আম ছোট-বড় সবারই পছন্দের ফল। মৌসুমে নানা জাতের ও স্বাদের আম দেখা যায়। জাত এবং স্বাদের পার্থক্যের কারণে আমের দাম ভিন্ন হয়। দেশের বাজারে ৭০-১৫০ টাকা কেজিতে আম মেলে। তবে জাপানে এক বিশেষ প্রজাতির আমের দাম প্রায় ২৪ হাজার টাকা! জাপানের ৬২ বছর বয়সী কৃষক হিরোউকি নাকাগাওয়া দেশটির হোক্কাইডো দ্বীপে এই আম চাষ করেন। ২০১১ সাল থেকে এ আম চাষ করছেন তিনি।
জানা যায়, আগে তেলের ব্যবসা করতেন নাকাগাওয়া। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষাবাদ করার লক্ষ স্থির করেন। অন্য এক কৃষকের পরামর্শে আম চাষ শুরু করেন। তবে শীতকালে আম চাষ করা যাবে কি না এ নিয়ে তার দুশ্চিন্তা ছিল। তবে বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে শীতকালে আম চাষ করা যায় শুনে তিনি আগ্রহী হন। এরপর গ্রীনহাউজ পদ্ধতিতে শীতে আম চাষ শুরু করেন তিনি।
বিশেষ এই আমের জন্য হোক্কাইডো দ্বীপের দুটি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করেন নাকাগাওয়া। একটি গরম পানি, অপরটি তুষার। শীতকালে সংরক্ষণ করে রাখা তুষার গ্রীষ্মকালে গ্রীনহাউস ঠান্ডা করার কাজে লাগান তিনি। আর শীতে গ্রীনহাউস গরম করতে ব্যবহার করেন প্রাকৃতিক গরম পানি। এভাবে প্রতি মৌসুমে প্রায় পাঁচ হাজার আম উৎপাদন করেন নাকাগাওয়া। সেখানকার ওটোফুকে খামারে তিনি বিশেষ ব্যবস্থায় এই আম ফলান। ডিসেম্বরের প্রথম দিকে যখন বাইরে তাপমাত্রা মাইনাস আট ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি, সব কিছু জমে বরফ হয়ে যায়, তখন তিনি এ আম চাষ করেন।
এ পদ্ধতিতে চাষ করার ফলে আমগুলো শীতকালে পাকে। এ সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব থাকে না। তাই কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে না। হোক্কাইডোর বাতাসে কম আর্দ্রতার কারণে আমের গায়ে তেমন একটা দাগও পড়ে না। এই আম সাধারণ আমের চেয়ে অনেক মিষ্টি। এতে চিনির ঘনত্বের পরিমাণ প্রায় ১৫ গুন বেশি। ২০১৪ সালে ইসেতান নামে এক ডিপার্টমেন্ট স্টোর নাকাগাওয়ার উৎপাদিত একটি আম টোকিওর শিনজুকুতে প্রদর্শন করে। পরে তা বিক্রি হয় প্রায় ৪০০ ডলারে। একটি আমের এই দামের কারণে বিষয়টি তখন সংবাদ শিরোনাম হয়। ফলে অনেকেই কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। নাকাগাওয়ার সাক্ষাৎকারও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তিনি বলেন, ‘হোক্কাইডোতে আমি প্রকৃতির বাইরে গিয়ে প্রাকৃতিক কিছু করতে চেয়েছিলাম।’ নাকাগাওয়া এই উদ্যোগের নাম দিয়েছেন নোরাওয়ার্ক জাপান। এই আমের স্বত্বও তিনি নিজের করে নিয়েছেন। আর আমটির নাম দিয়েছেন ‘তুষারের মধ্যে সূর্য’।- রাইজিংবিডি.কম