জাতি হিসেবে সবার একটি ধর্ম থাকে। সংস্কৃতিও থাকে। থাকে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। সব মানুষের একটা ধর্ম থাকে। সে যে ধর্মেরই অনুসরণ, অনুকরণ করে সেটি তার ধর্ম। সব গোত্র শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে ধর্ম তার একটা ঈমান ও বিশ্বাস। সে বিশ্বাস থেকে তিনি ধর্ম পালন করেন। অনুসরণ করেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। একটা দেশে বহু ধর্মের মানুষ ও অনুসারীদের বসবাস। সেটি সব দেশেই। পৃথিবীর যতগুলো দেশ ও রাষ্ট্র রয়েছে সব দেশেই কমবেশি বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীদের অবস্থান থাকে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের অনুসারীদের ওপর উত্তেজনা সৃষ্টি করার হামলা ও অত্যাচার নির্যাতন করা মোটেও কোনো ধর্মীয় কাজের মধ্যে পড়ে না। ধর্ম মানুষকে আলোকিত করে সুশৃঙ্খল মননশীল জীবনযাপনে সহায়তা করে। ধর্মের কারণে সমাজ আলোকিত হয়। দেশ ও রাষ্ট্র উপকৃত হয়। সব ধর্মের বাণীর মধ্যে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ শৃঙ্খলা আনুগত্য ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার কথা পাওয়া যায়। মানুষ যার যার ধর্ম সে পালন করবে। সুশৃঙ্খলভাবে তার ধর্ম তিনি পালন করবেন। অন্য কোনো ধর্মের অনুসারীর ওপর আঘাত হামলা অত্যাচার বাধা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন না সেটিই মূলত ধর্মের আহ্বান। তবে এখন আমরা ধীরে ধীরে ধর্মের মূল আদর্শ এবং অনুসরণ হতে সরে আসছি। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কমবেশি হলেও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট হতে দেখা যায়। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও দেশের বিভিন্ন অ লে ধর্মের নামে অধার্মিক অনৈতিক কার্যকলাপ গড়তে দেখা যায়। এক পীরের মুরিদ অন্য পীরের মুরিদের ওপর হামলা করছে। ধমীয় হানাহানির মধ্যে সুন্নি, ওহাবি, খারেজি, রাফেজি, নানা ধরনের ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় হানাহানির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এক পক্ষ অপর পক্ষকে সহ্য করতে পারে না। ধর্ম পালনের জন্য শৃঙ্খলা থাকতে হবে। সব ধর্মের মধ্যেই একটি সংস্কৃতি থাকে। সে সংস্কৃতির সাথে ধর্মের যোগসূত্র পাওয়া যায়। ধর্ম ও সংস্কৃতির আচার অনুষ্ঠান প্রায়ই কাছাকাছি। মুসলমানরা যে ধর্ম পালন করে সে ধর্মে কিছু নিয়মনীতির সংস্কৃতি থাকে। সে সংস্কৃতির মধ্যে ইসলামিক আচার অনুষ্ঠান লালন ও পালন হয়ে থাকে। মুসলমানরা তাদের সংস্কৃতির মধ্যে মাথায় টুপি পরিধান করে। নামাজের সময় টুপি পাগড়ি এগুলো ব্যবহার করে। সেটি ধর্মের মধ্যেই একটি সংস্কৃতি। সালামের আদান-প্রদান সেটিও ইসলামী সংস্কৃতি। ইসলামী তাহজিব তমদ্দুন নিয়ে গান তৈরি এবং পরিবেশন সেটিও ইসলামী সংস্কৃতি। খাওয়াদাওয়ার মধ্যে ইসলামী নিয়মনীতি পালন ইসলামী সংস্কৃতি। পারিবারিক সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে ইসলামের আদর্শ অনসুরণ সেটিও ইসলামী সংস্কৃতি। বাজার-মার্কেটে যাওয়া আসা, রাস্তায় চলাচলের মধ্যে নিয়ম মেনে চলার নাম ইসলামী সংস্কৃতি। বলতে গেলে মুসলমানরা যে ধর্মের অনুসারী, ইসলামী নিয়মনীতির মধ্যেই ইসলামী সংস্কৃতি নিহিত রয়েছে। অনুসরণের মধ্যেই ইসলামী সংস্কৃতি পাওয়া যায়। ইসলামী সংস্কৃতির সাথে অন্য কোনো ধর্মের আচার অনুষ্ঠানের মিল পাওয়া যায় না। কেউ মেলালে সেটি সাংঘর্ষিক হয়ে যায়। ইসলামী সংস্কৃতির সাথে ভিন্ন ধর্মের সংস্কৃতির মিলন সেটি ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক বলা যায়। মুসলমানের সৃষ্টি, আদি পিতা, কিভাবে পৃথিবীর বুকে মুসলমানরা আবির্ভূত হয়েছেন তার একটা কমপ্লিট পরিচিতি ও দর্শন ইসলামের ইতিহাসের মধ্যে পাওয়া যায়। সেটিই হচ্ছে মূলত মানুষ সৃষ্টির ইতিহাস তথা মুসলিম সৃষ্টির ইতিহাস। কোনো মুসলিম বানর হতে সৃষ্টি হতে পারে না। মুসলিম হলো নূরের তৈরি মাটির সংমিশ্রণে মানুষ। এ মানুষকে আধুনিক চিন্তাচেতনা দিয়ে কোনোভাবে বানরের তৈরি হিসেবে ইতিহাস সৃষ্টি করা যায় না। এটা সম্পূর্ণভাবে ভুল এবং একটি ভ্রান্ত প্রচেষ্টা।
মুসলিমরা কোনোভাবেই এসব সংস্কৃতির বক্তব্য-ইতিহাস গ্রহণ করবে না। শুধু মুসলিম কেন যেকোনো ধর্মের মানুষও আমার বিশ্বাস মতে বানর থেকে মানুষ সৃষ্টির কল্পকাহিনীর সাথে একমত হবে না। সংস্কৃতির নামে ইতিহাসের নামে মুসলিম সমাজে এ ধরনের শিক্ষা মুসলিম দেশ তথা বাংলাদেশের মুসলমানরা আশা করে না। শিক্ষার সিলেবাস থেকে এ ধরনের চিন্তাচেতনা ও গল্পকাহিনী বাদ দেয়া দরকার। সময় থাকতে এসব বক্তব্য প্রত্যাহার করে সঠিক ইসলামী আদর্শ তাহজিব তমদ্দুন ও সংস্কৃতির সাথে মিল রেখে শিক্ষা সিলেবাস উপস্থাপন করা দরকার। আজকের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের যেভাবে এ ধরনের সংস্কৃতি শেখানো হচ্ছে সে কারণে একদিন বাস্তবে মুসলিম এ জাতি ইসলামী মূল আদর্শ থেকে দূরে সরে যাবে। বাস্তব ইসলামী আদর্শ ও চরিত্র তারা ভুলে যাবে। এগুলো কোনোভাবেই ইসলামী সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। বাস্তবে এসব শিক্ষার মাধ্যমে বাস্তব ইসলামী কালচার থেকে মুসলিম সমাজ দূরে সরে যাবে। সে কারণে বর্তমানে শিক্ষা সিলেবাসে যে ধরনের তথাকথিত পাঠ্য সিলেবাস তৈরি করা হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাপকভাবে আলোচনা সমালোচনা চলছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সরকারকে সমালোচনার এসব বিষয় খতিয়ে দেখা দরকার। সিলেবাসের মধ্যে ইসলাম এবং মুসলমান নিয়ে কোন কোন জায়গায় সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটি চিহ্নিত করতে হবে এবং তা সংশোধন করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি নিয়ে উত্তেজনা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
ইসলামের একটা নিয়মনীতি দিকনির্দেশনা আবেদন রয়েছে। এর বাইরে ইচ্ছে করে কেউই বিকৃত আদর্শ ও চরিত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। ইসলামী সিলেবাস তৈরির জন্য আদর্শিক ইসলামিক দার্শনিক বুদ্ধিজীবীর উপস্থিতি থাকা চাই। যে কাউকে দিয়ে ইসলামিক সিলেবাস পাঠ্যপুস্তক তৈরি করা যায় না। যে বিতর্ক এখন অব্যাহতভাবে সারা দেশে চলছে সেটি হচ্ছে সিলেবাসের মধ্যে ব্যাপক ভুলভ্রান্তি নিয়ে। এসব বিষয় কোনোভাবেই ছোট করে দেখার নয়। গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে যথাসময়ে এসব বিষয় সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ইসলামের ঐতিহ্য ইতিহাস সমুন্নত রাখতে হবে। অপরাপর ইতিহাসের মতো ইসলামের ইতিহাস নিয়ে কোনো ধরনের ফাসাদ ও বিতর্ক সরকারের পক্ষ থেকে আসুক জনগণ চায় না। ইসলামের ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ধর্মকে যথাযথভাবে নিজ স্থানে রেখে পাঠ্য সিলেবাস প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে মনগড়া কোনো বক্তব্য ইতিহাস তৈরি করলে সেটিকে মুসলিম সমাজ কোনোভাবেই সমর্থন জানাবে না। লেখক : সংগঠক, গবেষক, কলামিস্ট