নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। চ্যালেঞ্জ উত্তরণে নেওয়া পদক্ষেপের মধ্যে সব দলের নির্বিঘ্ন প্রচার, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলা রোধ ও হয়রানিমূলক মামলা না করাসহ একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সব দলের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা এবং কোনও ধরনের হয়রানিমূলক মামলা না করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সংসদে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সংসদ কাজে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এদিন বিকালে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।
মন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন। বর্তমান ইসি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কর্মপরিকল্পনা নিয়েছে। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন নানা অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ, সীমানা পুনর্র্নিধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন দলের নিবন্ধনসহ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ২৯ জানুয়ারির মধ্যে ভোট করার বাধ্যবাধকতা থাকায় আগে থেকেই দৃঢ়তার সঙ্গে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নিয়েছে।’ তিনি জানান, সংবিধান, আরপিও সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার আলোচনা, প্রচলিত বিভিন্ন আইন ও বাস্তবতার নিরিখে একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন তৎপর রয়েছে। চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে সিদ্ধান্ত
নির্বাচনকে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং এসব চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য ইসির নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরেন মন্ত্রী। ইসি যেসব সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে— বিশিষ্ট নাগরিক ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সংবিধান ও নির্বাচনি আইন অনুযায়ী অধিকাংশ জন যে সুপারিশগুলো করেছে তা বাস্তবায়ন, সব রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনি প্রচার কাজ নির্বিঘেœ করতে পারে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব রাখা, সরকারের কোনও সংস্থা কর্তৃক হয়রানিমূলক মামলা না করা, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী-সমর্থক দ্বারা প্রার্থী, সমর্থক, তাদের বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ না করা এবং এমন হলে আইন অনুযায়ী দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা, বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া। সিদ্ধান্তের মধ্যে আরও রয়েছে— নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দফতর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সভা অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনে তারা যেন আন্তরিকতা ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করেন, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান, ভোটকেন্দ্র এবং নির্বাচনি এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন, নির্বাচনি আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালন এবং নির্বাচনি আচরণ বিধিমালার কোনও বিধি ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এক্সিকিউটিভ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ এবং নির্বাচনি আচরণবিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন, যোগ্য ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ। এবং নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগসহ বিধিসম্মতভাবে প্রয়োজনীয় সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
মন্ত্রী জানান, নির্বাচন কমিশন সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে আগ্রহ ব্যক্ত করে এসেছে। নির্বাচনের ফলাফল যাতে সব ভোটার ও অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয়, অর্থাৎ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য সব কার্যক্রম সংবিধান, আইন, বিধি অনুযায়ী গ্রহণ এবং যথাযথ প্রয়োগের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব প্রার্থীর প্রতি সমআচরণ, নির্বাচন কমিশনের অধিক সংখ্যক যোগ্য কর্মকর্তাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ, নিরপেক্ষ প্রিসাইডিং-সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ, নির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী কারও বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি/নির্বাচনি আইন ও বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।’