বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

আল্লাহর কুদরতের হাতে সৃষ্টি চার জিনিস

মুফতি মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম:
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

আল্লাহ তায়ালা অপার ক্ষমতার মালিক। পৃথিবীর সব কিছুর তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। তিনি কোনো কিছু সৃষ্টি করার ইচ্ছা করলে (হও) বললেই সাথে সাথে হয়ে যায় (সূরা আল বাকারা-১১৭, সূরা আলে ইমরান-৪৭, সূরা মারইয়াম-৩৫, সূরা ইয়াসিন-৮২) আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: বলেন, কেবল চারটি জিনিস আল্লাহ তায়ালা কুদরতের হাতে সৃষ্টি করেছেন। এগুলো হলো- ১. আদম; ২. আরশ; ৩. জান্নাতে আদন ও ৪.কুরসি।
১. আদম : মানবজাতির আদি পিতা হলেন হজরত আদম আ:। আদম ও হাওয়া থেকে সব মানুষের সৃষ্টি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘আর যখন তোমার রব ফেরেশতাদের বললেন, নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করব। তারা বলল, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার গুণগান করছি এবং পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আল্লাহ বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা অবগত নও।’ (সূরা আল বাকারা-৩০) আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেন- ‘হে মানবম-লী! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে একই ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তদীয় সহধর্মিণী সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের উভয় হতে বহু নর ও নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সূরা বাকারা-১) আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন- ‘দয়াময় আল্লাহ, তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, তিনিই সৃষ্টি করেছেন মানুষ।’ (সূরা আর রাহমান : ১-৩) আরো ইরশাদ করেন- ‘তুমি পাঠ করো তোমার রবের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে রক্তপি- থেকে।’ (সূরা আলাক : ১-২)
মহানবী সা: বলেন, মাটি থেকে আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন- ‘হে ইবলিস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি তার প্রতি সাজদাবনত হতে তোকে কিসে বাধা দিলো? তুই কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলি, নাকি তুই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন?’ (সূরা সাদ-৭৫) আল্লাহ তায়ালা যখন হজরত আদম আ:-কে সৃষ্টির মনস্থ করলেন, তখন ফেরেশতাদেরকে সমগ্র পৃথিবী থেকে মাটি আনতে বললেন। মাটি আনা হলে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে মাটি দিয়ে খামির তৈরি করেন। এ খামির দিয়ে ৬০ হাত দৈর্ঘ্য আদমের আকৃতি তৈরি করেন। অতঃপর সূর্যতাপে তা শক্ত হয়ে যায়। তারপর আবার বৃষ্টিতে তা নরম হয়ে যায়। অতঃপর রুহ ফুৎকার করা হয়। আল্লাহ বলেন- ‘অতঃপর যখন তাকে (আদমকে) পরিপূর্ণ আকৃতি দান করব এবং তার মধ্যে আমার রুহ থেকে ফুঁকে দেবো, তখন তোমরা তাকে সেজদা করবে।’ (সূরা হিজর-২৯)
মহানবী সা: বলেন, ‘হাশরের মাঠে যখন লোকেরা হজরত আদম আ:-এর নিকট গিয়ে বলবে, হে আদম! আপনি সব মানবজাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার রুহ থেকে আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন।’ (সহিহ বুখারি-৩৩৪০, সহিহ মুসলিম-১৯৪) ইমাম দারেমি বলেন, আল্লাহ নিজ হাতে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোনো প্রাণীকে তাঁর হাত দিয়ে সৃষ্টি করেননি। এ কারণে আদমকে বিশেষিত করেছেন, মর্যাদা দিয়েছেন ও সম্মানিত করেছেন।’ (দারেমি)
২. আরশ : আরশ অর্থ সিংহাসন। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব হলেন সেই আল্লাহ যিনি আসমান ও জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের ওপর সমাসীন হন।’ (সূরা আল আরাফ-৫৪, সূরা আল ইউনুস-৩, সূরা আর রা’দ-২, সূরা আত তাহা-৫, সূরা আল ফুরকান-৫৯, সূরা আস সিজদা-৪, সূরা আল হাদিদ-৪) আরো ইরশাদ করেন- ‘আর তিনি এমন সত্তা, যিনি সমস্ত আসমান-জমিনকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সময় তার আরশ পানির ওপর ছিল।’ (সূরা হুদ-৭)
হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে আরশকে আল্লাহ তায়ালা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা ‘আরশের ওপর সমাসীন’ উক্তিটি মুতাশাবিহাত। কেননা, আরশ বলতে নির্দিষ্ট সিংহাসন নয়। কেননা, নির্দিষ্ট সিংহাসনে সমাহীন হলে- সামনে কোন দিকে, পেছন কোন দিকে, ডান কোন দিকে, বাম কোন দিকে ইত্যাদি প্রশ্ন দেখা দেয়। তা ছাড়া আল্লাহর আকার-আকৃতি আছে বলে বিশ্বাস করতে হয়।
৩. কলম : মুফাসসিরগণ বলেন, কলম দিয়ে ওই কলমকে বোঝানো হয়েছে যা দিয়ে আসমান-জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর আগে তাকদির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। মহানবী সা: বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর কলমকে বলেন, লিখো। কলম বলল, হে আমার রব! আমি কী লিখব? আল্লাহ বললেন, লিখো আমার আইনসমূহ এবং পৃথিবী ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে।’ (আহমাদ-৫/৩১৭, তিরমিজি- ৯/২৩২)
৪. জান্নাতে আদন : আটটি জান্নাতের মধ্যে একটি হলো- জান্নাতে আদন। জান্নাত অর্থ বাগান, আর আদন অর্থ অনন্ত সুখ-শান্তি। সুতরাং জান্নাতে আদন অর্থ অনন্ত সুখ-শান্তির বাগান।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- ‘জান্নাতে আদন যার পাশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আর এটি পাবে ওই সব ব্যক্তি যারা নিজেকে পবিত্র রাখে।’ (সূরা ত্বহা-৭৬) কুরআন মাজিদের ১১টি সূরায় জান্নাতে আদনের বর্ণনা রয়েছে। হজরত আনাস রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, মহানবী সা: বলেছেন, ‘আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে আদন সৃষ্টি করার পর তার গাছসমূহ নিজ হাতে রোপণ করেন। তখন জান্নাতে আদন বলেছে, ‘কাদ আউল্লাহাল মুমিনুন’- মুমিনরা সফলকাম হয়েছে।’ (কুরতুবি, সূরা আল মুমিনুন ) ইমাম দারেমি বর্ণনা করেছেন, আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম আ:, তাওরাত এবং জান্নাতে আদন নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। আর জান্নাতে আদনের গাছসমূহ নিজ হাতে লাগিয়েছেন।’(নাকযুদ দারেমি, পৃষ্ঠা-৯৯)। লেখক : প্রধান ফকিহ, আল-জামিয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com