সাধারণ কথায়, সম্পদকে নগদ অর্থে রূপান্তর করার ক্ষমতাই মুদ্রার তারল্য। ব্যাংকের ক্ষেত্রে তারল্য হলো আমানতকারীদের যেকোনো মুহূর্তে তার সম্পদ নগদ অর্থে রূপান্তর করার ক্ষমতা। বাংলাদেশে বর্তমানে ডলার এবং টাকা দু’টিরই তারল্য সঙ্কট রয়েছে। এই দু’টি মুদ্রার মধ্যে টাকার তারল্য ব্যবস্থাপনা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে; মুদ্রানীতির মাধ্যমে। অন্য দিকে ডলারের তারল্য সঙ্কট বৈদেশিক মুদ্রার আয়-ব্যয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশের অর্থনীতি অনেক বছর ধরেই সঠিকভাবে ডলার ও টাকা দু’টিরই তারল্য ব্যবস্থাপনা করে যাচ্ছিল। তবে তিন বছর ধরে কোভিড-১৯ ও পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো বৈশ্বিক ঘটনার প্রভাবে টালমাটাল দেশের অর্থনীতি; বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের দাম। কমে যায় প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স)। তার ওপরে রয়েছে অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনা। ঠিক সময়ে যথাযথ নীতি প্রণয়ন করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়। যেমন ২০১৯ সালের আমদানি ব্যয় চার হাজার ৯০০ কোটি ডলার থেকে বেড়ে ২০২২ সালে আট হাজার ৯০০ কোটি ডলারে উন্নীত হওয়ার পর সরকারের হুঁশ ফিরেছে। এতে ২০২২ সালে প্রতি ডলারের সঙ্কট তীব্র হয়; দাম বেড়ে যায় প্রায় ২৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেও ডলার সঙ্কট মিটাতে পারছিল না। ব্যাংক ও প্রচলিত বাজারে ডলারের দামে ব্যাপক পার্থক্য দেখা দেয়। ফলে হুন্ডির প্রভাব বেড়ে যায় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায়। কঠিনভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও মেটেনি ডলার-সঙ্কট। ব্যবসায়ীরা নিজের আয়ই ব্যাংক থেকে ডলারে ফেরত পাচ্ছেন না। আবার পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ফিরিয়ে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
ডলার সঙ্কটের প্রভাব টাকায়
ডলারের সঙ্কটের ফলে টাকাও সঙ্কটে পড়ে যায়; দেখা দেয় টাকার তারল্য সঙ্কট। কারণ ব্যাংকগুলোকে টাকা দিয়ে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়। আবার ব্যাংকগুলো যে পরিমাণে ঋণ বিতরণ করছে, আমানত জমা হচ্ছে তার অর্ধেক। আমানতের সুদ এখন মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম বলে অনেকেই ব্যাংকে টাকা রাখছে না। দুর্নীতির মাধ্যমেও অনেক টাকা ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। কয় মাস আগে ইসলামি ধারার পাঁচ ব্যাংকের অনিয়ম আলোচনায় আসায় গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে পুরো ব্যাংক খাতের আমানত কমে যায়। মজার বিষয় হলো, যারা ব্যাংক খাতে এ অবস্থার জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বরং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যাংকগুলোকে বেইল আউট করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে জনগণের ধারণা হয়েছে যে, এসব দুর্নীতির সাথে ক্ষমতাসীনরা জড়িত। ফলে আস্থা কমে যাচ্ছে ব্যাংকের উপরে। এ জন্য ডলারের পর টাকার সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে সাময়িক সমাধান করার চেষ্টা করা হলেও আবার একই সমস্যায় ফিরবে। কারণ দেশ থেকে ডলার পাচার হয়েছে, আর টাকা ব্যাংকের বাইরে চলে গেছে।
ডলার ও টাকার তারল্য ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় মাঝে মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিআরআর রাখতে পারছে না ইসলামী ধারার পাঁচ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। জরুরি চাহিদা মিটাতে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ১০ শতাংশ সুদেও টাকা ধার করছে। কলমানি মার্কেটেও সুদহার বাড়ছে। ১৪ দিন মেয়াদের জন্য টাকা ধারে সুদ ১০ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে রেপোর মাধ্যমে টাকা ধার দিচ্ছে। প্রয়োজনে বিশেষ তারল্য সহায়তাও দিচ্ছে। এতে সুদহার ধরছে ৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ এক বছর আগে যা ছিল ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। এর বাইরেও বিশেষ ব্যবস্থায়, ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে তারল্য সহায়তা দেয়া হয়েছে পাঁচ ইসলামী ব্যাংককে। এত সুদে আমানত নিয়ে তারা কিভাবে ব্যবসা করছে, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বেড়েছে ট্রেজারি বিলের সুদের হারও।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে তারল্যের এই পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা পূর্ব অনুমেয় ছিল। একক কোনো সিদ্ধান্তে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাবে না। কারণ এটি ডলারের সাথে সম্পর্কিত। এখন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে শুধু উৎপাদনশীল খাতকে বেছে নিতে হবে। আর তদারকি আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়াতে হবে। সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে সুদহারের ৯ শতাংশের ক্যাপ থাকায় আমানতের সুদ বাড়াতে পারছিল না ব্যাংকগুলো। ফলে বর্তমান মুদ্রানীতিতে নয়ছয় সুদের ক্যাপ শিথিল করেছে। ফলে তারল্য সঙ্কট আপাতত কমবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল আশা করছেন।
টাকার সঙ্কট হয় যেভাবে
প্রশ্ন হলো, ডলার সঙ্কট না হয় আমদানি বেড়ে যাওয়া, হুন্ডির কারণে ডলার দেশে না আসা অথবা রফতানি কমে যাওয়ার কারণে হয়; কিন্তু টাকার সঙ্কট কিভাবে হলো? টাকা তো বিদেশে পাচার হয় না, অন্যদেশে চলে না; সুতরাং টাকা তো দেশেই থাকার কথা। হ্যাঁ, টাকা দেশেই আছে তবে টাকার মূল্য এক বছরে প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় প্রকৃত টাকা কমে গেছে। ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাওয়ায় বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ, এমনকি অনেক ক্ষুদ্র আমানতকারীও টাকা সিস্টেম থেকে বের করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রেখেছে। উল্লেখ্য, মানুষ ব্যাংকে যে টাকা আমানত হিসেবে জমা রাখে, ব্যাংক তাই ঋণ হিসেবে বিতরণ করে থাকে। ব্যাংক খাতে গত সেপ্টেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত নভেম্বরে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে হয় ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ ও ঋণের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ফলে ব্যাংকে যে আমানত জমা হচ্ছে, তার চেয়ে ঋণ যাচ্ছে অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি খরচ মেটাতে অনেকে সঞ্চয় ভেঙে ফেলছেন। এর ফলে গত ডিসেম্বরে শুধু একটি ইসলামি ধারার একটি ব্যাংকেরই আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা। গত অক্টোবরে ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ৯০ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, গত নভেম্বরে যা তিন হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা কমে হয় ১৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা।
বাড়তি দামে ডলার কেনা, রেমিট্যান্স কেনা, রপ্তানি বিল নগদায়নে গ্রাহকদের বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। আবার ব্যবসায় মন্দার কথা বলে ব্যবসায়ীরাও ঋণ পরিশোধ কমিয়ে এনেছেন। ফলে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোতে তারল্যের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে আমানতকারী, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান টাকা জমা রাখে। এই অর্থ সংগ্রহে ব্যাংকগুলো যতটা সম্ভব আমানতের সুদ বাড়িয়েছে। যে ব্যাংক যত দুর্বল ও অর্থের প্রয়োজন যত বেশি, সুদও তত বেশি। কিছু ব্যাংক আমানত আনছে সাড়ে ৮ শতাংশ পর্যন্ত সুদ দিয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে।
ট্রেজারি বিলে সুদ বাড়ছে। গত এক বছরে ডলার বিক্রির কারণে এক লাখ কোটি টাকার বেশি বাংলাদেশ ব্যাংকে চলে যায়, ফলে তারল্য অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। ব্যাংকগুলো যে যেভাবে পারছে তারল্য ব্যবস্থাপনা করছিল। তবে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় মুদ্রানীতিতে ঋণের নয়ছয় সুদের হারের ক্যাপ শিথিল করেছে। ফলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
ব্যাংকে জমা, টাকার নিরাপত্তার জন্য প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে তার ১৭ শতাংশ অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে সিআরআর ও এসএলআর হিসেবে জমা রাখতে হয়। ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলোকে জমা রাখতে হয় সাড়ে ৯ শতাংশ অর্থ। প্রচলিত ধারার ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের ৮৭ টাকা ও ইসলামী ধারার ব্যাংক ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারে। ব্যাংকগুলোর কাছে গত অক্টোবরে অতিরিক্ত তারল্য ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। তবে গত অক্টোবরে দেশে ছাপানো টাকা সহ রিজার্ভ মানির পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। আমরা জানি, যে দেশের নগদ টাকা ও ব্যাংকের বাইরে টাকার পরিমাণ যত কম, সেই দেশের অর্থনীতির গতি তত বাড়ে। ব্যাংকের বাইরে টাকা থাকলে তা অর্থনীতিতে কার্যকর ভূমিকা রাখে না, বিনিয়োগ হয় না, কর্মসংস্থান বাড়ে না।
ব্যবসায় ডলার সঙ্কটের প্রভাব
ডলার সঙ্কটের কারণে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার গত বছরের প্রথম কোয়ার্টার থেকেই। পরিস্থিতি এখন এমন অবস্থায় পৌঁছিয়েছে যে, এখন আর আমদানি নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং আমদানি করতেই পারছে না অনেক জরুরি পণ্যও; এমন কিছু উদাহরণ এখানে টানা হলো। রোজার পণ্যের ঘাটতি এড়াতে আগেভাগেই পণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলেছে ব্যবসায়ীরা। অথচ অন্তত তিনটি জাহাজের পণ্য খালাস করতে পারছে না। একটি জাহাজ মালয়েশিয়া থেকে এক কোটি ২৪ লাখ ডলার মূল্যে প্রায় ১২ হাজার টন পাম তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে দেড় মাস আগে; পণ্য খালাস করতে পারেনি এখনো; প্রতিদিন প্রায় ১৬ হাজার ডলার জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ব্রাজিল থেকে ৬০ হাজার ৫০০ টন চিনি নিয়ে আরেকটি জাহাজ বন্দরে পৌঁছায় কিন্তু, ডলার সঙ্কটে ঋণপত্রের দায় পুরোপুরি পরিশোধ করতে পারেনি। প্রতিদিন ৪০ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হচ্ছে আমদানিকারককে। ডলার সঙ্কটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ। মূলত কয়লা সঙ্কটের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে শীতকালেও রাজধানী ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং হচ্ছে। সুতরাং গ্রীষ্মকালে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়।
ডলার সঙ্কটের কারণে ওষুধ শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন ওষুধ প্রস্তুতকারীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় ওষুধ প্রস্তুতকারীরা চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৬৫ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল আমদানির জন্য এলসি খুলেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। একইভাবে ওষুধ উৎপাদন খাতে ব্যবহৃত মূলধনী যন্ত্রপাতির জন্য গত জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে এলসির পরিমাণ ৩৫ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৬৫ দশমিক ১৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ওষুধ উৎপাদকরা ঠিক সময়ের মধ্যে ওষুধ রফতানি করার বিষয়ে উদ্বিগ্ন। ডলার সঙ্কটে দেশে টাকা পাঠাতে না পেরে ফ্লাইট কমাচ্ছে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলো। এতে টিকিটপ্রতি ১৫-২০ শতাংশ লোকসান হচ্ছে। ডলারের সঙ্কটে জ্বালানি ক্রয় করতে হিমশিম খাচ্ছে তারা। টিকিট বিক্রির দুই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আটকে গেছে। এভিয়েশন ও পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ধসের আশঙ্কা। এই পাঁচটি সেক্টরের সঙ্কট কিছু উদাহরণ মাত্র; মূলত সব সেক্টরই ধীরে ধীরে সঙ্কটে পড়ে যাচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার সালেহউদ্দিন আহমেদ এর মতে, ২০২৩ সালের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জিডিপি-মুদ্রাস্ফীতির ভারসাম্য অর্জন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তিনটি জিনিস প্রয়োজন। প্রথমত সক্ষমতা, যেটি সন্তোষজনক নয়। এ ছাড়া প্রয়োজন স্বচ্ছতা ও সুশাসন।’ পরিকল্পনামন্ত্রীর মতে, অন্যান্য ছোট দেশের মতো বাংলাদেশও জনশক্তি দিয়ে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের এ সময়ে টিকে থাকতে পারবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনশক্তিতে শক্ত অবস্থান আছে। তাই বৈশ্বিক সঙ্কটে হয়তো আমরা অতোটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো না।’ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ‘নিয়ম, পরিসংখ্যান এবং জনশক্তি ব্যবস্থাপনা হলো ইকোনমিক গভর্নেন্সের তিনটি পিলার। ব্যাংকিং খাতে নিয়ম আছে ঠিকই; কিন্তু যে সেটি প্রয়োগ করে, সে হয়তো ঠিকভাবে তা করছে না। এই খাতের পুরো অবস্থা বুঝতে গভর্নেন্সকে ভালোমতো ব্যাখ্যা করতে হবে।’ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণ মঞ্জুর করেছে; এতে কিছুটা স্বস্তিতে সরকার। মোট সাত কিস্তিতে প্রতিশ্রুত অর্থের প্রথম কিস্তি ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ৩১ হাজার ডলার পাওয়া গেছে ইতোমধ্যে। দেশের প্রয়োজনের তুলনায় এই ঋণ খুবই সামান্য হলেও অর্থনীতির ক্রান্তিকালে এ ঋণ দিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় একধরনের দম পাবে সরকার। আস্থা বাড়বে অন্যান্য সাহায্য বা ঋণ দানকারী সংস্থার। অন্য দিকে দেশীয় মুদ্রার ক্ষেত্রে, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দিয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা; এতে তারল্য সঙ্কট কিছুটা হলেও কমবে। চলতি মুদ্রানীতিতে নয়ছয় সুদহারের ক্যাপ শিথিল করাও তারল্য সঙ্কট মোকাবেলায় সহায়ক হবে, তবে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সঙ্কট মোকাবেলা মুদ্রাস্ফীতির ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং টাকা না ছাপিয়ে বরং ব্যাংকিং সিস্টেমের বাইরে যে টাকা চলে গেছে সেই টাকা সিস্টেমে নিয়ে আসা এবং বিদেশে পাচারকৃত ডলার দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে ডলার ও টাকা উভয় মুদ্রার সঙ্কট কাটবে। ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন ফিরিয়ে এনে অর্থনীতির ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। লেখক : অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও কলামিস্ট ইমেইল :mizan12bd@yahoo.com