সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৬:০৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
পুঁইশাক চাষে সফল সুফিয়া, আগ্রহী হচ্ছে অন্য কৃষকরাও অতিরিক্ত টোল আদায় করলেই ইজারা বাতিল-ভোলায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত কৃতি ফিরোজীকে বাঁচাতে সাভারে চ্যারিটি কনসার্ট আওয়ামী লীগের সাথে দ্বন্দ্ব নাই, যারা অন্যায় করেছে তাদের বিচার চাই-আব্দুল আউয়াল মিন্টু জলঢাকায় গণঅধিকার পরিষদের গণসমাবেশ সোনারগাঁওয়ে মাসব্যাপি লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব শুরু শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানে ৮৯তম জন্মদিন উপলক্ষে আগৈলঝাড়া বিএনপি’র উদ্যোগে আনন্দ র‌্যালি পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ক্ষতিগ্রস্তুদের অবস্থান কর্মসূচি জামালপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড বিএনপির আয়োজনে দুস্থদের মাঝে কম্বল বিতরণ ভুট্টা চাষে দেশের শীর্ষে চুয়াডাঙ্গা: ৫৯,৬৫৬ হেক্টর জমিতে আবাদ

এই খানে এক নদী ছিল তার নাম তিস্তা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

রংপুর বিভাগের তিস্তা তীরবর্তী বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা এখন হুমকিতে। শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ না থাকায় খরার শিকার হচ্ছে কৃষিনির্ভর উত্তরের জেলা নীলফামারী। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওই অ লের মৎস্য শিকারিরা ও জীববৈচিত্র্য। তিস্তা পারের রবিউল মাঝি জানান, এক সময় তিস্তায় বছরজুড়ে ছিল পানির প্রবাহ, চলতো পালতোলা নৌকা, ছিল মাঝিদের হাঁকডাক। নৌকা ছুটে যেত এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। জেলেরা মাছ ধরতেন বারোমাস। তিস্তা তীরবর্তী মানুষের জীবন ও জীবিকা ছিল এই নদী ঘিরে। সেই তিস্তা নদীর বুকে এখন ধুঁ-ধুঁ বালুচর। নদীর বুক চিড়ে জেগে উঠেছে জমি। কৃষকরা সেখানে চাষ করছেন নানা ফসল। মাঝে মাঝে সৃষ্টি হয়েছে জলাধারের মতো। সেই জলাধারে কোথাও হাঁটু পানি, আবার কোথাও কোমর পানি। এ বছর শুষ্ক মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমেছে অস্বাভাবিক হারে। ৪১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের তিস্তা নদীর বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে ১২৫ কিলোমিটার। দুই দেশের ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদ-নদীর মধ্যে তিস্তা চতুর্থ বৃহত্তম। ভারতে সিকিমের লামো হ্রদে উৎপত্তি হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের পর লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা হয়ে আবার কুড়িগ্রামের চিলমারীর কাছাকাছি এসে ব্রহ্মপুত্রে মিশেছে নদীটি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকৃতিগত কারণে তিস্তায় পানিপ্রবাহ সারা বছর সমান থাকে না। নদীটির মোট পানিপ্রবাহের ৯০ শতাংশ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হয়। বাকি ১০ শতাংশ প্রবাহিত হয় বছরের বাকি আট মাসে।
পানির প্রবাহ কমে গিয়ে এ সময় ধুঁ ধুঁ বালুচর হয়ে ওঠে তিস্তা নদী। এমনকি খরা মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে পানির গড় প্রবাহ সেকেন্ডে ১৪ ঘনমিটারে নেমে আসার নজিরও রয়েছে। জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নদীতে মাত্র দুই হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যা দিয়ে তিন জেলার ৪৫ হাজার হেক্টর জমির চাষাবাদ হচ্ছে।
নদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তার পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ভারত অংশে বাঁধ নির্মাণ। তিস্তায় শুধু ভারতের সিকিম অংশেই রয়েছে ২৮টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। প্রকল্পগুলোর জন্য বাঁধ নির্মাণ করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের আগেই কমে গেছে তিস্তা নদীর প্রশস্ততা। উজানে ভারতের সিকিমে নদী অববাহিকার বাসিন্দা অনেক কম। কম মানুষ অধ্যুষিত এলাকায় এখন নদীর প্রবাহ বন্ধ করে একের পর এক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে উজান ও ভাটির বাসিন্দাদের মধ্যে জীবনমানের দিক থেকে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
নদী বিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার) জানায়, আন্তর্জাতিক পানি বণ্টন আইন অনুযায়ী নদীর পানিতে সবার অধিকার রয়েছে সমান। ১৯৮৩ সালে তিস্তা চুক্তির পর অনেক বৈঠক হয়েছে, কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। তিস্তা ব্যারাজের উজানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জলপাইগুঁড়ি জেলার গজল ডোবায় বাঁধ নির্মাণ করে একটি খালের মাধ্যমে শুষ্ক মৌসুমে নদী থেকে দেড় থেকে দুই হাজার কিউসেক পানি মহানন্দা নদীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। পানি প্রবাহ না থাকায় শত শত জেলে পরিবার কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
তিস্তার খেয়াঘাটের মাঝি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘তিস্তা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। লোকজন পায়ে হেঁটে পার হচ্ছে নদী। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় বর্ষাকালে পানিধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে সামান্য পানিতে উপচে পড়ে তিস্তার দুই কূল। নদীর দুই তীরের ৩০ কিলোমিটার এলাকা বন্যা ও ভাঙনের সম্মুখীন হয়। বন্যায় ফসলি জমি ও বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।’
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার চাপানি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, গত বছর বন্যায় নদী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন হয়েছে। এলাকার ছাতুনামার চর, ফরেস্টের চর, সোনাখুলির চর ও ভেন্ডাবাড়ীর চরসহ দক্ষিণ সোনাখুলি গ্রামের নদীর ডান তীরের প্রধান বাঁধের অদূরে মাটির বাঁধটি বর্ষায় ধসে পড়েছে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার পূর্বছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, গয়াবাড়ী ও জেলার জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা বর্ষায় জমি হারিয়ে পথে বসে। পাশাপাশি খরা মৌসুমে কাজ হারিয়ে বসে থাকতে হয় তাদের। খরস্রোতা তিস্তায় এখন শুধু বালু আর বালু, জেগে উঠেছে চর। মাঝিরা পড়েছেন বিপাকে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (গেজ পাঠক) পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার হলেও চলতি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের উজানে পানিপ্রবাহ ৪৯ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। বর্তমানে দুই থেকে আড়াই হাজার কিউসেক পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, কৃষক ও মৎস্যজীবীরা। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদৌলা প্রিন্স বলেন, ‘তিস্তা নদীর প্রায় ১৫০ কিলোমিটার উজানে ভারত বাঁধ নির্মাণ করে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করছে। নতুন নতুন বাঁধ ও খাল খনন করে পানি ধরে রাখার কারণে বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ কমেছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com