বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) গৌরবময় সেবার ৪৭ বছর পেরিয়ে ৪৮ বছরে পদার্পণ করছে। নানান আনুষ্ঠানিকতায় আজ শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) উদযাপিত হবে ডিএমপির ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস। ‘শান্তি শপথে বলীয়ান’ এ মূলমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে রাজধানী ঢাকার জননিরাপত্তা বিধান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে আসছে ডিএমপি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রতিষ্ঠার অভিব্যক্তি প্রকাশ ও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৬ সালে ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হওয়া বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ এ ইউনিট সময়ের পরিক্রমায় মহানগরবাসীর নিরাপত্তা বিধানে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
আজ শনিবার দুপুর ৩:০০ টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমালা। শোভাযাত্রায় ডিএমপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকল স্তরের পুলিশ সদস্য অংশগ্রহণ করবেন। শোভাযাত্রায় যুক্ত থাকবে ডিএমপির সুসজ্জিত অশ্বারোহী ও ব্যান্ড দল, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটসহ অন্যান্য ইউনিটের সদস্যরা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান এমপি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আমিনুল ইসলাম খান ও ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম-বার, পিপিএম উপস্থিত থাকবেন।
প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এমপি বিকাল ৪:০০ টায় কেক কেটে প্রতিষ্ঠা দিবসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স অডিটরিয়ামে বিকাল ৪:১৫ টায় ডিএমপির সার্বিক কার্যক্রমের ওপর একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হবে। এরপর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে সন্ধ্যা ৬:৩০ টায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা অভিনেতা, অভিনেত্রী, সংগীতশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী এবং ডিএমপি শিল্পীগোষ্ঠী অংশগ্রহণ করবেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীবর্গ, মহান জাতীয় সংসদের মাননীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সচিববৃন্দ, বিচার বিভাগের বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দ, সশস্ত্র বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দ, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ, সুশীল সমাজের সম্মানিত প্রতিনিধিগণ, বিভিন্ন রাষ্ট্রের সম্মানিত কূটনীতিকগণ, বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, সাবেক আইজিপিবৃন্দ ও কমিশনারবৃন্দ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, পুনাক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সম্মানিত নেতৃবৃন্দ ও প্রতিনিধিগণ, সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সম্মানিত প্রতিনিধিগণ, নাটক, চলচ্চিত্র ও সর্বোপরি বিনোদন জগতের শিল্পীবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্মানিত সাংবাদিকগণ, কমিউনিটি পুলিশিংয়ের নেতৃবৃন্দ, ৭১’সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জীবিত পুলিশ সদস্য ও আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা সরাসরি সম্প্রচার করবে এটিএন নিউজ এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে এটিএন বাংলা। ডিএমপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলেও প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানমালা সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন পত্রিকায় ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে। এছাড়া ডিএমপি সদরদপ্তর থেকে প্রকাশ করা হবে বিশেষ ম্যাগাজিন ‘আস্থা’। ডিএমপির প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মহমান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। ৪৮তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম নগরবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
বর্তমানে ডিএমপিতে ৫৭টি বিভাগ ও ৫০টি থানা রয়েছে। ১ জন পুলিশ কমিশনার, ৬ জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, ১২ জন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার, ৫৭ জন উপ-পুলিশ কমিশনারসহ প্রায় ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত রয়েছেন। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মেগাসিটি ঢাকায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস করেন। অনেক রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, কূটনৈতিক মিশনসমূহ, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এ মহানগরীতে অবস্থিত। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি অপরাধ প্রতিরোধ ও দমন, ভিআইপি গমনাগমন, নিরাপদ ব্যবসায় পরিবেশ নিশ্চিত করতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরবাসীর আস্থা ও নির্ভরতা অর্জনে সফল হয়েছে।
সাইবার অপরাধ ও জঙ্গি দমনসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে বাংলাদেশ পুলিশের সর্ববৃহৎ ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করছে। ২০২২ সালে ডিএমপি সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত ১৭১টি মামলায় ১১৫ জন, ৩৫টি মামলায় ৮৭ জন জঙ্গি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ১৬,০৩৫টি মামলায় ২১,৯৮০ জন, অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংক্রান্ত মামলায় ৪১০ জন, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত ২,০১০টি মামলায় ১,৭০৯ জন, ১৬৯টি চোরাচালান মামলায় শতাধিক আসামীকে গ্রেফতার করেছে।
এছাড়াও, ডিএমপি ২০২২ সালে ১৩ হাজার ২৯১.৫ কেজি গাঁজা, ৫৫ কেজি হেরোইন, ৪০ লক্ষ ৯৩ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা, ৫৬ হাজার ৭৯৪ ক্যান বিয়ার, ৫১ হাজার ২৫৭ বোতল ফেন্সিডিল, ৮ হাজার ২৫ বোতল বিদেশি মদসহ অন্যান্য নতুন নতুন ভয়ংকর মাদকদ্রব্য, ৬৫টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫২ রাউন্ড গুলি, ৪,২৬৮ কেজি বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী আইন অমান্যকারী যানবাহন ও চালকের বিরুদ্ধে ২০২২ সালে প্রায় ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ই-প্রসিকিউশন দায়ের ও প্রায় ৫৫ কোটি টাকা জরিমানা করেছে। ডিএমপির উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ২০২২ সালে ২,৩৭৭ জন নারী ও শিশুকে সেবা প্রদান করেছে। ঢাকা মহানগরীতে প্রতি রাতে বিভিন্ন পদমর্যাদার প্রায় ৮ হাজার পুলিশ সদস্য সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকেন। অপরাধ দমন ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের অংশ হিসেবে ঢাকা শহরে দেড় হাজারেরও অধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন ডিএমপির পুলিশ সদস্যগণ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এ অভিযাত্রায় ডিএমপি ডিজিটাল তথ্য-প্রযুক্তি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন করছে। ডিএমপিতে জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত ডায়নামিক রেসপন্স ইন্টিলিজেন্ট মনিটরিং সিস্টেম (ডিআরআইএমএস) ও সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিআইএমএস), সাসপেক্ট আইডেনটিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (এসআইভিএস), ফেস ম্যাচিং, সিআইএ ল্যাব, আইপি ট্র্যাকার, সাইবার বুলিং অ্যান্ড ক্রাইম মনিটরিং সিস্টেম, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সিসিটিভি মনিটরিং সিস্টেম, হ্যালো সিটি অ্যাপ, সিডিএমএস, পিআইএমএস, অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, কিউআরটি হটলাইন (০১৩২০০৪২০০৫) সেবা অব্যাহত রয়েছে। জনবান্ধব পুলিশিং প্রবর্তনের লক্ষ্যে শুরু করা বিট পুলিশিং ও কমিউনিটি পুলিশিং, ওপেন হাউস-ডে এবং উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা অর্জনের লক্ষ্য অর্জনে ডিএমপির ৩৪ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালনে সর্বদা অবিচল রয়েছেন।সর্বশেষ, তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় সহজে ও দ্রুত নাগরিক সেবা নিশ্চিতকরণে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে ডিএমপি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেটাভার্স, ওয়েব-৩ প্রযুক্তি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করে ঢাকা মহাগরবাসীর প্রত্যাশিত নাগরিক সেবা ও প্রযুক্তিনির্ভর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডিএমপি। উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত স্মার্ট বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ টিম ডিএমপি হবে ঢাকা মহানগরবাসীর গৌরবময় সেবা প্রদানের ‘স্মার্ট ডিএমপি’।