চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের চেয়ে আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে সুদ ব্যয় খাতে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে বলে প্রাক্কলন করা হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই খাতে ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে সুদ ব্যয় ধরা রয়েছে ৮০ হাজার ৩৭৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে যা ২৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, গত তিন অর্থবছরে সুদ ব্যয়ের বাড়ার পেছনে মূল কারণ স য়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়া। এ খাত থেকে সরকারের বেশি করে ঋণ নেওয়ার কারণে সুদের খরচও অনেক বেড়ে যায়। কারণ স য়পত্রের সুদের হার অনেক বেশি।
তিনি বলেন, এবার সুদ ব্যয় বাজেটের লক্ষ্যমাত্রায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল। কারণ সুদের হার কমিয়ে দেওয়ার কারণে স য়পত্রে বিক্রি চলতি অর্থবছরে বেশ কমে গেছে। তবে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে বেশি করে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়ছে। আর এতে সুদ ব্যয়ও শেষ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র জানায়, স য়পত্রের সুদ ব্যয়ই শুধু নয়, নতুন বাজেটে বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় খাতে খরচও বেড়ে যাবে। কারণ সরকার বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে। আগামী অর্থবছরে এসব ঋণের সুদ পরিশোধের পরিমাণ বেড়ে যাবে। ফলে বাজেটে রাখা সুদ খাতে বর্ধিত টাকা রাখার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
বাজেট দলিল পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৬৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে ৫ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা এবং বিদেশি সুদ ব্যয় ৩ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।
একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় বেড়ে সংকুলান করতে দেশি-বিদেশি খাত থেকে ঋণ নেওয়ার হার বেড়েছে ফলে সেসব ঋণের সুদ খাতেও ব্যয় বেড়েছে। ঋণের সুদ টানতে গিয়ে প্রতি বছরই এ খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।- রাইজিংবিডি.কম