দুই শক্তিশালী প্রতিবেশী সৌদি আরব ও ইরান আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াইয়ে লিপ্ত ছিল, একই সময়ে সৌদি আরব ও আমিরাতের একসময়ের দুই প্রিন্স মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্ব দেয়ার প্রতিযোগিতা চালায়। এখন দুই বন্ধুই চুপচাপ। ইরান-সৌদি রাজনৈতিক বিরোধে ধর্মকেও টেনে এনে শিয়া-সুন্নির রঙে রাঙানো হয়। সৌদি আরব, আমিরাত, ওমান, ইয়েমেন, মিসর, জর্দান ও সিরিয়া প্রধানত সুন্নি অধ্যুষিত দেশ। অন্য দিকে ইরান ও ইরাকে রয়েছে প্রচুর শিয়া মুসলমান। সৌদি আরব ইসলামের জন্মস্থান হওয়ায় নিজেকে মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসেবে দেখে। ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ী হওয়ায় সৌদিদের এই ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ইরানে শাহ আমলের ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ঘাঁটি অপসারিত হয়; তখন থেকেই পশ্চিমা শক্তি সৌদি আরবকে ইন্ধন জোগায়, সাহায্য সহযোগিতা দিতে থাকে। গত ১৫ বছরে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যকার পার্থক্য বিভিন্ন ইস্যুতে ও ঘটনার মাধ্যমে তীক্ষ্ম হয়ে ওঠে।
২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন সাদ্দাম হোসেনকে উৎখাত করে। তিনি ইরানের প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন। এটি বাগদাদে শিয়া অধ্যুষিত সরকার প্রতিষ্ঠার পথ খুলে দেয়। ২০১১ সালের দিকে পুরো অঞ্চলজুড়ে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। ইরান ও সৌদি আরব এ পরিস্থিতিকে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যবহার করতে থাকে। ইরান ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত একটি স্থল করিডোরের নিয়ন্ত্রণ অর্জনের চেষ্টা শুরু করে। উপসাগরীয় এলাকা বিরোধ ও ঘৃণায় উত্তপ্ত হয়ে পড়ে। কেননা ইরান প্রায় সব ক্ষেত্রেই বিজয় লাভ করতে থাকে। আসাদকে ইরান ও রাশিয়ার সমর্থনের কারণে সৌদি আরব সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো একে একে পরাজিত হতে থাকে। তরুণ ও আবেগপ্রবণ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থান বিরোধের কড়াইতে ঘি ঢালার অবস্থা সৃষ্টি করে। আঞ্চলিক উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। ইয়েমেনের হুথিদের সামরিক সহায়তা দিতে থাকে ইরান। প্রিন্স তাদের দমন ও নিশ্চিহ্ন করার জন্য ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, কিন্তু চার বছর অতিবাহিত হলেও সেটি এখন পর্যন্ত এক অর্থহীন ‘ওয়্যার গেমে’ পর্যবসিত। ইরান ও সৌদি আরব সরাসরি লড়াই না করলেও এই অঞ্চলজুড়ে বিভিন্ন প্রক্সিযুদ্ধে জড়িত। সৌদি আরবের অস্ত্রসম্ভার ইরানের অর্ধেকেরও কম।
লেবাননে ইরানের মিত্র শিয়া মিলিশিয়া হিজবুল্লাহ রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী একটি ব্লকের নেতৃত্ব দিচ্ছে। আঞ্চলিক সঙ্ঘাতে হিজবুল্লাহর সম্পৃক্ততা ও ২০১৭ সালের সাদ হারিরি সিনড্রোম মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ইরানবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে ট্রাম্প, বাইডেন, পম্পেও, নেতানিয়াহু সৌদি আরবকে সমর্থন দেয়।
জাতিসঙ্ঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বড় অংশের কাছে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় চীনের প্রচেষ্টা প্রশংসিত হয়েছে। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য ও মুসলিম দেশগুলো স্বাগত জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, চীন যে অভিজ্ঞতা অর্জন করল তা বিশ্বব্যাপী সঙ্ঘাত-উত্তেজনায় মধ্যস্থতার জন্য সহায়ক হবে।
স্বীকার করতে হবে, বেইজিংয়ে সৌদি-ইরান সংলাপ চীনের প্রস্তাবিত গ্লোবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নের একটি সফল অনুশীলন। এটি পশ্চিমাদের ‘বিভাজন ও শাসন’ এবং ‘ব্লক-টু-ব্লক সংঘর্ষ’ কূটনীতির বিরুদ্ধে এক মোক্ষম জবাব।
চলতি ৬-১০ মার্চ চীনের রাজধানীতে সৌদি আরব ও ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা গোপনে আলোচনা করেন। ১০ মার্চ চীন-সৌদি আরব-ইরান ত্রিপক্ষীয় ঘোষণার পর মিসর, তুরস্ক, পাকিস্তান, ইরাক, আলজেরিয়া, ওমান, কুয়েত, লেবানন, জর্দান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ অনেক দেশ তাদের স্বাগত জানিয়ে বলেছে, এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনে এটি একটি দুর্দান্ত বিজয়। জাতিসঙ্ঘ, আরব লিগ এবং ওআইসি নেতারা এর প্রশংসা করেছেন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ‘ওয়েলকাম’ করেছেন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনে কতটুকু আন্তরিক সেটি ইসরাইল-ফিলিস্তিন-জেরুসালেম ও ইরান ইস্যু নিয়ে ব্যাখ্যা করার বিষয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ওয়াশিংটন সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে সঙ্ঘাত উসকে দিতে পছন্দ করে এবং মধ্যস্থতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াইতে ইন্ধন জোগায়। অতিসম্প্রতি ইউক্রেন, তাইওয়ান, জাপান-সামরিকীকরণ, অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন দেয়া কিছু উদাহরণ।
মাইক পম্পেও ইসরাইলের গোঁড়া সমর্থক। তিনি নেতানিয়াহুকে আমেরিকার জনগণের সত্যিকার অংশীদার মনে করেন এবং ইরানকে পরমাণুবিহীন করতে ইসরাইলি প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন। তিনি ২০১৮ সালে ইরানকে চাপে রাখতে কিছু দাবি দেন। এগুলোকে পম্পেওর ১২ দফা বলা হয়। সেখানে উল্লেখযোগ্য দফা হলো, পরিদর্শনসহ আইএইএর কাছে ইরানকে পরমাণু কর্মসূচির বিস্তারিত বিবরণ দিতে হবে ও পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে; ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে; ইসলামিক জিহাদ, হিজবুল্লাহ হামাসকে সহায়তা দেয়া বন্ধ করতে হবে; সিরিয়া থেকে সব ইরানি সেনা ফিরিয়ে নিতে হবে; আফগানিস্তানে তালেবানদের সহায়তা দেয়া যাবে না; ‘ইসরাইলকে ধ্বংস করব’ এরকম ¯স্লোগান বন্ধ করতে হবে; সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে আক্রমণ চালানো যাবে না। জনাব পম্পেও কংগ্রেসম্যান থাকা অবস্থায় বারাক ওবামাকে লক্ষ করে বলেছেন, ‘তিনি ‘ইসলামী দেশের’ দিকে ঝুঁকছেন এবং ‘পশ্চিমের খ্রিষ্টানদের’ সাথে বিরোধে যাচ্ছেন।
রিয়াদের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুর্কি আল-ফয়সাল বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ কেউই প্রতিদ্বন্দ্বী সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে ‘সৎ মধ্যস্থতাকারী’ হতে পারেনি। চীন এ অঞ্চলের সবচেয়ে তিক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে সফলভাবে মধ্যস্থতা করতে সক্ষম হয়েছে।
চীনা অধ্যাপক লি হাইডং মনে করেন, বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার মধ্যে সর্বজনীন মূল্যবোধ ও সম্মিলিত নিরাপত্তার আদলে আঞ্চলিক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ মূলত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। তিনি মনে করেন, পশ্চিমাদের কাছে শান্তি মানে যুদ্ধ।
নিউ ইয়র্ক টাইমস বলেছে, ইরান-সৌদি চুক্তি চীনের মধ্যস্থতায় হয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে সাইডলাইনে ফেলে দিয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট মনে করে, মার্কিন ব্যর্থতার পর চীন মধ্যপ্রাচ্যের নতুন খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলেছে, চীনা কূটনীতির ফলে একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্যের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন কূটনীতি অনুসরণের ক্রমবর্ধমান অনুভূতিকে ভয় পাবে, কারণ এটি মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাবশালী ভূমিকা হারানোর সমূহ সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার ও সিরিয়ায় মার্কিন সৈন্যের উপস্থিতি কমানোর পর চীনের মধ্যস্থতায় এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে আরো ক্ষুণ্ন করেছে। মধ্যপ্রাচ্যকে প্রভাবিত করার জন্য চীন কখনোই কোনো চক্র গঠন করেনি, সক্রিয়ভাবে এই অঞ্চলের দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্কের উন্নতি করেছে এবং অভিন্ন উন্নয়ন চেষ্টা চালিয়েছে। চীনের দৃষ্টিভঙ্গি বেশির ভাগ দেশ গ্রহণ করেছে ও স্বাগত জানিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাবের পতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ঘটিয়েছে, চীন নয়।
সাত বছরের কূটনৈতিক ভাঙনের পর গত ১০ মার্চ, ইরান ও সৌদি আরব সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। দুই দেশ একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার অঙ্গীকার করেছে। এ ছাড়া দুই পক্ষ ২০০১ সালে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা চুক্তি পুনরায় শুরু করবে। এটি কেবল দু’দেশের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলা সঙ্ঘাতের অবসানই ঘটায়নি; বরং সহযোগিতার একটি নতুন পর্যায়ও শুরু করেছে।
এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। চুক্তির কারণে উভয় দেশ বিশেষ করে ইরানের আচরণের উন্নতি ঘটবে। ইরান ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে, ইয়েমেনে হুথিদের কোনো সামরিক সহায়তা দেবে না। হুথি সমস্যা মিটে গেলে রিয়াদের বড় বিজয় হবে; কেননা চার বছরে রিয়াদ ইয়েমেন নিয়ে অনেক হোঁচট খেয়েছে।
এ চুক্তিটি অন্যান্য আঞ্চলিক হটস্পট ইস্যুগুলোর জন্য একটি ইতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করেছে, যেমন- ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের সহজীকরণ ও নিষ্পত্তিকরণ। ভবিষ্যতেও মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘদিনের জটিল সমস্যা সমাধানে চীন একটি সেতু নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
২০১৬ সালের শুরুর দিকে সৌদি আরবে একজন বিশিষ্ট শিয়া আলেমের হত্যার ঘটনায় সৌদি আরব ও ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়। তার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়েছে, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রায় যুদ্ধের দিকে চলে যায়।
এখন ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ নিয়ে চীন সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। চীনের রাজনীতিবিদ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ওয়াং মনে করেন, মধ্যস্থতাকারী হিসেবে চীন বিশ্বস্ততার সাথে আয়োজকের দায়িত্ব পালন করেছে। চীন বিশ্বের হটস্পট ইস্যুগুলো মোকাবেলায় গঠনমূলক ভূমিকা পালন অব্যাহত রাখবে। ওয়াংয়ের মতে, বিশ্ব শুধু ইউক্রেন ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নয়।
চীনের সম্পৃক্ততার আগে ইরাক, ওমান ও কাতারের মতো কয়েকটি আঞ্চলিক দেশ দুই দেশের মধ্যে মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছিল। দুই বছর ধরে তারা সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিলেও উত্তেজনা নিরসনে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অতএব, মধ্যপ্রাচ্যের দু’টি দেশের মধ্যে সফল চীনা মধ্যস্থতা আঞ্চলিক ও অপরিহার্য বৈশ্বিক প্রভাবসহ একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
বেইজিংয়ের মধ্যস্থতায় এই চুক্তির বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য ফলাফল রয়েছে। চীন মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক উদ্যোগ নিতে শুরু করার পর থেকে এটি একটি মৌলিক টার্নিং পয়েন্ট। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং বলেছেন, তারা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে এ অঞ্চলের মালিক হিসেবে সম্মান করে। মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ সর্বদা এ অঞ্চলের দেশগুলোর হাতেই থাকা উচিত। চীনের এই রাজনৈতিক পদক্ষেপ পশ্চিমাদের কাছে একটি বার্তা, কেননা চীন পশ্চিমা দেশগুলোর মতো, আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর ওপর কোনো শর্ত আরোপ করবে না। চীন একটি স্থিতিশীল শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টা সমর্থন করে, তবে তারা তাদের ভূমিকা অন্য শক্তির ছিনতাই করা নিয়ে খুশি নয়।
সৌদি আরব-ইরান চুক্তি ইসরাইলের জন্য নেতিবাচক বিবেচিত হবে। যারা ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য সৌদি আরবকে ব্যবহার করেছে তাদের ময়দান এখন ফাঁকা হয়ে গেছে। রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ ইরানের প্রতি অন্যান্য উপসাগরীয় দেশগুলোর আচরণে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে, অন্যান্য আরব দেশ এই সাধারণীকরণ থেকে উপকৃত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
চীন কখন গোপন মধ্যস্থতা শুরু করেছিল তা এখনো অজানা। অতীতে চীন বড় ধরনের শান্তিচুক্তি করেনি। তাই এবারের ত্রিপক্ষীয় বিবৃতি যুক্তরাষ্ট্র ও সমগ্র পাশ্চাত্যের জন্য বিস্ময়কর। সংশ্লিষ্ট কাজটি গোপনে করা হয়েছিল এবং পশ্চিমা গণমাধ্যমে কোনো নিবন্ধ প্রকাশ হয়নি। মধ্যপ্রাচ্য দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যের একটি অঞ্চল। ১৯৭৮ সালের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি এবং ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির সাথে তুলনীয় এমন একটি বড় কূটনৈতিক অগ্রগতি চীনের মধ্যস্থতায় অর্জিত এই চুক্তি। যেহেতু সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে এখনো অনেক সমস্যার সমাধান বাকি রয়েছে, তাই এর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত মনোভাব কী হবে এবং তারা কোনো বাধামূলক পদক্ষেপ নেবে কিনা তা খুব তাড়াতাড়ি মিডিয়ায় চলে আসবে। মধ্যপ্রাচ্য ও আরব বিশ্ব নিয়ে যে হিসাব-নিকাশ চলছিল তা আমূল পরিবর্তিত হয়ে যাবে। ষড়যন্ত্রের উপাখ্যান গৌণ হবে এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো মুখ্য হয়ে কূটনীতির মূল ধারায় ফিরে আসবে।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার