দেশে যেখানে নারী ফুটবলারদের সংকট আর সেখানেই টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাইস্কা ইউনিয়নে অবস্থিত পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে চলছে নারী ফুটবলার তৈরির কাজ। ক্রীড়া পরিদপ্তর এর বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচির আওতায় টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া অফিসের ব্যবস্থাপনায় ধনবাড়ী উপজেলায় শুরু হয়েছে নারী ফুটবল প্রশিক্ষণ। পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহযোগিতায়। বিকেলে পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন ধনবাড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ হারুনার রশিদ হীরা। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ মাসউদুল আলম উচ্ছল। পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন তালুকদার, পাইস্কা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাবুল,পাইস্কা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ ধনবাড়ী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নাছিরুজ্জামান মিলন, ক্রীড়া অফিসের অফিস সহায়ক কামরুল হাসান রনি, নিজেরা করির কর্মীবৃন্দ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসলাম হোসাইন। পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৪০ জন খেলোয়াড় ১৫ দিনের এই প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। কোচের দায়িত্ব পালন করবেন মোঃ জহিরুল ইসলাম মিলন। ২০১৯ সাল থেকে ধনবাড়ী উপজেলায় নিজেরা করি সংস্থার হাত ধরে নারী ফুটবলের যাত্রা। এর ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট বালিকা (অনূর্ধ্ব-১৭) এর টাঙ্গাইল জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়, আন্ত ইস্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়, আঞ্চলিক পর্যায়ে সেই বিখ্যাত কলসিন্দুর সাথে ১-০ গোলে হেরে রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে ধনবাড়ী উপজেলা। তাদের এই সাফল্য আরো এগিয়ে নিতে টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া অফিসের ব্যবস্থাপনায় এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করার বিষয়ে জানান, টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া অফিসার আল-আমিন বলেন, ভবিষ্যতে এই অঞ্চল থেকে জাতীয় পর্যায়ের খেলোয়াড় তৈরি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ধনবাড়ী উপজেলার ফুটবলকে আরো এগিয়ে নিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে বলে জানান। ধনবাড়ী উপজেলা মেয়েদের ফুটবল প্রশিক্ষণের খেলা পরিচালনা করেন একজন সাবেক ফুটবলার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত রেফারি ক্রীড়া সংগঠক জহিরুল ইসলাম মিলন।খেলার মাঝে সিনিয়র দলের নারী ফুটবলারা প্রথমে এক গোল দিলেও শেষ দিকে এসে জুনিয়র নারী ফুটবল দলের ফুটবলারা এক গোল পরিশোষ করেন। নারী ফুটবলাররা টাঙ্গাইল জেলায় দুই দুইবার জেলা চ্যাম্পিয়ন বিভাগীয় পর্যায়ে রানার্সাব নারী ফুটবলে নতুন ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করে যাচ্ছে ধনবাড়ীর মেয়েরা। মেয়েদের এমন সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের এবং নিজেরা করি সংগঠনের। এক স্কুল থেকেই প্রায় ১২-১৩ জন খেলোয়াড় খেলছেন টাংগাইল জেলা টিমের হয়ে নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রতিবছরই নতুন করে অনেকে যুক্ত হচ্ছেন জেলা নারী ফুটবল দলের বয়সভিত্তিক বিভিন্ন দলে। অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে, একটা গ্রাম থেকে, একটা স্কুল থেকে বছরের পর বছর এত নারী ফুটবলার উঠে আসছে কীভাবে? পাইস্কা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক মেয়ে হওয়ায় নিজেরা করি সংগঠন এবং পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাসউদুল আলম উচ্ছল এর সহযোগিতা নিয়ে জেলা টিমের একজন সাবেক ফুটবলার এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের তালিকাভুক্ত রেফারি ক্রীড়া সংগঠক জহিরুল ইসলাম মিলন স্যারের হাত ধরে ফুটবলে উত্থান হয় এই মেয়েদের। প্রথমে ২০২০ সালে পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব অনূর্ধ্ব ১৭ কাপের জন্য দল গঠন করে। যদিও প্রথম দুই বছর তারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি। পরে আরও কঠোর পরিশ্রম আর অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের কোচ জহিরুল ইসলাম মিলন এর হাত ধরে জেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়। আন্তঃ উপজেলায় দ্বিতীয়বারের মতো আবারো চ্যাম্পিয়ন হয়।
বিভাগীয় পর্যায়ে ফাইনালে সেই বিখ্যাত কলসিন্ধু স্কুলের সাথে এক শূন্য গোলে হেরে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। বাংলাদেশের খ্যাতিনামা ক্লাব বসুন্ধরা কিংস পেকটিস করার সুযোগ পেয়েছে খেলেছে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে। বিভিন্ন প্রাইমারি স্কুলের ওই মেয়েরা বড় হয়ে পাইস্কা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের যায়। তারপর একে একে যোগ দেন মূল দলে।গ্রামের অতিদরিদ্র পরিবারের প্রায় সবারই অভাবের সংসার। কারও মা রাস্তায় কাজ করেন। কারও বাবা রিকশা চালান। কারও বা আবার শ্রমজীবী পরিবার। সে সময় যদি তাদের জিজ্ঞাসা করা হতো, তারা কী চায়, উত্তর পাওয়া যেত, পেট ভরে খেতে চাই। বেশি করে খাবার দিয়ে দিন, বাড়িতে সবাই মিলে খাব। নারী ফুটবলার আঁখি, শিফা, অনন্যা, রোকসানা, ঝরনা বলেন, যে কোন ফাইনাল খেলায় আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে। আমরা আমাদের স্বপ্ন ফুটবল খেলেই পূরণ করব।