বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ পূর্বাহ্ন

স্যারকে কেনো ভালোবাসি: অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০২৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগরে অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে তার প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে বলেছেন, ‘স্যারকে কেনো ভালোবাসি।’ তার এই প্রতিক্রিয়াটি দৈনিক মানবজমিনের অন লাইন ভার্সনে গত ২৭ জুলাই প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক খবরপত্রের পাঠকতের জন্য এটি তুরে ধরা হলো, ‘দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে খারাপ কথা শুনি একটি মহল থেকে। বলা হয় তিনি হচ্ছেন সুদখোর। আমি যখন এটা শুনি তখন খুব হাসি লাগে। মনে হয় সুদখোর কে না। আমিও তো সুদখোর, আমার ব্যাংকে একাউন্ট আছে। সেখান থেকে কী আমি সুদ পাই না? বাংলাদেশে যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছেন, বাংলাদেশে যারা বড় ব্যবসায়ী আছেন, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ যারা আছেন তাদের ব্যাংকে একাউন্ট নাই? তারা কী সুদ খান না? মজার বিষয় হচ্ছে একটা সরকার যখন চালানো হয়, সরকারও কিন্তু সুদের কারবার করে। আমরা সরকারি ব্যাংকগুলো থেকে টাকা নেই আমাদের এখানে একটা ইন্টারেস্ট দিতে হয় না? সরকার যে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের থেকে টাকা নেয় সেখানে সুদের ব্যাপার আছে না? তো একটা দেশে জনগণ, প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র সবই সুদ-নির্ভর একটা অর্থনীতি। কারণ আমাদের এখানে ইসলামী অর্থনীতির স্কোপ তো খুব ছোট। এটা মূলত সুদ-নির্ভর অর্থনীতি। সবাই এই প্রক্রিয়াতে আছে। যারা এই প্রক্রিয়ার নেতৃত্বে আছে তারাই ড. ইউনূসকে সুদখোর বলা শুরু করে। এরচেয়ে ফানি জিনিস আর কি হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা- যেসব প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে উনি কোন ধরনের প্রফিট বা বেতন কিছুই নেন না। উনি শুধু লেকচার দিয়ে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতে পারেন বছরে। উনার তো এসব প্রয়োজন পড়ে না।
তার বিরুদ্ধে যেসমস্ত অপবাদ চালানো হয় সেগুলি বিদেশে এসে এখন বেশি করে মনে পড়ছে। এখন লাঙ্কাউইতে এসে দেখলাম ইউনূস স্যারকে দেখে পৃথিবীর ৩০টা দেশ থেকে লোকজন এসেছে। স্যার যখন স্টেজে গেল স্যারকে সম্মান জানাতে গিয়ে সবাই দাঁড়িয়ে গেল। এখানে একটা ইউনিভার্সিটি আছে অষ ইঁশযধৎর টহরাবৎংরঃু সেটা মালয়েশিয়ান একটা স্বনামধন্য ইউনিভার্সিটি। সেই ইউনিভার্সিটিতে স্যারকে চ্যান্সেলরের সম্মান দেয়া হয়েছে, যেটা আমরা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রেসিডেন্টকে দিতে হয়। শুধু মালয়েশিয়ান ইউনিভার্সিটি নয় পৃথিবীর প্রায় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় অত্যন্ত প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্যারের চিন্তাচেতনা, উদ্ভাবন এগুলোর ওপর রিসার্চ হচ্ছে। ইউনূস সেন্টার হচ্ছে। সোশ্যাল বিজনেস সেন্টার হচ্ছে। থি-জিরো ক্লাব হচ্ছে। এবং সোশ্যাল বিজনেসের ওপর মাস্টার্সের কোর্স খোলা হচ্ছে।
আমরা যদি আবার পুরস্কারের দিক থেকেও দেখি আমাদের দেশে যে সমস্ত ক্ষমতাবান লোকজন একটা-দুইটা পুরস্কারের জন্য কি-না করেন, লবিস্ট নিয়োগ সহ। এসমস্ত অনেক খবর আমরা শুনি। আর যখন দেখি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম যত পুরস্কার আছে সবগুলোই স্যার পেয়েছেন। এরমধ্যে আছে নোবেল প্রাইজ, ম্যাগসেসে প্রাইজ, আমেরিকান কনগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ড- সবগুলোই উনি পেয়েছেন। স্যারের সোশ্যাল বিজনেসের সাথে পৃথিবীর বড় বড় মাল্টিলেটারেল কোম্পানি আছে বড় বড় প্রতিষ্ঠান আছে তারা ইনভলব হচ্ছে। আমার কাছে এই জিনিসটা খুব অবাক লাগে- সারা পৃথিবীতে বড় বড় রাষ্ট্র নায়করা এবং শক্তিশালী কান্ট্রিগুলো, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানি, বড় বড় থিংকট্যাঙ্ক, বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়, সবচেয়ে মেধাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা সবাই স্যারকে এত সম্মান করে আর আমাদের দেশে কিছু ক্ষমতাবান মানুষ স্যারকে কতভাবে অপমান করা যায় সেই চেষ্টা করে। এদেরকে যদি স্যারের সাথে কোন একটা প্রোগ্রামে নিতে পারতাম, নিজের চোখে দেখতেন আপনাদের অবস্থান কোথায় আর স্যারের অবস্থান কোথায়। আজ স্যার এখানে একটা বক্তৃতা দিয়েছেন ভালো লাগলো শুনে। মনে হয় একটা মানুষের মাথায় এত উদ্ভাবনী চিন্তা হতে পারে। যেমন আমি পরিবেশ আইন নিয়ে পড়াশোনা করেছি। পরিবেশ আইনে আমরা সবসময় বলি- বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে হলে রিসাইকেল করতে হবে। আর স্যার যখন বলেন এটা কত সুন্দর করে বলেন। তিনি বলেন, না- রিসাইকেলের চিন্তা পরে। প্রথম করতে হবে রিফিউজ, তারপর করতে হবে রিডিউস, তারপর রিসাইকেল। কনসেপ্টটা ব্যাখ্যা করেছেন স্যার। রিফিউজ মানে প্রথমেই পরিবেশ বিনাশী যে পণ্য আছে প্রথমে আমাকে সেটা রিফিউজ করতে হবে। ইউজই করবো না। তারপর যদি কোন কারণে আমাকে কিছুদিনের জন্য যদি ইউজ করতে হয় সেটাকে আমাকে কম মাত্রায় করতে হবে, খুব কম মাত্রায়। যেটা আমি করব সেটাকেও আমাকে রিসাইকেল করতে হবে।
আমি কত গ্লোবাল কনফারেন্সে গেলাম, পরিবেশের ওপর কত আর্টিকেল পড়লাম এত সুন্দর করে কাউকে বলতে শুনি নাই। উনি যখন ব্যাখ্যা করেন চাকরি না সবাইকে উদ্যোক্তা হতে হবে। উনি যখন ব্যাখ্যা করেন এৎড়ঃিয বেইজ ইকোনোমি করলেই হবে না এটা সার্কুলার ইকোনমি হতে হবে। সাসটেইনেবল ইকোনমি হতে হবে। উনি যখন বলেন, আমার বিজনেসের লক্ষ্য শুধু প্রফিট থাকবে না, সামাজিক সমস্যার সমাধানও থাকতে হবে। এই সমস্ত নতুন চিন্তা চিন্তার জগতে, ক্ষমতাবানদের জগতে থিঙ্কট্যাঙ্কের জগতে গ্লোবাল অর্গানাইজেশন যেমন ইউনাইটেড ন্যাশনে কি পরিমাণ আলোড়ন তুলেছে এটা নিজে ধৈর্য দিয়ে না শুনলে বুঝা যাবে না। যেমন আমরা জানি যে ফ্রান্সের যে অলিম্পিক আছে সেখানে সোশ্যাল বিজনেস মডেলে সেটাকে সাজাতে বলেছিল। আজকে জানলাম যে ইতালিতে যে উইন্টার অলিম্পিক হবে ২০২৬ সালে সেখানে স্যারকে রিকোয়েস্ট করেছে সোশ্যাল বিজনেস মডেলে এটা আয়োজনের ব্যবস্থা করতে। আরও অনেক জায়গা থেকে স্যারকে অনুরোধ করেছে। স্যার সময় পান না। আমার মনে হয়, এই রকম একটা অসীম উদ্ভাবনী শক্তির মানুষ, মৌলিক চিন্তার মানুষ, এই ধরনের গ্লোবালি সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ যে মানুষটা, যার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কর্মোদ্যম রয়েছে, যার তরুণদেরকে অসীমভাবে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা আছে এইরকম একটা মানুষকে যদি বাংলাদেশে আমরা ব্যবহার করতে পারতাম, যদি বাংলাদেশে কখনো এরকম একটা সরকার আসতো, স্যারের সক্ষমতাকে ব্যবহার করতে পারতো তাহলে আমরা পৃথিবীতে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে না, কূটনৈতিকভাবে, রাজনৈতিকভাবেও আমরা অনেক বড় জায়গায় চলে যেতাম।
স্যারকে একটা জিনিস বলবো- বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ আপনাকে প্রচ- ভালোবাসে। কোন অপপ্রচারে তারা বিভ্রান্ত হয় নাই। আমি যখন ফেসবুকে আপনার সম্পর্কে কমেন্ট দেই বড়জোর ১০ ভাগ মানুষ নেগেটিভ কমেন্ট করে। এরা কারা সেটা আপনিও জানেন, আমরা জানি, সবাই জানে। বাকি ৯০ ভাগ মানুষ ভালোবাসে। এত অপপ্রচারের পরও আপনার যে অবদান আপনার প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা সেটা অভিভূত করার মতো। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করি। বাংলাদেশের জন্য আপনি অনেক কিছু করতে পারেন, করার সুযোগ যেন আপনার হয়- সেই কামনা করি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com