তিনটি বই বাদ দিয়ে বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ দিতে সমস্যা কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এ প্রশ্নের উত্তর বিকেল ৩টার মধ্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও সভাপতিকে জানাতে বলেছেন আদালত। পরে এ বিষয়ে আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। বইমেলায় আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বে এই আদেশ দেন।
আদালতে গতকাল মঙ্গলবার রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক। গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বে রিটটি শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করে আদেশ দেন। তারও আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়। রিটে আদর্শ প্রকাশনীকে পাঠানো চিঠিতে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং কেন স্টল বরাদ্দ দেওয়া হবে না সেই মর্মে রুল জারিসহ নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও মেলার আয়োজকদের সভাপতিসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মো. মাহবুবুর রহমান বাদী হয়ে রিটটি দায়ের করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রিটকারীদের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, রিট আবেদনে আদর্শ প্রকাশনীকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশনীটিকে স্টল বরাদ্দ দিতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। মেলার পরিচালনা পর্ষদ (বাংলা একাডেমি) গত ১২ জানুয়ারি বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে যেখানে আদর্শ প্রকাশনীর নাম নেই। রিট আবেদনে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র একটি বইয়ের জন্য কাগজে-কলমে মেলায় পুরো প্রকাশনীর অংশগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অথচ সে বইটি ব্যান্ড বা ব্ল্যাকলিস্টেড নয়। তাদের এমন সিদ্ধান্ত ‘বাংলা একাডেমি আইন ২০১৩’ অনুযায়ী কোনো বৈধতা নেই। একই সঙ্গে প্রতি বছর একাডেমি থেকে যে নীতিমালা করা হয়, তারও ব্যত্যয় ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে বাংলা একাডেমি। তাদের এমন সিদ্ধান্ত সংবিধানে প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা পরিপন্থি।
রিটকারীরা জানান, অদ্ভুত ব্যাপার হলো এবার আদর্শ প্রকাশনীকে পাঠানো চিঠিতে স্টল বরাদ্দ না দেওয়ার কোনো কারণ দর্শানোরও প্রয়োজন মনে করেনি বাংলা একাডেমি, স্রেফ জানিয়ে দিয়েছে, ‘সবদিক বিবেচনা করে অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ পরিচালনা কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে আপনাদের প্রকাশনা সংস্থা আদর্শ’র অনুকূলে স্টল বরাদ্দ প্রদান না করার পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছে।’
শুধু তাই নয়, বইটি বাংলাদেশের অনলাইনে বই বিক্রির বৃহত্তম প্ল্যাটফর্ম রকমারি ডটকম থেকেও কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির মাধ্যমে বইটিকে ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলারও বাইরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৩০ জানুয়ারি সমিতির পক্ষ থেকে আদর্শ প্রকাশনীর প্রধান নির্বাহী মাহবুবুর রহমানের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ‘আদিষ্ট হয়ে আপনার সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে আপনার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘আদর্শ’ থেকে প্রকাশিত ‘বাঙালির মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’র লেখক ফাহাম আব্দুস সালামের বইটি ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তকমেলা-২০২৩ এ প্রদর্শন ও বিক্রয় করা থেকে বিরত থাকার জন্য বলা হলো।’ প্রশ্ন হলো, বইমেলা সংক্রান্ত নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বাংলা একাডেমি বইটিকে একুশে বইমেলা থেকে দূরে রেখেছে, কিন্তু পুস্তক প্রকাশক সমিতি কোন নীতিমালা বা এখতিয়ারবলে কলকাতা বইমেলায় বইটি বিক্রি ও প্রদর্শনী না করার নির্দেশনা দিল! পুস্তক প্রকাশক সমিতি অবশ্য লিখেছে, তারা ‘আদিষ্ট’ হয়ে এই নির্দেশনা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন হলো, পুস্তক প্রকাশক সমিতিকেই বা এই আদেশ কে দিল এবং কোন আইন বা নীতিমালাবলে দিল!