সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫০ অপরাহ্ন

১৩ বছরেও রৌমারীতে রাবার ড্যাম চালু হয়নি

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২৩

দীর্ঘ ১৩ বছরেও কৃষকগণ কৃষি কাজের সুবিধার আলোর মুখ দেখেনি রৌমারী উপজেলার জিঞ্জিরাম নদীর ১৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত খেওয়ারচর রাবার ড্যাম প্রকল্পটি। অনেকটা অবহেলা, অযতেœ ওই বাঁধটি নির্মাণের অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের ১৪ কোটি টাকার প্রকল্প। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে থাকলেও,দেখভালের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে ৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য রাবার ড্যামটি। রাবার ড্যামের দু’পাশে অসহায় অনেক পরিবারের বসতবাড়ি পানির ¯্রােতে নদী গর্ভে বিলিন হলেও পদক্ষেপ নিচ্ছেন না কেউ। সরকার রাবার ড্যামের মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি জমি ইরি বোরো চাষে সুবিধার স্বপ্ন থেকে বাস্তবায়নে পিছিয়েছে। উপজেলা এলজিইডি সুত্রে জানা যায়, উপজলার যাদুরচর ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত ঘেঁষা খেওয়ারচর এলাকার জিঞ্জিরাম নদীতে ২০১০ সালে রাবার ড্যাম প্রকল্পটির কাজ শুর হয়। দু’দফায় এ প্রকল্পে কৃষি অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দে, এলজিইডির বাস্তবায়নে প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। প্রথম দফায় ১২ কোটি ও দ্বিতীয় দফায় অতিরিক্ত আরও ১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয় হলেও সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে এলাকার কৃষকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজলার যাদুরচর ইউনিয়নের সায়দাবাদ লালকুড়া খেয়াঘাট হতে খেওয়ারচর রাবার ড্যাম এলাকাটির তিন কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। কাঁচা এই সড়কটির বেশিরভাগ এলাকা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের সুরক্ষা ও নদী শাসনের জন্য ২ কিলোমিটার সিসি ব্লক ও রাস্তা নির্মাণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৮৫ মিটার সেতু। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক করার কথা থাকলেও নদের পূর্ব সাইটটি নয়ছয় কাজ করায় বর্ষা, বন্যায় নদীতে ধসে গেছে। পানিতে থাকা রাবার ড্যামের ব্যাগটি ফোলানোর অভাবে নষ্ট হতে বসেছে। প্রকল্পটি দেখভালের জন্য ১৩ বছরে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প এলাকার জনসাধারণ জোবায়দুল, সাবেক মেম্বার শেখ ফরিদ, আমির উদ্দিনসহ অনেকেই অভিযাগ করে বলেন, প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় বেশি দামে তেল কিনে (বোরো) ধানের আবাদ করতে হচ্ছে। সরকার এতো টাকা ব্যয় করে কৃষকদের সেচ সুবিধার জন্য রাবার ড্যাম নির্মান করেছে। নির্মানের দীর্ঘ বছর পর থেকেও কৃষকরা সুবিধা পায়নি। রাবারটি পচে যাচ্ছে পানির নিচে। লাভবান হয়েছে ঠিকাদার ও একটি স্বার্থ্যান্বেষি মহল। তাই সরেজমিন তদন্তপূর্বক অতি দ্রুত রাবার ড্যামটি চালু করে কৃষকদের সেচ সুবিধা করার দাবি জানিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। খেওয়ারচর রাবার ড্যামের পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন রিপন বলেন, এই রাবার ড্যাম প্রকল্পের আওতায় চারশ’ কৃষক সদস্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এক যুগেও প্রকল্পটি চালু না হওয়ায় এলাকার প্রায় ১২শ’ কৃষক ডিজেল চালিত শ্যালো মিশিন, নলকূপ বসিয়ে চাষাবাদ করছেন। এতে করে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরও জানান, সমিতির সদস্যরা প্রকল্পটির কোন সুবিধা না পাওয়ায় রাবার ড্যাম এলাকার সমিতিটি রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই যত দ্রুত সম্ভব বর্তমান সরকারের পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণসহ রাবার ড্যাম প্রকল্পটি চালুর দাবি জানান তিনি। রৌমারী উপজলা কৃষি কর্মকর্তা কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সেচ সুবিধার আওতায় আসবে ওই এলাকার আড়াই হাজার কৃষক পরিবারের ২ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। নদীতে মাছ চাষে লাভবান হবেন অনেক কৃষক। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি চালু হলে ডিজেল চালিত শ্যালো মিশিনের সংখ্যা কমে যাবে। এতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও অনেকটা কমে আসবে। উপজেলা প্রকৌশলী যুবায়েদ হোসেন বলেন, রাবার ড্যাম এলাকার নদীর দু’পাশে যে পরিমাণ বাঁধ নির্মাণ করা দরকার, তা না করায় প্রকল্পটি চালু করা যাচ্ছে না। বাঁধ নির্মাণ না হলে রাবার ফুলিয়ে সেচ সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কমপক্ষে ৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ করলে এ প্রকল্পের সুফল পাবে কৃষকরা। সেতুর দু’পাশের সিসি ব্লক ধসে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরোও বলেন, ওই নদে ড্রেজারে মাঠি তুলায় সিসি ব্লকের ক্ষতি হয়েছে। নতুন বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ আসলেই কাজ শুরু করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com