অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরের। মারা যাচ্ছে শত শত মানুষ, লাখো মানুষ ঘরছাড়া। এই অবস্থায় মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে জরুরি ভিত্তিতে আলোচনা হলো। বাস্তিল দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ফ্রান্সে যাওয়ার সাথে সাথে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মণিপুর হিংসা নিয়ে সরগরম হয়ে ওঠে। সংসদে বিজেপি দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের দ্বারা মোতায়েন করা ‘জাতিগত বিভাজনমূলক নীতির’ জোরালো ভাষায় নিন্দা করা হয়েছে।
প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে দাবি করা হয়েছে এটি দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। ফ্রান্সের স্ট্রাসবার্গে পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন চলাকালীন মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন লঙ্ঘনের মামলাগুলির মধ্যে মণিপুরের জাতিগত সংঘর্ষের বিষয়টি সংসদের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছে। মণিপুরে সহিংসতা, জীবনহানি এবং সম্পত্তির ধ্বংসের নিন্দা করে ইইউ পার্লামেন্ট তার রেজুলেশনে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃস্থানীয় সদস্যদের জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গির কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছে। যদিও ভারত সরকার এই বিষয়টিকে সম্পূর্ণ ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে পরিস্থিতি সামলাতে চেয়েছিলো। তা সত্ত্বেও ইইউ পার্লামেন্ট দেশের পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে বলেছে, “সংখ্যালঘু, সুশীল সমাজ, মানবাধিকার কর্মী এবং সাংবাদিকরা নিয়মিত হয়রানির সম্মুখীন, বিশেষ করে নারীরা যৌন সহিংসতা এবং হয়রানিসহ উপজাতীয় এবং ধর্মীয় পটভূমির সাথে সম্পর্কিত তাদের অধিকারের গুরুতর লঙ্ঘনের সম্মুখীন”।
রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ সালের অক্টোবরে, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মানবাধিকারকর্মীদের অধিকার রক্ষার জন্য ভারতের কাছে আবেদন করেছিলেন, নাগরিক সমাজের পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। সেইসঙ্গে বিজেপির ‘জাতিগত বিভক্ত নীতির’ সমালোচনা করেছিলেন।
ইইউর রেজুলেশনে বলা হয়েছে, ”মণিপুর রাজ্যে প্রধানত হিন্দু মেইতি সম্প্রদায় এবং খ্রিস্টান কুকি উপজাতির মধ্যে জাতিগত এবং ধর্মীয় সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে।
যার ফলে ১০০ জনেরও বেশি লোক নিহত, ৪০,০০০ জনেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। নষ্ট হয়েছে একাধিক সম্পত্তি। মণিপুর এর আগে বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহের মুখোমুখি হয়েছে যেখানে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সহিংসতায় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি মণিপুরে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন সরকারকে এবং জাতিগত বিভাজনমূলক নীতির বাস্তবায়নের জন্য অভিযুক্ত করেছে।”
যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের প্রতি মানবিক সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য এবং স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের দ্বারা তদন্ত করার জন্য ভারত ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইইউ পার্লামেন্ট। রাজনৈতিক নেতাদের বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য এবং নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য বন্ধ করার আবেদন জানানো হয়েছে।
কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্য সরকার উভয়কেই মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা শুরু করতে বলেছে ইইউ পার্লামেন্ট। সংসদ এই অঞ্চল থেকে বিতর্কিত সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা সংক্রান্ত আইন (অঋঝচঅ) প্রত্যাহার করার পাশাপাশি ইন্টারনেট পরিষেবা পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছে। পার্লামেন্ট আরও প্রস্তাব করেছে, ইইউ এবং ভারত যৌথভাবে মানবাধিকারের সমস্যাগুলি, বিশেষ করে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা সংক্রান্ত সমস্যাগুলি মোকাবেলা করা উচিত। সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস