আগামী ৫ বছরে বিশ্বের উষ্ণতা সর্বোচ্চ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড মেটিওরোজিক্যাল অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএমও)। গতকাল বুধবার (১৭ মে) এক বৈঠকের পর ডব্লিউএমও জানায়, আগামী পাঁচ বছর রেকর্ড তাপমাত্রা দেখতে চলেছে বিশ্ব। আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন এই সময় দেখা যাবে। এল নিনোর অবস্থান এবং গ্রিন গ্যাস নিঃসরণের পরিমাণ হিসাব করে এই উপসংহারে পৌঁছেছেন তারা। সংস্থাটি জানায়, ৯৮ শতাংশ আশঙ্কা হলো-এই ৫ বছরের মধ্যে কোনো একটি বছরে তাপমাত্রা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছাবে। তবে আগামী ৫ বছরে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়বে। এর ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিপদের আশঙ্কা তৈরি হবে বলেও জানিয়েছে ডব্লিউএমও। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা এক দশমিক ৫ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি আটকানোর জন্য গত কয়েকটি জলবায়ু সম্মেলনে প্রভূত আলোচনা হয়েছে। কিন্তু ডব্লিউএমও জানিয়েছে, আগামী ৫ বছরে গড় তাপমাত্রার বৃদ্ধি এক দশমিক ৫ ডিগ্রির ওপরে উঠে যেতে পারে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এল নিনো তৈরির আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। এল নিনো আবহাওয়ার একটি স্বাভাবিক অবস্থান। এল নিনো আবহাওয়া গরম করে, লা নিনা আবহাওয়া ঠান্ডা করে।
ডব্লিউএমওর বক্তব্য, এল নিনো তৈরি হলেও লা নিনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তাই তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে। এর প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য, খাদ্যভা-ার এবং সার্বিকভাবে পরিবেশের ওপর। খড়া ও বন্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকছে। শস্য উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে। নানান রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটতে পারে। সবাই যাতে এর জন্য তৈরি থাকে, সেই সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। আগামী ২২ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত এক সম্মেলনে এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএমও।
সংস্থাটি জানায়, তাদের হিসাবে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাপমাত্রা গড়ে এক দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। যা রেকর্ড হিসেবে ধরা হবে। এর ফলে মেরু অঞ্চলে তাপমাত্রা তিন গুণ বাড়তে পারে। গত ৫টি শীতকালে তাপমাত্রার এই পরিমাণ বৃদ্ধি মেরু অঞ্চল দেখেনি। উত্তর ইউরোপ, আলাস্কা ও উত্তর সাইবেরিয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা আছে। অন্যদিকে, অ্যামাজন ও অস্ট্রেলিয়ায় খরা হতে পারে। এর আগে বিশ্বের উষ্ণতম সময় হিসেবে ধরা হতো ২০১৫ থেকে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়কে। ২০১৬ সাল সবচেয়ে উষ্ণ ছিল বলে মনে করা হয়। এবার সেই রেকর্ড ভাঙতে চলেছে।
তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি বাড়ার মানে কী? এটি বিশ্বের তাপমাত্রার সরাসরি পরিমাপ নয়, তবে দীর্ঘমেয়াদী বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় পৃথিবী কতটা উষ্ণ বা শীতল হয়েছে তার একটি সূচক। কয়লা, তেল এবং গ্যাসের উপর আমাদের আধুনিক নির্ভরতার আগে পৃথিবী কতটা গরম ছিল তার পরিমাপ হিসাবে বিজ্ঞানীরা ১৮৫০ থেকে ১৯০০ সালের মধ্যে সময়ের গড় তাপমাত্রার তথ্য ব্যবহার করেন। কয়েক দশক ধরে তাদের ধারণা ছিল, পৃথিবীর তাপমাত্রা যদি ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি বৃদ্ধি পায় তবে তা বিপজ্জনক প্রভাবের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে। তবে ২০১৮ সালে তারা এই অনুমানটি উল্লেখযোগ্যভাবে সংশোধন করে বলেন, ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করাও বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর হবে। বিগত কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়ার ফলে ২০১৬ সালে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্পায়ন যুগের চেয়ে ১ দশমিক ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল, যা এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এখন গবেষকরা বলছেন, এই রেকর্ড ২০২৭ সালের আগে ভেঙে যাবে সে ব্যাপারে তারা ৯৮ শতাংশ নিশ্চিত। সূত্র: ডয়চে ভেলে