মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

ঢাকার পার্কিং সমস্যা

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৬ জুন, ২০২৩

ঢাকা মহানগরী। ৩০৬.৪ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট বিশ্বের নবম বৃহত্তম নগরী। প্রায় দুই কোটি ৩২ লাখ লোকের বাস এখানে। বহুভাষী, বহুজাতিক, জনগোষ্ঠীর অবস্থান এখানে। প্রতি একর ভূমিতে ২০০ লোকের বাস নগরী ঢাকায়। ঘনবসতিপূর্ণ এ নগরে বহুমাত্রিক সমস্যা পরতে পরতে। গাড়ি পার্কিং সমস্যা এর একটি।
ঢাকায় সড়কপথ রয়েছে তিন হাজার কিলোমিটার। এর ভেতর প্রধান সড়ক মাত্র ২০০ কিলোমিটার, পার্শ্ব সড়ক ১১০ কিলোমিটার, সংযোগ সড়ক ৫০ কিলোমিটার, অপ্রশস্ত গলি বা সরু রাস্তা ২৬৪০ কিলোমিটার। জনসংখ্যা অনুপাতে ২৫-৪০ শতাংশ রাস্তার প্রয়োজনে ঢাকার রয়েছে ৭ শতাংশ সড়ক পথ। এই ৭ শতাংশ সড়কপথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৯ লাখ যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের এই বিচিত্র মিছিলে রয়েছে ২৮ শতাংশ প্রাইভেটকার, ৪১ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১১ শতাংশ জিপ ও মাইক্রোবাস, ৬ শতাংশ ট্রাক, ৩ শতাংশ অটোরিকশা, ২ শতাংশ বাস ট্যাক্সি, ১ শতাংশ মিনিবাস এবং ৭ শতাংশ অন্যান্য ধরনের যানবাহন। স্বাভাবিকভাবেই এই যানজটের কোনো তুলনা হয় না। এরপর গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো প্রতিদিন যোগ হচ্ছে ৫৩২টি নতুন গাড়ি। গাড়ির যন্ত্রণায় হাঁসফাঁস অবস্থা। বিশ্বের বড় বড় নগরীতে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও ঢাকা মহানগরীতে এরকম পরিকল্পিতভাবে গাড়ি পার্ক করার কোন স্থাপনা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু জায়গায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও তা প্রথমত, সমুদ্রে বারিবিন্দুর মতোই। দ্বিতীয়ত, এসবের সংবাদ অধিকাংশের কাছেই অজানা। তৃতীয়ত, পার্কিং চার্জ বেশ বেশি। ১৭ লাখ প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস এবং জিপের জন্য সাকুল্যে পার্কিং ব্যবস্থা প্রায় ১০ হাজারের মতো। ঢাকা শহরে যারা নিজেরা গাড়ি চালানোর কথা ভাবেন বা গাড়ি চালান তাদের জন্য অফিসের পথে গাড়ি পার্কিং একটা দুঃস্বপ্ন। ফলে অফিসের চত্বরে, রাস্তায়, গলিতে, সংযোগ সড়কে, অনুমোদিত বা অননুমোদিতভাবে গাড়ি পার্কিং তৈরি হয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সংযোগ সড়কে ট্রাফিক বিভাগ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করলেও কার্যত, তা সমস্যার কোনো সুরাহা করতে পারেনি। উপরন্তু পার্কিং করার কারণে রাস্তা আরো সঙ্কুচিত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
ঢাকা শহরে মূল রাস্তার পাশে রয়েছে শতাধিক খোলাবাজার। রয়েছে প্রায় হাজার তিনেক ছোটখাটো শপিংমল। এর প্রায় সবগুলোই পার্কিং সুবিধাহীন। যারা এসব জায়গায় বাজার করতে আসেন তারা রাস্তার পাশে, অনেক সময় রাস্তার ওপর গাড়ি পার্ক করে রাখেন। বিভিন্ন নাম করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান সড়কের পাশে হওয়ায় এবং পার্কিং ব্যবস্থা না থাকায় স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় সৃষ্টি হয় অবর্ণনীয় যানজটের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যখন খোলা থাকে তখন এর প্রভাব খুব ভালোভাবেই চোখে পড়ে। নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহ অক্ষুণ্ন রাখার জন্য প্রয়োজন শহরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে অফিস পাড়া, ব্যাংক পাড়া, স্কুল কলেজের আশপাশে, শপিংমলভিত্তিক এলাকাগুলোতে পরিকল্পিতভাবে বহুতলাবিশিষ্ট ৫০০ থেকে এক হাজার গাড়ির সঙ্কুলান হয়, এরকম পার্কিং ভবন তৈরি করা। এটা বিনিয়োগ। পার্কিং ফি থেকেই একসময় এই বিনিয়োগ উঠে আসবে। যারা আবাসন ব্যবস্থার সাথে জড়িত তাদেরকে এ ব্যাপারে ভাবার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। ঢাকার নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, হকার্স মার্কেট, চন্দ্রিমা মার্কেটের পাশে এ ধরনের একটা পার্কিং ভবন তৈরি করা গেলে এ পথের যানজট না থাকার কথা। এমনিভাবে নয়াপল্টন এলাকা, মালিবাগ এলাকাকেন্দ্রিক পার্কিং ভবন তৈরি করা গেলে মূল সড়কের যানবাহনের চাপ কমবে। পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে রয়েছে সাইকেলের স্ট্যান্ড। ঢাকা মহানগরীতে তরুণ তরুণীরা এখন সাইকেলের দিকে ঝুঁকছেন।
সাইকেল পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা গেলে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমবে। গণপরিবহনের সুষ্ঠু পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা মানুষকে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ সীমিত করে দেয়। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কার্যকরী এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে জাতিকে স্মার্ট দেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। তার এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে হলে ঢাকা মহানগরীকে স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার বিকল্প নেই। যানজটের দুঃসহ সমস্যার জর্জরিত ঢাকা মহানগরীতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পার্কিং ভবন তৈরি এরই একটি ধাপ। শপিংমলগুলোকে গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা বাধ্যতামূলক করা উচিত। রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা দরকার। প্রয়োজন ঢাকা শহরে নতুন গাড়ির চাপ বন্ধ করা; পুরাতন, পরিবেশ দূষণকারী গাড়িগুলোর নিবন্ধন বাতিল করা উচিত। নতুন নতুন পরিকল্পিত গাড়ি পার্কিং ভবন নির্মাণ, সাথে সাথে অতিরিক্ত গাড়ির নিয়ন্ত্রণ, গণপরিবহন ব্যবস্থার কার্যকরী ব্যবস্থাপনা ঢাকা শহরকে একটি আধুনিক স্মার্ট নগরীতে পরিণত করার ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে নেবে নিঃসন্দেহে। লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ
Email- shah.b.islam@gmail.com




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com