ডিপ্রেশন বা বিষণতা থেকে বাঁচার উপায় কী? এই প্রশ্ন আমাকে বারবার শুনতে হয়েছে। ডিপ্রেশন মানে কি একাকিত্ব? কথা বলার কেউ নেই? মানসিক আঘাত? যা একজন মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি নিজেই চমকে উঠি। সেই কিশোরী বেলায় বাবাকে হারিয়ে আমিও তো একা হয়ে পড়েছিলাম। আব্বার মতো করে কে শুনবে আমার কথা? কে আমাকে আকাশ ধরতে নিয়ে যাবে? কার কাছে হাজারটা বায়না ধরব? স্কুলের রেজাল্ট নিয়ে গল্প কার সাথে করব? এসব ভেবে আমি স্তব্ধ নির্বাক হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা স্থায়ী হয়নি। কারণ, সামনে আমার পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার চিন্তা আর পিতা হারানোর চিন্তা মনের মধ্যে জায়গা দখল করে। কোনটি ছেড়ে কোনটি নিয়ে পড়ে থাকব! তাই আমার পুরোপুরি ডিপ্রেশনে যাওয়া হয়নি। এই তো তিনটি বছর পার হলো গত ২৮ ডিসেম্বর আমার আম্মা চলে যাওয়ার। আম্মার শোকে মরিনি, বেঁচে আছি। হাসছি, কথা বলছি। সবই চলছে জগতের নিয়ম মতো। আম্মা যখন আইসিইউতে মৃত্যুর মুখোমুখি প্রায়; তখন আমি কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে আল্লাহকে বলছিলাম, ওগো দয়াময় আল্লাহ, আমার মাকে ফিরিয়ে দাও, মাত্র কয়টি দিনের জন্য। আমি শেষ বারের মতো মায়ের সেবা করতে চাই। ইয়া মালিক আমার দোয়া কবুল করো।
ডাক্তার বলেছিলেন, আপনার মাকে বাঁচাতে দোয়ার বিকল্প আর কিছু করার মতো আমাদের নেই। অতএব মন শক্ত করুন। পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তৈরি হন। আর আমি আল্লাহকে ডেকে যাচ্ছিলাম, শুধু আর একটিবার ফিরিয়ে দিতে আম্মাকে। আল্লাহর কাছে লাখো কোটি শুকরিয়া। আল্লাহ আমার মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। অল্প কিছু দিন মা বেঁচেছিলেন। তাও কঠিন নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে। আমি আমার সাধ্যমতো মায়ের পাশে ছিলাম। আমি নিজেকে জাহির করার জন্য বলছি না। বলছি এই কারণে, আমার লেখায় শিক্ষণীয় কিছু কথা আছে।
তারপর অবশেষে মা চলে গেলেন। আমি আবারো নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এবার সত্যিই ডিপ্রেশনে চলে গেলাম কেঁদে কেঁদে। ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার জন্য আমি ব্যস্ততাকে বেছে নিলাম। চরম ব্যস্ততায় আমার মা হারানোর প্রবল ধাক্কাটা কিছুটা হলেও প্রশমিত হয়েছে। বেছে নিলাম কুরআন অধ্যয়ন। লেখালেখি আগেও করতাম। ডায়েরি ভরে ভরে লিখতাম। এখন লেখার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছি। ফলে আমি মোটামুটি সুস্থ আছি। আলহামদুলিল্লাহ।
ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায়
কুরআন তিলাওয়াত : সূরা ইয়াছিন পাঠ করা। এতে মন হালকা হয়। মনে এক ধরনের শীতলতা তৈরি হয়; যা এন্টিবায়োটিকের মতো কাজ করে। সূরা আর রাহমান পাঠ করা; মনে আনন্দ আসে। সূরা বাকারা পাঠ করা; আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতায় মনটা নুয়ে আসে। দুনিয়াবি দুঃখ কষ্ট মন থেকে ধীরে ধীরে দূর হয়ে যায়।
ব্যস্ত থাকা : নিজের একান্ত করণীয় কাজগুলো সুন্দর সুচারুভাবে সময় নিয়ে করা। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত সময় মতো পড়া। হাদিস পড়া। শিক্ষণীয় গল্পের বই পড়া। আব্বা-আম্মা পরিবারের সাথে সময় কাটানো। হাসি ঠাট্টা করা। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা। যারা ডিপ্রেশনে আছেন তারা চাইলে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করে দেখতে পারেন।
লেখক : শিবপুর, নরসিংদী থেকে