শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা। পেশাগত দায়িত্বে থাকা ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ১১.৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং প্রায় ৪০ (৩৩.৯) শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়। গত বৃহস্পতিবার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের অডিটোরিয়াম কক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্প’এর আওতায় গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের নিয়ে আয়োজিত সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা থেকে এমন তথ্য জানানো হয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগীতায় রয়েছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং স্টামফোর্ড বায়ুম-লীয় দূষণ অধ্যায়ণ কেন্দ্র (ক্যাপস)।
স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ক্যাপস এর গবেষনায় দেখা যায় যে পেশাগত দায়িত্বে থাকা ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের ১১.৮ শতাংশ সদস্যের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এবং ৩৩.৯ ভাগ ট্রাফিক পুলিশের অন্যদের কথা শুনতে কষ্ট হয়। শব্দ দূষণ সহ পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বেশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।
প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ সোহেল রানা বলেন, শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে, যানবাহনের সৃষ্ট শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার ট্রাফিক পুলিশ ও পথচারীরা। শব্দ দূষণরোধে যানবাহন এবং নির্মাণ কাজে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের উপর গুরত্ব আরোপ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক (প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা) বেগম ফারহানা মুস্তারী বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর শুরু থেকেই শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে আসছে। এই প্রকল্পের অধীনে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছে, শব্দদূষণ রোধে বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের সহযোগিতা একান্তই কাম্য।
বিশেষ অতিথি ডা. এম এ বাকি বলেন, “শব্দদূষণ একটি নিরব ঘাতক” এটি পথচারী ও সড়কে কর্মরত ট্রাফিক কন্ট্রোলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা সৃষ্টি করছে। শব্দ দূষণ কানের সমস্যার পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্টের রক্তনালী ব্লক, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল বাড়াতেও ভূমিকা রাখে।
জনস্বাস্থ্যের এই অতিব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জনসচেতনতার জন্য আরো অধিকতরভাবে গণমাধ্যমে প্রচার করা উচিত এবং জনস্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত ব্যবস্থা নিতে হবে।
বিশেষ অতিথি বুয়েটের অধ্যাপক শিফুন নেওয়াজ বলেন- প্রশসনের উচিত উচ্চ ডেসিবল শব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন আমদানি বন্ধ করা এবং পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান হর্ন নষ্ট করা। সপ্তাহে যে কোন একটি দিন বা একটি ঘন্টা অথবা একটি স্থান হর্নমুক্ত ঘোষণা করা যেতে পারে এবং তা বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. আমজাদ হোসেন বলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৯.৬% জনগণ অর্থাৎ ১ কোটি ৩৪ লাখ মানুষ কোন না কোন ধরনের শ্রবণ হ্রাসজনিত জটিলতায় ভুগছে।
এই শ্রবণ হ্রাসের অন্যতম মূল কারণ শব্দদূষণ। শব্দদূষণ ক্রমাগত এক্সপোজার মানুষের শ্রবণ শক্তি কমিয়ে দেয়ার পাশাপাশি মানসিক অবসাদ তৈরি করে। চিকিৎসার চেয়ে শব্দদূষণ প্রতিরোধ আমাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
সভায় প্রকল্প সংশ্লিষ্ট তথ্যচিত্র উপস্থাপন করেন প্রকল্পের মাঠ সমন্বয়ক ইঞ্জিঃ মোঃ নাছির আহম্মেদ পাটোয়ারী। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সার্জেন্ট ও ট্রাফিকগণ, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীগন, ডাক্তার, বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, গাড়ি চালক, সামাজিক ও পরিবেশবাদি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা। উক্ত মতবিনিময় সভায় ট্রাফিকপুলিশ ও গাড়িচালকরা শব্দ দূষণ নিয়ে তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সংকট ও সমাধানের উপায় নিয়ে বিস্তর মতপ্রকাশ করেন।