বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

ফুটবলের একটুখানি প্রাপ্তির নাম ‘জামাল ভূঁইয়া’

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সৈনিক বলা যায় তাকে, প্রায় নিশ্চিত মৃত্যু থেকে ফিরে আসা এক যোদ্ধাও বলা যায়। বলা যায়, ভাঙা নৌকায় উত্তাল সাগর পাড়ি দেয়া এক বীর-নাবিক। যিনি খালি হাতে গভীর অরন্যে হেঁটে বেড়ানো এক সাহসী-নির্ভীক চরিত্র।
চার-চারটা গুলি খেয়েও বেঁচে ফেরেছিলেন প্রাণে। সেই প্রাণ তিনি উৎসর্গ করেছেন ফুটবলের তরে, দেশের নামে। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে, উন্নত আগামীকে দূরে ঠেলে, ঠাঁই নিয়েছেন মাতৃভূমিতে, লক্ষ্য দেশের ফুটবলকে একটু এগিয়ে নিতে। তার পেছনের গল্পটা নিশ্চিতভাবেই যেকোনো পরিচালকের জন্য লুফে নেয়ার মতো দুর্দান্ত এক চিত্রনাট্য! যার প্রতিটি পরতে পরতে হয়ত শিহরণ আর রোমাে র প্রতিধ্বনি নেই, কিন্তু আছে প্রতিটি পদক্ষেপে বাধা পেরোনোর গল্প, যা দর্শকদের পাতে দেয়ার জন্য দুর্দান্ত।
বলছিলাম লাল-সবুজ ফুটবলের এক মহানায়কের কথা। বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে কলকাতা সল্টলেকে ছড়িয়েছে যার বীরত্বগাঁথা। বাংলাদেশ ফুটবলের মধ্যমনি তিনি, পত্রিকার রঙিন শিরোনাম কেড়ে নেন। তিনি জামাল ভূঁইয়া।
জাতীয় দলে তার অভিষেক হয়েছিল ২০১৩ সালে, তবে লাইমলাইটে প্রথম আসেন ২০১৫ সালে। সে বছর আট দল নিয়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে রানারআপ হয়েছিল বাংলাদেশ আর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি। এরপর পারফরম্যান্স দিয়ে ধীরে ধীরে দলের অপরিহার্য হয়ে উঠেন। ২০১৮ সালে প্রথমবার দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত সাফ ফুটবলে অধিনায়কত্ব করতে নেমেছিলেন জামাল। যেখানে প্রথম ম্যাচে ভুটানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ, পরের ম্যাচে হারায় পাকিস্তানকেও! সেই সুবাদে ঝিমিয়ে পড়া ফুটবল হঠাৎ জেগে উঠে। যেই জাগরণ পূর্ণতা পায় ২০১৯ সালের ১৫ অক্টোবর। যেই দিন বিখ্যাত সল্টলেকে গোটা ভারতবাসীকে থমকে দেয় জামালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
যদিও সেই ম্যাচে জেতা হয়নি, ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। তবে সেই ম্যাচ থেকেই যেন নতুন একটা উদ্যম চলে আসে ফুটবলারদের মনে। ২০২২ বিশ্বকাপের প্লে-অফে লাওসকে হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে জায়গা করতে সক্ষম হয়। এইতো কিছুদিন আগেও পুরো ফুটবল পাড়া জুড়ে ছিল হাহাকার। একজন মুনেম মুন্না, সালাউদ্দিন কবে দেখা দিবে আবার? একজন সাকিব আল হাসানের দেখা কি মিলবে না ফুটবলে, গোটা বিশ্ব সুবাসিত হবে সেই ফুলের ঘ্রাণে। রূপকথার এক গল্প লেখকের খুঁজে ছিল সবাই, কবিতা লিখবে যে ফুটবলের ছন্দে। যার হাত ধরে বিপ্লব ঘটে যাবে, ফুটবল বদলে যাবে।
অবশেষে তিনি হাজার মাইলের দূরত্ব ঘুচিয়ে সুদূর ডেনমার্ক থেকে ছুটে এসেছিলেন বাংলার ফুটবলে। বাংলাদেশের ফুটবলে তার আগমন একটুখানি স্বস্তির পরশ হয়ে। জাতীয় দলের হয়ে ৫ গোল আর ১৫ এসিস্ট হয়তো তার মহাত্ম বুঝাবে না, তবে তার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো তিনি একজন দলনেতা। নেতৃত্ব দিয়েই তিনি আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে এনেছেন দলে। তবে জামালের জন্ম এই দেশে নয়, তার জন্ম ও বেড়ে উঠা ডেনমার্কে। ১৯৯০ সালের ১০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতি ঝোঁক ছিল বলে খেলতে শুরু করেন ডেনমার্কের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্লাবে। খেলেছিলেন কোপেনহেগেন অনূর্ধ্ব ১৯ দলেও। কিন্তু দেশের মায়া ভুলতে পারেনি ছেলেটা। তাই নিজের তাগিদেই মা-বাবার কথা উপেক্ষা করে ছুটে আসেন বাংলাদেশে, হাল ধরেন দেশের ফুটবলের।
শুধুই পায়ের ফুটবলে কলাকৌশলে নয়, মুখের বুলিতেও তিনি বাংলাদেশের নাম লিখেছেন বিশ্বদরবারে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, লা লিগা সহ বিশ্বের অনেক জনপ্রিয় লিগেই ধারাভাষ্য দিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। যেখানে তিনি সগর্বেই নিজেকে বাংলাদেশী বলে পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্য অনেক আগেই থেমে যেতে পারত জামালের ক্যারিয়ার, হয়তো এই পৃথিবীতেই থাকা হতো না। ডেনমার্কে এক পার্টিতে দূর্বৃত্তদের গোলাগুলিতে একবার চার-চারটি গুলি লেগেছিল ছোট্ট জামালের বুকে। কিন্তু কঠিন লড়াই করে ঠিকই জীবন যুদ্ধে জিতেছিলেন, এখন জেতাচ্ছেন বাংলাদেশ ফুটবলকে। গতকাল ১০ এপ্রিল ছিল তার জন্মবার্ষিকী। শুভ জন্মদিন অধিনায়ক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com