদি আমরা এটা খুঁজে না দিতাম, তাহলে কিন্তু চলমান ভ্যাকসিনের বাইরে থেকে যেতো। তখন দেখা যেতো, আমাদের এখান থেকে কেউ রাশিয়াতে গেলে এই নতুন মিউটেশন সেখানে নতুন করে আক্রমণ করতো। যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছেন, তারা কিন্তু এই সিকোয়েন্সিং খুঁজছেন প্রতিনিয়ত। আর আমাদের দেশে অন্য দেশের তুলনায় মিউটেশনটি খুব দ্রুত হচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক একটি প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জার যে ধরনের মিউটেশন হয়, করোনার ক্ষেত্রে সেই ধরনের মিউটেশন না। এই মিউটেশনগুলো কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, সেটা শুধু বায়োইনফরমেটিক অ্যানালাইসিস থেকে একটি ধারণা পেতে পারি । কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে এটা কিন্তু অ্যনিমেল ট্রায়াল বা হিউম্যান ট্রায়াল না করে বলা যাবে না। যারা এখন ভ্যাকসিনের প্রস্তুত করার কাজে এগিয়ে আছেন, তারা কিন্তু কাজ শুরু করেছেন অনেক আগে। তারা কিন্তু তখন যে অ্যানালাইসিস ছিল সেগুলো দিয়েই কিন্তু ভ্যাকসিন তৈরির টার্গেট পূরণ করেছেন। এখন এই পর্যায়ে কিন্তু টার্গেট পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। এই টার্গেট পরিবর্তন করতে হলে হয়তো আবারও শুরু থেকে ভ্যাকসিনের কাজ শুরু করতে হবে।
তিনি বলেন, বিসিএসআইআর ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্স করেছে, তার মধ্যে শতভাগই ৬১৪ নম্বরের মিউটেশন পজিশন পেয়েছে। তার মানে এটা বাংলাদেশে প্রিভিলেজড রেঞ্জ। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের লাভ হলো এই মিউটেশন আমরা কনসিডার করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সামনে যদি নতুন কোনও মিউটেশন চলে আসে, তাহলে কিন্তু আবারও মোডিফিকেশন লেভেল থেকে কাজ শুরু করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা শাহ্ মুনিরের মতে, করোনাভাইরাসের রূপ বদলানোর সঙ্গে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন তৈরি হবে অ্যান্টিজেনের বিপরীতে। বেশিরভাগ ভ্যাকসিন তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিজেনের বিপরীতে আরএনএ’র বিপরীতে না। সহজভাবে বলতে গেলে আরএনএ হলো অ্যামাইনো এসিড সিকোয়েন্স যা একটি ভাইরাসের প্রাণ। আর ওই প্রাণের কিছু প্রোটিনের প্রলেপ থাকে যেগুলো অ্যান্টিজেন হিসেবে কাজ করে। মানুষ কিংবা প্রাণীর শরীরে এই জাতীয় অ্যান্টিজেন যখন প্রবেশ করে, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রিঅ্যাক্ট করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা একই। ওই অ্যান্টিজেনের বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে। ভ্যাকসিন দেওয়ার ফলে অ্যান্টিজেনের যে প্রোপার্টি সেটা থেকে যাবে। কিন্তু রোগ সৃষ্টি করার ক্ষমতা পাবে না। এতে কিন্তু সিকোয়েন্সিং পরিবর্তনের সঙ্গে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা না। করোনার যে পরিবর্তন হয়েছে এটার বিপরীতে অ্যান্টিবডি তৈরিতে তেমন প্রভাব ফেলবে না। পৃথিবীতে এখন চার ধরনের ভ্যাকসিন তৈরি করার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে তিনটি হলো সেফ অ্যান্টিজেনের বিপরীতে। একটিতে কিছুটা আরএনএ’র ব্যাপার আছে। অ্যান্টিজেনের বিপরীতে তৈরি হলেও সিকোয়েন্স বদলানোর কারণে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট হবে না।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com