ঢাকা বিশ্বের মধ্যে বসবাস অযোগ্য হিসেবে অনেক আগেই চিহ্নিত হয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকার ইকোনোমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট গ্লোবাল লাইভএবেলিটি ইনডেক্স ২০২৩ বা বিশ্বের বাসযোগ্য শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। ১৭২টি দেশের রাজধানীর বাসযোগ্যতা নিয়ে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ঢাকার অবস্থান ১৬৬। অর্থাৎ ঢাকা অবাসযোগ্যতার দিক থেকে ৭ নম্বরে রয়েছে। অথচ আমাদের যেন উন্নয়নের শেষ নাই। বিশেষ করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন নিয়ে গর্ব করা হয়। বছরের পর বছর ধরে যে রাজধানীতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, তার কোনো উন্নতিই হচ্ছে না। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার উন্নতি এখন পর্যন্ত হয়নি। বছরে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হলেও পানি নিষ্কাশনজনিত অবকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে না। মূলত পানি নিষ্কাশনের দায়িত্ব দুই সিটি করপোরেশেন এবং ওয়াসার। এই দুই প্রতিষ্ঠান এক্ষেত্রে কি কাজ করছে, তাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছর জুড়ে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করেও পানিবদ্ধতা নিরসন করতে পারছে না। উভয় প্রতিষ্ঠান বড় বড় প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে ঠিকই, সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। সিটি করপোরেশন কিছু খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা করলেও তা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। এতে অর্থ খরচ হলেও নিষ্কাশন ব্যবস্থা কার্যকর হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় রয়েছে ১২৫০ কিলোমিটার এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রয়েছে ৯৬১ কিলোমিটার ড্রেনেজ লাইন। দুই সিটি করপোরেশনের অধীনে রয়েছে ২৬টি খাল। অন্যদিকে, ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ৩৮৫ কিলোমিটার গভীর ড্রেনেজ লাইন। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব ড্রেন ও খাল ভরাট হয়ে যায়। ফলে বৃষ্টির সময় এগুলো পানি ধারণ এবং নিষ্কাশন করতে পারে না। বলা বাহুল্য, সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসার উদাসীনতা ও শৈথিল্যের কারণে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। যদি সারা বছর এসব ড্রেন ও খাল পরিস্কারের উদ্যোগ থাকত, তাহলে সামান্য বৃষ্টিতে রাজধানীতে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হতো না।
রাজধানীকে বলা হয়, দেশের মুখ। মুখ দেখে যেমন মানুষের সুখী-অসুখীর বিষয়টি বোঝা যায়, তেমনি রাজধানীর চেহারা দেখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির বিষয়টি বোঝা যায়। আমাদের দেশ যে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে, তা ঢাকার অবস্থা দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। এখানে যেমন সারাবছর যানজট লেগে থাকে, তেমনি বর্ষা মৌসুমে যুক্ত হয় পানিবদ্ধতা। এক অসহনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মানুষের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না। রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা যদি ধীর কিংবা অচল হয়ে থাকে, তাহলে তা উন্নয়নের প্রতীক হতে পারে না। রাজধানীর পানিবদ্ধতা ও যানজটের নিরসন হয়ে কবে গতিশীল হবে, তা অনিশ্চিত। এই দুই দুর্ভোগ যেন রাজধানীবাসীর ললাট লিখন হয়ে আছে। আমরা বহুদিন ধরেই সঠিক পরিকল্পনা এবং তা দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যা নিরসনের তাকিদ দিয়ে আসছি। জনগণের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরছি। তবে তা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা সমস্যা নিরসনের অগ্রগতি না থাকা থেকে বোঝা যায়। বরং সমস্যা দিন দিন বাড়ছে। আমরা মনে করি, দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য রাজধানীর প্রধান দুই সমস্যা পানিবদ্ধতা ও যানজট নিরসনে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সচেতন হওয়া এবং গুরুত্ব দেয়া উচিত। কালক্ষেপণ না করে সঠিক পরিকল্পনা এবং সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্ষা সবে শুরু। তাই এখন থেকে পানিবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।
বৃষ্টিতে রাজধানীর পানিবদ্ধতা সৃষ্টি নতুন কিছু নয়। বছরের পর বছর ধরেই বৃষ্টির মৌসুমে রাজধানীবাসীকে পানিবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানীর অনেক এলাকার সড়ক পানির নিচে চলে যায়। এতে যান চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। বিকল্প পথ না থাকায় যানবাহনকে পানি ঠেলেই চলতে হয়। পানির মধ্য দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক যানবাহনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দৃষ্টিনন্দন এক্সপ্রেসওয়ের অন্যতম রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এ ৩শ’ ফুট। মূল সড়ক বৃষ্টির পানি জমে অচল হয়ে আছে। গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে এক্সপ্রেসওয়ের ৫টি আন্ডারপাসে ৩ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানি থাকায় এমন অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে। পানি সরানোর ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। ব্যয়বহুল সুপ্রশস্ত এক্সপ্রেসওয়ের এমন বেহাল দশা কেন? সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যেতে পারে না। ঈদের দিন থেকে রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। গত শনিবার দুপুরের পর থেকে বেশ ভারি বর্ষণ হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এ সময় রাজধানীতে ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কখনো মুষলধারে, কখনো থেমে থেমে। এতে পুরাতন ঢাকা থেকে শুরু করে অভিজাত ও বাণিজ্যিক এলাকার অনেক সড়কে পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও কোমর সমান পানি জমে। ঈদের ছুটি থাকায় রাজধানীতে মানুষের চলাচল সীমিত ছিল। ফলে পানিবদ্ধতা তেমন সমস্যা সৃষ্টি করেনি। ছুটি শেষে মানুষ রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে। গতকাল থেকে অফিস-আদালত খুলেছে। শিঘ্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলবে। ফলে ব্যস্ত নগরীতে পানিবদ্ধতা যে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে, তাতে সন্দেহ নেই। তাই উল্লেখিত সমস্যাগুলো সমাধানে এখনই ব্যবস্থা নিন।