বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

পাঁচ বছর পর আবারও চালু সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানা

সোহাগ ইসলাম নীলফামারী
  • আপডেট সময় শনিবার, ২০ মে, ২০২৩

জনবল সংকটে টানা পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে অবস্থিত দেশের একমাত্র রেলওয়ে সেতু কারখানা। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১১জন খালাসি আর অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া ৪জন দক্ষ জনবল দিয়েই শুরু হয়েছে কারখানার উৎপাদন। পাশাপাশি চলছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজও। পুরোদমে কারখানাটির কর্মচাঞ্চল্য ফেরাতে দ্রুত শুন্যপদ গুলোতে আরও জনবল নিয়োগ দেয়ার দাবি অবসরে যাওয়া কর্মচারী ও স্থানীয়দের। কর্তৃপক্ষও বলছে, শ্রীঘ্রই আরো জনবল নিয়োগ দিয়ে পুরোদমে চালু করা হবে কারখানাটি। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ঘুরবে উৎপাদনের চাকাও। জনবলের সংকটে ২০১৪ সালে ব্রিটিশ আমলের প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনা সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর ২০১৮ সালে কারখানাটির পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ করায় দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক-কর্মচারীদের পদচারণা না থাকায় পুরো এলাকা ছেয়ে যায় আগাছায়। খোলা আকাশের নিচে হাজার কোটি টাকার মূল্যবান যন্ত্রপাতি পরিত্যক্ত অবস্থায় নষ্ট হচ্ছিল। কারখানাটি সচল করতে চলতি মাসের ২ তারিখে নিয়োগ দেয়া হয় ১১জন খালাসি। তাদেরকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে গড়ে তোলার পাশাপাশি উৎপাদনের মান বজায় রাখতে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া হয় অবসরে যাওয়া ৪ জন দক্ষ শ্রমিক। সরেজমিন দেখা গেছে, কারখানার প্ল্যাটফর্ম শেডের ভেতরে আবর্জনার স্তূপ পরিস্কার ও পরিপূর্ণ জঙ্গলে ঢাকা কারখানাটির জঙ্গল কর্তনে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শ্রমিকরা। এছাড়াও নিথর পরে থাকা মেশিনগুলোর প্রাণ ফেরাতে চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কাজও। কারখানাটির প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মচারীর স্থলে মাত্র ১৫জন শ্রমিক দিয়েই আপাতত তৈরি করা হচ্ছে সিসি ক্রাপট। যা দুর্যোগকালীন সময়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বিকল্প ব্রীজ নির্মাণে ব্যবহার করা হবে। দেশ ও রেলের সেবার মান বাড়াতে প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষজনবল হিসেবে গড়ে উঠতে চায় সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিকরা। সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক রাকিবুল বলেন, আমার সাথে আরও ১০ জন খালাসি এই কারখানায় যোগদান করেছেন। সাথে আরো দক্ষ চার জনকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা সিসি ক্রাপট তৈরি করেছি। বর্ষাকালীন অথবা যেকোনো সংকটকালীন অবস্থায় ব্রীজ ভেঙে গেলে ট্রেনকে সচল রাখার জন্য এগুলো দিয়ে অস্থায়ী ব্রিজ তৈরি করা যায়। ২০১৮ সাল থেকে সেতু কারখানাটি বন্ধ থাকার পর আবারো চালু হওয়ায় সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অবসরে যাওয়া শ্রমিকরা। তবে কারখানাটির কর্মচাঞ্চল্য আর প্রাণ ফেরাতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক জনবল নিয়োগ দেয়ার দাবি তাদের। অবসরে যাওয়া শ্রমিক আতিয়ার রহমান বলেন, সেতু ওয়ার্কসপ থেকে ২০০৯ সালে অবসরে যাই। এখন নতুন করে আবার আমাদেরকে ডাকছে এ কারণে যাতে করে আমরা নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের কাজ শিখাতে পারি। তারা ভালোভাবে কাজ করতেছে আমাদের সঙ্গে, সহযোগিতা করতেছে তারা কাজ শিখতে পারবে তাদের কোনো সমস্যা হবে না কাজ করার। কিছু লোকজনের আরো দরকার আছে তাহলে কারখানাটা আরো সচল হবে। সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোকছেদুল মোমিন বলেন, এখানে অনেকগুলো আইটেম তৈরি করা হতো। বাংলাদেশের রেলওয়ের সবচেয়ে বড় ব্রিজ যেটি হার্ডিজ ব্রিজ, সেটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করা। বাংলাদেশ রেলওয়ের স্টেশনে প্লাটর্ফম, ওভারব্রিজ, ওয়াটার ট্রাংকসহ বিভিন্ন আইটেমগুলো বিশেষ করে ক্রসিং আইটেমগুলো তৈরি করা হতো। ২০১৮ সালের পরে পর্যায়ক্রমে এটি বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হওয়ার পরে আমরা দুই তিন মাস পূর্বে আমরা প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কষণ করেছিলাম। সম্প্রতি, আমরা ১১জন খালাসি ও অবসরে যাওয়া ৪ জন দক্ষ কর্মচারী পেয়েছি। যাদের মাধ্যমে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রী, রেলমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে। আমার আরেকটা দাবি যেহেতু এটা চালু করা হয়েছে আরও লোকবল দিয়ে এটাকে আরো পুনরুজ্জীবিত করা। রেলওয়ে সেতু কারখানা সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম বলেন, লোকবলের অভাবে কারখানাটি ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কারখানাটি দেখভালের জন্য তিনজন ছিল। সম্প্রতি ১১ নবনিয়োগপ্রাপ্ত খালসি আমরা পেয়েছি। তাদেরকে দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবসরে যাওয়া চারজন শ্রমিককে আহবান জানালে তারা সাড়া দেয়। নতুনদের নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি পাশাপাশি কারখানাটি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে। কারখানার মেশিনগুলো চালানোর জন্য যে ধরণের লোকবল প্রয়োজন সে ধরণের লোকবল পাওয়া যায়নি। যদি আমরা লোকবলগুলো পেয়ে যাই অচিরে কারখানার মেশিনগুলো চালু করা সম্ভব হবে। প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ আমলে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ তিন দেশের রেল নেটওয়ার্ক ছিল একই। রেল ব্যবস্থাকে স্বনির্ভর করতে ও রেলসেবা নির্বিঘ্ন করতে গড়ে তোলা হয় বিশাল এই রেল সেতু কারখানা। আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমিতে স্থাপন করা হয় সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা। একই সময়ে উপমহাদেশের অন্যতম এ বৃহৎ কারখানাটির অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিমাংশে প্রায় ১৮ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হয় ব্রিজ ওয়ার্কশপ তথা সেতু কারখানাটি। মূলত ব্রডগেজ, মিটারগেজ, রেলপথের ব্রিজ এবং রেলপথের পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং ও গার্ডার ইয়ার্ড তৈরির জন্যই এ সেতু কারখানাটি গড়ে তোলা হয়েছিল। শুরুতে এ কারখানার কর্মকা- পরিচালনায় মেশিন শপ, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং শপ ও গাডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক কাজ করত। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সব স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শেডের মালামাল, রেললাইনের পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলি ও মোটরট্রলি মেরামত এবং তৈরি, মোর গার্ডার, পানির ট্যাংক, ফুটওভার ব্রিজের মালামাল, ট্যাং স্টেজিংসহ ১০০ ধরনের মালামাল তৈরি হতো এ কারখানায়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত কারখানাটিতে প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে তৎকালীন সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে ‘গোল্ডেন হ্যান্ডশেক’ ঘোষণা দিলে ওই সুবিধা নিয়ে অনেক শ্রমিক-কর্মচারী চাকরি ছেড়ে অবসরে যান। পরবর্তীতে মঞ্জুরিকৃত ১২৭টি পদের মধ্যে নিয়মিত অবসরে যেতে যেতে মাত্র ছয়জন শ্রমিক-কর্মচারীতে নেমে আসে। ফলে ২০১৪ সালে এটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ঘোষণার পর ২০১৮ সালে কারখানাটির পুরোপুরি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com