বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়রে নতুন নেতৃত্ব আশায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।এতদিন যা নিয়ে মুখে মুখে শহরজুড়ে কানাঘুষা চললেও মহান মে দিবসের কর্মসূচিকে ঘিরে এ বিভক্তির ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। যদিও মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে থাকা নেতারা বলছেন তাদের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। আন্তর্জাতিক (১ মে) সকালে বরিশাল জেলা ও মহানগর শ্রমিক লীগের ব্যানারে নগরের সোহেল চত্বরস্থ দলীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দীর্ঘদিন আড়ালে থাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব আহমেদের সভাপতিত্বে জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহজাহান হাওলাদার, মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক নিজামুল ইসলাম নিজাম, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুনসহ আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি আলোচনা সভা শেষে র্যালিতেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে অংশ গ্রহন করেন। এ সভায় খোকন সেরনিয়াবাত কোনো বিষদাগার করে বক্তব্য না দিলেও তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনীত করেছেন বরিশালবাসীর সেবা করার জন্য। মে দিবসে আমার অঙ্গীকারই হবে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করার। আমি নির্বাচিত হতে পারলে আমার মামা (জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান), বাবা (১৫ আগস্টে শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত)’র মতোই তাদের উত্তরসূরি হয়ে শ্রমিকদের জন্য কাজ করবো। অপরদিকে বিকেলে বরিশাল মহানগর শ্রমিক লীগের ব্যানারে একই স্থানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরিশাল জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর হোসাইন, মহানগর সহ-সভাপতি ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বিসিসি প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু, প্যানেল মেয়র এ্যাড, রফিকুল ইসলাম খোকন, মহানগর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু সহ আওয়ামী লীগ, শ্রমিকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যারা বর্তমান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর দীর্ঘদিনের ঘনিষ্টজন ও অনুসারী হিসেবেই পরিচিত। সভা শেষে নগরে এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়।এ সভা ও র্যালিতে নৌকার প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত উপস্থিত না থাকলেও নৌকা প্রতীকের পক্ষে শ্লোগান দিয়ে শহর মুখরিত করে নেতাকর্মীরা। এর আগে সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, আগামী সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভেদের কোনো কারণ নেই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে আগামী ১২ জুন নৌকার পক্ষে আমরা কাজ করবো এবং নৌকার বিজয় আমরা ছিনিয়ে আনবো। এসময় তিনি আবারো বলেন কেহ কেহ অতি উৎসাহিত হয়ে আওয়ামী লীগ তথা দলের মধ্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না। তারপরেও মে দিবসে বরিশালে শ্রমিক লীগের পৃথক কর্মসূচি এবং একটি পক্ষের কর্মসূচিতে দলীয় প্রার্থীর অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে বিভক্তির বহিঃ প্রকাশ বলছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। নগরের বাসিন্দা ও প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর বরিশালে নৌকার প্রার্থী খোকনের আগমনী আয়োজন থেকে এ পর্যন্ত তার কোন অনুষ্ঠানে মহানগরের প্রভাবশালী নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও তার ঘনিষ্ট সহচরদের দেখা যায়নি। যারা গত চার বছরে এ শহরে একক আধিপত্য বিরাজ করেছেন। যদিও বিভিন্ন সময়ের বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট কে এম জাহাঙ্গীর নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে থেকে নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনার কথা বলছেন। কিন্তু বাস্তবে বর্তমান মহানগর কমিটির কয়েকজনসহ দীর্ঘদিন নিস্ত্রিয় থাকা নেতাকর্মীরা খোকন সেরনিয়াবাতের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে কাজ শুরু করেছেন। সম্প্রতি লক্ষ্য করা গেছে, সাবেক অনেক ছাত্র ও যুব নেতা যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ছিলেন তারা বরিশালে ফিরে এসে খোকন সেরিনয়াবাতের পক্ষে কাজ করছেন যদিও প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত দলের মধ্যে কোনো বিভাজন চান না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এখানে আমি কোনো বিভাজন বা কাউন্টার পার্ট করতে চাই না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনায়ন দিয়েছেন। যারা আসবে আমি তাদের ওয়েলকাম জানাবো। অভিযোগ করে খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম দেওয়ান বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে এখন যারা পোস্ট-পজিশনে রয়েছেন তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে সরব না, তারা নিশ্চুপ। এখানে ষড়যন্ত্র হবে এটা আমরা জানি, তবে আমরা সাবেক ছাত্রনেতারা একট্টা হয়েছি, সব ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে প্রস্তুত আছি আমরা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য ও বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি মঈন তুষার বলেন, প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরনকে দলের মধ্য থেকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয়েছে। তার মতো খোকন ভাইয়ের বেলাতেও যদি দলের মধ্য থেকে ষড়যন্ত্র না করা হয় তাহলে আমরা নৌকার বিজয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত। এদিকে বিজয়ের লক্ষ্যে নির্বাচনী কৌশল কেউ কেউ করতে পারে, তবে দলের ভেতরে থেকে কেউ যদি বিরোধিতা করে তাহলে জননেত্রী শেখ হাসিনা কাউকে ক্ষমা করবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সমস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক (মন্ত্রী) ও বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ সহ বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ (পিতা-পুত্র) ঢাকায় অবস্থান করছেন তাদের এক সাথে বরিশাল আসার প্রতিক্ষার প্রহর গুনছেন অনুসারী নেতা কর্মীরা। অপরদিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষনা হওয়ার পরদিন দীর্ঘদিন দেখা স্বাক্ষাৎ না হওয়া বড় ভাই আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর জাতীয় সংসদীয় বাস ভবনে গিয়ে দেখা ও স্বাক্ষাৎ করে আসেন আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, সেময় বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক সাদিক আব্দুল্লাহ পাশে ছিলেন। ইতিমধ্যে প্রার্থী খোকন ও তার স্ত্রী লুনা সহ সমর্থকরা গণ সংযোগে ব্যাস্থতা শুরু করে দিয়েছে। আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে নগরীর ১৯নং ওয়ার্ড নতুন বাজার অদি শ্মশান এলাকায় নৌকা মার্কার গণসংযোগ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের সহধর্মিনী লুনা আবদুল্লাহ। এ-সময় উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন।