শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার ছৈয়াল কান্দি গ্রামের কৃষক মজিবল মাঝির প্রতিবন্ধী মেয়ে নাছিমা আক্তার। সখিপুর সোলাইমানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাছিমা। শিক্ষকের অবহেলায় এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি এমনটাই অভিযোগ করেছেন ওই প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী। তবে এ ঘটনায় শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভূক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী। নাছিমা আক্তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম ফিলাপের টাকা রশিদের মাধ্যমে মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা টিউলিজ রহমানের কাছে প্রদান করেন। পরে পরীক্ষা শুরুর আগে মাদ্রাসায় প্রবেশ পত্র আনতে গিয়ে প্রতিবন্ধী নাছিমা দেখেন তার নামে কোন প্রবেশ পত্র আসেনি। অর্থাৎ প্রতিবন্ধী নাছিমার নামে কোন টাকা পয়সা জমা হয় নাই। ভূক্তভোগী শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী নাছিমার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পেরে বিমর্ষ চেহারায় অলস সময় পাড় করছেন। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাছিমা আক্তার দৈনিক খবরপত্র কে বলেন, আমি প্রতিবন্ধী সমাজে এবং পরিবারের বোজা এখন আমি পরীক্ষা না দিতে পারায় বিষন্নতায় ভুগছি। আমার সহপাঠি বন্ধুরা পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করলেও আমার সময় কাটছে না।
আমার বাবা কৃষক অনেক কষ্ট করে পরীক্ষার ফ্রি মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষিকা টিউলিজ রহমানের নিকট পরিশোধ করলেও আমার ফরম পূরণ হয়নি। এ ব্যাপারে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসার এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে তার দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই। তবে সখিপুর সোলাইমানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরম ফিলাপের দায়িত্ব ছিলো সহকারী শিক্ষিকা টিউলিজ আক্তারের সে আমার কাছে যেই কয়টি নাম জমা দিয়েছিল সেখানে নাছিমার নাম ছিলো না। তাই এর বেশি কিছু আমি জানিনা। তবে এ বিষয়ে শিগগিরই ম্যানেজিং কমিটি একটা সিদ্ধান্ত নিবেন বলে আশা করছি। পাশাপাশি মাদ্রাসাটির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বড় মিয়া বলেন, টিউলিজ রহমান তৎকালীন সুপারকে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ডকুমেন্টসসহ টাকা জমা দিয়েছেন, ওই ৪৫ জন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়েছে। পরবর্তীতে বিলম্ব দিয়ে বর্তমান সুপার আরও একজন শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করেছেন। ফরম পূরণের সরকারি ফিসহ আনুসাঙ্গিক মিলিয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থী থেকে ২৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ৪৫ জন শিক্ষার্থীর মোট টাকা হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ কিন্তু টিউলিজ মাদ্রাসায় জমা দিয়েছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭০০ টাকা। টিউলিজ ড্যাম্প কেয়ার ভাব নিয়ে চলাফেরা করেন, তাকে কিছু বললেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন। প্রতিবন্ধী যে শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ হয়নি, তা নিয়ে আমরা অসস্তিতে আছি। মেয়েটার কষ্ট দেখে আমাদের খারাপ লাগছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষিকা টিউলিজ রহমান কলির বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে বলেন, আমি সকল শিক্ষার্থীর ফরমের টাকার সাথে নাছিমার নামে ও একহাজার টাকা জমা দেওয়া হয়েছে তৎকালীন সুপারের কাছে। এখন নাছিমার প্রবেশ পত্র কেন আসলো না সেটা সুপারই বলতে পারবে। আমি এলাকার মেয়ে, এলাকার বউ। আমার পরিবারে জোড়ায় জোড়ায় শিক্ষক। আমি কম টাকা জমা দেইনি। পরীক্ষার ফরম পূরণের ফি আমি রিসিটের মাধ্যমে জমা দিয়েছি। এ ঘটনার বিষয় ভেদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একেএম জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক খবরপত্র কে বলেন, ঘটনার বিষয়টি আমরা শুনেছি, এ বিষয় আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, তদন্তে যে দোষী প্রমাণিত হবে তার বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানানো হবে। উর্ধ্বতন কর্মকতা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন। শরীয়তপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শ্যামল চন্দ্র শর্মা বলেন, যদি এরকম ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্তা নেওয়া হবে।