সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কয়রায় উপকুলের মানুষ নানান প্রতিকুলতার মধ্যে সংগ্রাম করেই বেঁচে থাকে কাপাসিয়ায় ৫০ জন সহকারী শিক্ষকের যোগদান : ফুলেল শুভেচ্ছা কমলগঞ্জে ইসলামী যুব মজলিসের আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল হতদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের মাঝে আর্থিক এবং সঞ্চয় ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বন্ধের দাবিতে শ্রীমঙ্গলে সনাক-টিআইবির মানববন্ধন ফটিকছড়িতে ইফতার মাহফিলে অধ্যক্ষ নুরুল আমিন আমরা ইনসাফপূর্ণ রাষ্ট্র গঠন করতে চাই মাদারীপুরে খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রার্থী দেয়া হবে জামালপুর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে দোয়া ও ইফতার মাহফিল খুলনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভা নওগাঁয় ২৫০ জন কুরআনের হাফেজকে সংবর্ধনা

অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রুখতে হবে

রাগিব মুত্তাকী
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২৩

রোগ সারাতে যেখানে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হওয়ার কথা, সেখানে এর যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে অনেকে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ফলে জীবাণু এখন নিজেই প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। কী সাংঘাতিক কথা! বলা বাহুল্য, মানুষের মৃত্যুঝুঁকি বাড়াচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি মানুষের শরীরেই জীবাণু এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যঝুঁকির এই বিষয়টি যে কতটা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার, তা বলে শেষ করা যাবে না। সহজ কথায় অ্যান্টিবায়োটিক হলো এমন একটা রাসায়নিক উপাদান, যা জীবকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে পারে। এটি প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন অণুজীব তৈরি করে। এসব অণুজীব হতে পারে কোনো ছত্রাক, মোল্ড, এমনকি কোনো ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একাধিক অণুজীব প্রজাতির বিরুদ্ধে কার্যকরী হয়। তবে অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার ওপর কার্যকরী এবং খুব দ্রুত বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে ফেলতে বা তাদের বংশবৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।
মূলত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন রোধ করার জন্য বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন। এসব অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ জগতে এনেছে বিরাট বিপ্লব। এর ফলে বেঁচে যাচ্ছে লাখ লাখ প্রাণ। কিন্তু মাত্রারিক্ত ও অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হলে মহাবিপদ অনিবার্য। তাছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সও মাথা ব্যথার বড় কারণ। ডাক্তারের নির্দেশনা ছাড়া অবান্তর ও অসতর্কভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারের ফলে এই নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বহু সুপার ব্যাকটেরিয়া প্রজাতির সৃষ্টি হচ্ছে। এরা বিভিন্নভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বর্তমানে অনেকের দেহে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আর কাজ করছে না। এটা খুব ভয়াবহ ও চিন্তার বিষয়।
মনে রাখতে হবে, ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন থেকে বাঁচার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক মানবজাতির অন্যতম বড় হাতিয়ার, যা আমাদের অনেক রোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার একটা শক্তিশালী অস্ত্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর অবাধ ও অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে বহু ব্যাকটেরিয়া প্রজাতি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ ঐ ব্যাকটেরিয়ার ওপর ঐ অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো প্রভাব নেই। ফলস্বরূপ এসব সুপার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হলে বিকল্প চিকিৎসা খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তবু বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রাকৃতিক, সেমিসিন্থেটিক ও কৃত্রিম অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করে সমস্যাগুলোকে সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে আমাদের ফার্স্ট আর সেকেন্ড জেনারেশনের অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর বেশির ভাগই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে অকেজো হয়ে গেছে। তাই সমস্যাটা আরো গুরুতর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটিকে রোধ করতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজনীয় ও উৎকৃষ্ট ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম কথা হলো, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত কোনো অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করা যাবে না। ছোটখাটো জ্বর, অল্প সর্দি, মাথাব্যথা, পেট খারাপ বা অন্য কোনো স্বাভাবিক রোগ, যেগুলোর বিকল্প চিকিৎসা বা ওষুধ আছে, সেগুলোর জন্য অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ না করাই উত্তম। মনে রাখতে হবে, অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো রোগের সর্বশেষ আশ্রয়। ডাক্তার যদি একান্তই অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেন, তাহলে তিনি কী কারণে, কোন পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষার মাধ্যমে বুঝে এটা খেতে বলেছেন তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তাছাড়া ডাক্তারের কাছ থেকে কত দিন আর দিনে কত ঘণ্টা পর পর কীভাবে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে, এসব ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া এবং সে অনুযায়ী সময়ানুবর্তিতা মেনে কোর্স শেষ করতে হবে। কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না, অসুস্থতা থেকে অল্পসময়ে মুক্তি পেলেও অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স যথাযথভাবে শেষ করা অতীব জরুরি। এতে অ্যান্টিবায়োটিকটি দেহে সফলভাবে কাজ করবে এবং দেহে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে। এ কথা সবার জানা, গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তাররা রোগীকে ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেনযা নিতান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যান্টিবায়োটিকের বিস্তার ঘটায় একশ্রেণির অসাধু দোকানকার। এমনকি এসব ব্যাপারে রোগী ও ডাক্তারদের মধ্যেও নেই সচেতনতা। এভাবে চলতে থাকলে চরম মাশুল গুনতে হবেএতে কোনো সন্দেহ নেই। কাজেই সচেতন থাকতে হবে ডাক্তার ও রোগী উভয়কেই। অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রিও হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক। আরো কঠোর আইন করে পাশ করে অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের লাগাম টানতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধ কোম্পানিগুলো যেন কোনোভাবেই নি¤œমানের অ্যান্টিবায়োটিক বাজারজাত করতে না পারেসে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি করতে হবে। মানুষের পাশাপাশি বর্তমানে পশুপাখির ওপরও অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার বেড়ে গেছে অতিমাত্রায়, যা বড় অশনিসংকেত। এমতাবস্থায়, সুস্থ জাতি গঠনে অ্যান্টিবায়োটিকের অযাচিত রুখতে হবে। লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com