বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সংবিধান জনগণের জন্য, দেশের জন্য, কোনো ব্যক্তি বা দলের জন্য নয়। সংবিধান আল্লাহ প্রদত্ত কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সকল কারাবন্দিদের মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, সংবিধান কুরআন-বাইবেল-গীতা বা আল্লাহ প্রদত্ত কোনো ধর্মগ্রন্থ নয় যে এটা পরিবর্তন করা যায় না। সংবিধান পরিবর্তন করা যায়। ৭২ সালে যে সংবিধান তৈরি হলো তার কিছুদিন পরেই আপনারা পরিবর্তন করলেন। দ্বিতীয় সংশোধন করলেন, তৃতীয় সংশোধন করলেন, চতুর্থ সংশোধনের মধ্য দিয়ে আপনারা গণতন্ত্র ব্যবস্থা বিলুপ্ত করে এক নেতার দেশ শাসনের ব্যবস্থা করলেন। গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করলেন, সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লোকেরা বলছে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নেই, কিন্তু সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ১৯৯৫-৯৬ সালেও ছিল না। তখন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলাম এই তিনটি দল মিলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই তারা সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। সংঘবদ্ধ কারণে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন হয়, ওই নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে সরকার গঠন করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংযুক্ত করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। ওই নির্বাচনে সকল দল অংশগ্রহণ করে- এটা আপনাদের মনে থাকার কথা। সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, যদি সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলতো তাহলে দিনের ভোট রাতে হতো না।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, আমাদের দাবি একটাই- একটি নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা বর্তমান সরকার। সেই কারণেই এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, এই নির্বাচন কমিশনকে বিদায় হতে হবে এবং অভিজ্ঞসম্পন্ন লোকদের দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, এই সরকারের অধীনে মানুষ ভোট করতে বিশ্বাস করে না। আপনারা ভোট চোর, ভোট ডাকাত। তাই আপনাদের মানুষ বিশ্বাস করে না। আপনাদের অধীনে কোনো ভোট হবে না। বাংলাদেশে যদি নির্বাচন ব্যবস্থা রাখতে চান, তাহলে প্রধানমন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করুন।
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, এখনো সময় আছে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা করুন। স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। আমরা গণতান্ত্রিক পর্যায়ে সম্পূর্ণ কর্মসূচি পালন করছি, জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করছি, জনগণ রাস্তায় নামছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় আপনারা বাধা দিচ্ছেন, হামলা করছেন। গতকাল আমাদের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম, জাসাসের আহ্বায়ক চিত্রনায়ক হেলাল খান, সদস্য সচিব জাকির হোসেন রোকন, যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত আলী, মো: জাকির হোসেন ও জাহেদুল আলম হিটো প্রমুখ বক্তব্য দেন।