প্রজননকালে সাগরে ইলিশসহ অন্যান্য প্রজাতির মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে গত শুক্রবার (১৯ মে) মধ্যরাতে। দেশের উপকূলীয় এলাকার ১৪টি জেলা ও ৬৫টি উপজেলা এই নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত। মৎস্য অধিদফতরের দেয়া তথ্য অনুসারে, এসব এলাকার সাড়ে ৩ লাখের বেশি নিবন্ধিত জেলে ছাড়াও ৬৮ হাজার মেকানাইজড বোট ও ২৬০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বোটের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে। এতে জীবিকার একমাত্র মাধ্যম মাছ ধরা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন এক লাখের বেশি জেলে। জেলেরা বলছেন, বন্ধের এই দিনগুলোতে জেলেদের জনপ্রতি সরকারি যে সহায়তা দেয়া হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। সরকারি সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি তাদের। এ নিয়ে প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার লক্ষ্যে জেলেদের সহায়তাসহ নানা কর্মসূচি সরকারের রয়েছে। প্রতি বছরই তা বাড়ছে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে মাছ ধরা বন্ধের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ায় এদিন বিকেলের মধ্যেই সাগর থেকে উপকূলে ফিরেছে অধিকাংশ ট্রলার। সাগর থেকে ফিরে আসা সারি সারি নোঙর করা এসব ট্রলারের দেখা মিলেছে কক্সবাজার শহরে বাঁকখালী নদীর বিভিন্ন নৌঘাটে। এতে ট্রলার থেকে মাছ ধরার জালসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। কিন্তু দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় স্বজনদের নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ভুগছেন জেলেরা। তারা বলছেন, নিত্যপণ্যের দুর্মূল্যের বাজারে জেলেদের সরকারি সহায়তার বরাদ্দ অপ্রতুল। প্রকৃত অনেক জেলে নিবন্ধনের আওতায় না এলেও ভুয়া অনেকে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।
মোহাম্মদ ফুরকান নামে এক জেলে জানান, ক’দিন আগে গেল ঘূর্ণিঝড় মোখা। এরপর ছিল সমুদ্র উত্তাল। আর এখন ৬৫ দিনের জন্য সমুদ্র বন্ধ। সুতরাং সামনের দিনগুলো খুবই কষ্টের মধ্যে যাবে। এই বেকার সময় সবচেয়ে বেশি কষ্ট লাগে সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা দেয়া হয় তাও ঠিকমতো বণ্টন হয় না। মহসিন মিয়া নামে আরেক জেলে জানান, ৮ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব তার কাঁধে। সরকারের পক্ষ থেকে যে সাহায্য-সহযোগিতা করা হয় তা যথেষ্ট নয়। তার মধ্যে সবকিছুর দাম বাড়তি। ওই বন্ধের দিনগুলোতে রিকশা চালিয়েও সংসার চলে না। শাহাদাত হোসেন নামে আরেক জেলে জানান, অনেক সময় দেখা যায় জেলেদের জন্য আসা বরাদ্দ ঠিকমতো বণ্টন হয় না। যারা দায়িত্বে থাকে তারাও ওখানে ভাগ বসায়। এছাড়া অনেক সময় তালিকায় প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে অন্য পেশার লোকজনকে যুক্ত করা হয়। প্রশাসনের কাছে এই দুর্নীতি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য সমবায় সমিতির উপদেষ্টা ও কক্সবাজার সদর উপজেলা মৎস্যজীবী সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন বলেন, মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে জেলেদের সহায়তার বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। প্রকৃত জেলেদের নিবন্ধনের আওতায় এনে তালিকাভুক্তদের স্বচ্ছতার সাথে সহায়তার ব্যবস্থা নিতে হবে। কক্সবাজার সদরের সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহন বলেন, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সাগর থেকে মাছ আহরণ, পরিবহন ও বিপণনসহ সব ধরনের কর্মকা- নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলেদের সহায়তার বিষয়টি সরকারের চলমান কর্মতৎপরতারই অংশ। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আগামী ২৩ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, জেলায় মাছ ধরার নিবন্ধিত ট্রলার রয়েছে ৫ হাজার ১৫৩টি এবং নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৩৯৪ জন। এছাড়া অনিবন্ধিত ট্রলার রয়েছে অন্তত ৩ হাজার এবং অনিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার।