বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০৭ অপরাহ্ন

টাকা তোমার পকেট আমার

জিআরএম শাহজাহান (আদমদীঘি) বগুড়া :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

খবরে প্রকাশ, বিদায়ী অর্থ বছরে দেশের ব্যাকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা। দেশে মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমান ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। তার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমান ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। গত মাসে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে দেশের মাত্র শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির তালিকা প্রকাশ করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, শীর্ষ ২০ ঋণখেলাপির মোট ঋণ ১৯ হাজার ২৮৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা, যার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৮৭ কোটি ৯২ লাখ টাকাই খেলাপি।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে
প্রশ্নোত্তর পর্বে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল এ তথ্য উপস্থাপন করেন।
সরকারি দলের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী দেশের মোট ঋণ খেলাপির সংখ্যাও সংসদকে জানিয়েছেন। তার উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট ঋণ খেলাপির সংখ্যা ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৬৫ জন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শীর্ষ ২০ ঋণ খেলাপির মধ্যে ১। সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৭৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ২। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৫২৯ কোটি টাকা। ৩। রিমেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ৭৭ কোটি টাকা। এদের পুরোটাই খেলাপি ঋণ। ৪। রাইজিং স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৪২ কোটি টাকা, যাদের খেলাপি ঋণ ৯৯০ কোটি টাকা।
৫। মোহাম্মদ ইলিয়াস ব্রাদার্স (প্রা.) লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৯৬৫ কোটি টাকা। তাদের পুরোটাই খেলাপি। ৬। রূপালী কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ সমান, ৮৭৩ কোটি টাকা। ৭। ক্রিসেন্ট লেদারস প্রডাক্ট লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমান ৮৫৫ কোটি টাকা।
৮। কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেমস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমান ৮১১ কোটি টাকা। ৯। সাদ মুসা ফেব্রিক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৩১ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭৭৬ কোটি টাকা খেলাপি।
১০। বি আর স্পিনিং মিলস লিমিটেডের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭২১ কোটি টাকা। ১১। এস.এ অয়েল রিফাইনারী লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৭২ কোটি টাকা। তাদের খেলাপির পরিমাণ ৭০৩ কোটি টাকা। ১২। মাইশা প্রপ্রাটি ডেভোলমেন্ট লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৮৬ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ৬৬৩ কোটি টাকা। ১৩। রেডিয়াম কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৭৭০ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৬০ কোটি টাকা খেলাপি।
১৪। সামান্নাজ সুপার অয়েল লিমিটেডের ঋণের স্থিতি এক হাজার ১৩০ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৫১ কোটি টাকা। ১৫। মানহা প্রিকাস্ট টেকনোলজি লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৪৭ কোটি টাকা। ১৬। আশিয়ান এডুকেশন লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬৫৩ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৬৩৫ কোটি টাকা। ১৭। এস.এম স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৮৮ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬৩০ কোটি টাকা।
১৮। এ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৮৭২ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬২৩ কোটি টাকা। ১৯। এহসান স্টিল রি-রোলিং লিমিটেডের ঋণের স্থিতি ৬২৪ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণ ৫৯০ কোটি টাকা এবং ২০। সিদ্দিকী ট্রেডার্স-এর ঋণের স্থিতি ৬৭০ কোটি টাকা। তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫৪১ কোটি টাকা।
এবার মূল কথায় আসা যাক, আমি অর্থনীতির ছাত্র নই। তবে খবরাখবরে যা দেখি তা হলো, ব্যাংকপাড়ার লুটপাট, কেলেঙ্কারী, অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রায় সকলেই জানে। খেলাপি ঋণ কী? অর্থনীতির ভাষায় এ ব্যাপারে নানা ধরনে সজ্ঞা দেয়া আছে। আসল বিষয় হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার আরেক নাম ঋণ খেলাপি। ধারণা করি আত্মসাতের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রের বা জনগণের কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দিলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ে।
এসব ঋণ খেলাপির সকলেই রাঘব বোয়াল।
যে দেশে পাঁচ-দম হাজার টাকার কৃষি ঋণের জন্য ব্যাংক কৃষকের কোমরে দড়ি লাগায়, সেখানে ওই খেলাপি ঋণের টাকা আদায়ের ব্যাপারে ব্যাংকগুলো কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে সে ব্যাপারে কিছুই বলেননি। সত্য কী মিথ্যা জানি না, ইদানিং ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক লুটপাটের খবর চাউর হয়েছে। ব্যাংকখাতে লুটপাটের ঘটনা নতুন নয়। প্রতিটি ব্যাংকেই ব্যাংকের পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়মের পাহাড় জমেছে। বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের গবেষণঅ বলছে, ব্যাংকিংখাতে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে নব্বই শতাংশই ব্যাংকের নিজেদের লোকজন জড়িত। মালিকপক্ষ, পরিচালনা পর্ষদ, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লুটপাটে জড়িত, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দেওয়ার মতলবে এরাই ইচ্ছে করে পরবর্তীতে ঋণ খেলাপি সাজে। সূত্র বলছে, বিভিন্ন ব্যাংকের পরিচালকরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ঋণ নিয়ে নেয়। অর্থাৎ তুমি আমার ব্যাংক থেকে ঋণ নাও, আমি তোমার ব্যাংক থেকে ঋণ নেবো।
খেলাপি ঋণের ব্যাপারে কোর্টে মামলা হয়। খেলাপিরা কোর্ট থেকে ওই মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে আবারও ঋণ নেয়। সূত্র আরো বলছে, ঋণের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ঋণদাতা ও ঋণ গ্রহিতা একই চক্র। ভুয়া ব্যক্তি এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণের পাহাড় জমেছে। মূলত টাকা লোপাট করাই এদের আসল উদ্দেশ্য। ঋণ খেলাপিরা বেশী চাপে পড়লে অবলোপনের সুযোগ নেয়।
ব্যাংকের নানা রকম কেলেঙ্কারী ও টাকা আত্মসাতের পরও কিছুতেই অনিয়ম-দুর্নীতি থামছে না।
হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, ফার্মার ও বেসিক ব্যাংকের উদাহরণ সামনে থাকার পরও কীভাবে ব্যাংকে অনিম-দুর্নীতির মাত্রা বাড়ছে সেটি হয়ত কারো জানা নেই।
খেলাপি তারা, যারা ব্যাংকের কাছে তথ্য গোপন করে ঋণ নেয়, বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষও জানে। খেলাপিরা এক ব্যবসার নামে টাকা নিয়ে অন্য জায়গায় সরিয়ে ফেলে। কেউ কেউ ঋণ নিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়, বাড়ি-গাড়ি করে। এরা জানে ব্যাংকের ঋণ শোধ করা লাগবে না।
অনেকে বলতে পারেন, ব্যাংকের টাকা লোপাট হলে আমার কী? মনে রাখতে হবে ব্যাংকের টাকা লোপাট হলে আমানতকারীদের টাকা রাষ্ট্রকেই ফেরত দিতে হবে।রাষ্ট্র জনগণকে সেই গ্রান্টি দিয়েছে। জনগণের টাকা নিজেদের পকেটে নিয়ে যারা খেলাপি হচ্ছে, তাঁদের উদ্দেশ্য আত্মসাত ছাড়া কিছু নয়। হিসাব করে দেখেন, খেলাপির ওই ১৭ হাজার কোটি টাকা আদায় না হলে ১৭ কোটি পাবলিকের কাঁধে বর্তাবে। অর্থাৎ কী-না আপনাকে-আমাকেও ওই ঋণের ভাগের ১ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com