জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে উদ্বোধন করা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অবস্থান বরিশালে। নগরীর সার্কিট হাউজের উত্তর পাশে জাজেস কোয়ার্টারের সামনে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ৬০ শতক জমির উপর প্রায় সাড়ে তিন হাজার স্কয়ার বর্গফুটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি তৈরি করা হয়। “ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান-” যে শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা অর্জ্জিত হল তাঁদের স্মৃতি চিরভাস্বর হয়ে থাক। চিরঅম্লান এ বাণী নিয়ে ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বরিশাল সফরকালে এই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর উদ্বোধণ করা দেশের একমাত্র শহীদ মিনারের উদ্বোধনী ফলকে জাতির পিতার চিরঅম্লান ওই বাণীটি নানাকারনে স্থাপন করা হয়েছিলো মিনারের পেছনে লোক চক্ষুর আড়ালে। প্রতিবছর ভাষার মাসে সেখানে নানা আনুষ্ঠানিকতা হলেও শহীদ মিনারটি ছিলো অবহেলিত। দীর্ঘদিন পরে হলেও বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজরীত বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরটি নতুন প্রজন্মের কাছে সুন্দরভাবে উপস্থাপন ও তুলে ধরার জন্য সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে সংস্কারসহ চত্বর উন্নয়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধন শেষে উদ্বোধণ করা হয়েছে। শহীদ মিনার চত্বরে বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে উদ্বোধণ করেন। পরে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিটি মেয়র বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে উদ্বোধণ করা শহীদ মিনারের সংস্কারসহ চত্বর উন্নয়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। এটা আমার সৌভাগ্য এবং গর্বের বিষয়। বিষয়টা শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এটা আমাদের ভাষার বিষয়, জাতিগত বিষয়। এগুলোর মধ্য থেকেই আজকে নতুন প্রজন্ম ও ভবিষ্যত প্রজন্ম অতীত ইতিহাস জানতে পারবেন। মেয়র আরও বলেন, শুধু অবকাঠামোগত পরিবর্তন করলেই হবেনা। আমাদের মানসিকতার জায়গাটা পরিবর্তন করতে হবে। নয়তো কোনো পরিবর্তনই কাজে আসবে না। আমি এই কাজের জন্য কৃতিত্ব চাই না। এটা সুন্দর মতো হয়েছে, এটাই আমার সব থেকে বড় সার্থকতা। সিটি মেয়র বলেন, বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে নতুন অবয়ব দিয়েছি। এখানে শুধু শহীদ মিনারের উন্নয়ন এবং সৌন্দর্যবর্ধন নয়। এখানে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। এখানে শিশুদের জন্য একটি পার্ক নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মেয়র বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া শহীদ মিনার আমার হাতে সম্পূর্ণ হলো, এর চেয়ে বড় সৌভাগ্য আর কী হতে পারে! সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সহযোগিতায় ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ। সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় উদ্বোধণী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসাইন, রেঞ্জ ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, মেয়রপতœী লিপি আব্দুল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, বিএম কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালের ৩ জানুয়ারি বরিশালের দক্ষিণ সদর রোডের পাশে পরিত্যক্ত জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। তৎকালীন সময়ে বরিশাল সফরে এসে নিজ হাতে এই শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্থর উদ্বোধণ করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।