গঙ্গাচড়ায় ভাঙছে নদী, নিঃস্ব মানুষ। তিস্তা ভাঙতে ভাঙতে আজ নিঃস্ব করেছে মানুষকে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে অনেক অবস্থা সম্পন্ন কৃষক এখন দিনমজুর, রিকশাচালক কিংবা হোটেল শ্রমিক ।
হতদরিদ্রের খাতায় উঠছে তাদের নাম। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত তিস্তার ভাঙনে কত পরিবার নিঃস্ব হয়েছে তার সঠিক হিসেব না থাকলেও প্রতি বছর ২০০-৪০০ পরিবার গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনে সর্বহারা হচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলা অফিসের এক হিসেব মতে, শুধু এ বছর প্রায় ২০০ পরিবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। বিনবিনা এলাকার রুহুল আমিন। জমি ছিল ছয়-সাত একর। জমাজমি, ঘরবাড়ি তিস্তায় বিলীন হয়েছে। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাস করছে। একই এলাকার মমিন মিয়া, ঈমান আলী ভাঙনে সব হারিয়ে এখন অন্য স্থানে বসবাস করছে। ছয় বার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন নুর ইসলাম নাড্ডা(৮০)। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের গান্নারপাড় গ্রামের আব্দুল মজিদ আবাদি জমি বলতে ছিল তার সাত একর জমি। বেশ সুখে-শান্তিতে ছিল তার পরিবার। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে সব জমিই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মজিদ এখন পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যের জমিতে বাস করছে। গঙ্গাচড়ার তিস্তাপারে হাজারো মানুষের গল্প এমন। জমাজমি হারিয়ে বাস্তুহারা আলম বাদশা(৬০) উপজেলার অলমবিদিতর ইউনিয়নের পাইকান গ্রামে ঘর তুলেছেন। তিনি নদীর দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলল, ঔ যে দেখছেন না, ঔখানে বাড়ি ছিল। দুই-তিন বছরে কি থেকে কি হয়ে গেল। জীবনে পাঁচ বার বাড়ি ভাঙছি। এখন এখানে এসে বসবাস করছি। এক সময় নিজের জমিজমা থাকলেও এখন অন্যের জমিতে কাজ করে সংসার চালাই। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে প্রতি বছর ঘরবাড়ি, আশ্রয়ণকেন্দ্র, বিদ্যালয়, আবাদি জমি ও অন্যান্য স্থাপনা ভাঙছে। থেমে নেই ভাঙন। নদীতে বিলীন হচ্ছে স্বপ্ন। বাড়ছে দুঃখ-কষ্ট, হতাশা। শেষ নেই দুর্ভোগের। বর্ষায় তিস্তার ভয়াল রূপ হলেও শুষ্ক মৌসুমে প্রতি বছর পলি জমতে জমতে ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর বুক। ফলে বর্ষায় সহজে ভরে যায় নদী, ভাঙে এ কূল, ও কূল আর পুড়ে যায় মানুষের কপাল। লক্ষ্মীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, তিস্তার ভাঙনে জমাজমি হারিয়ে প্রতি বছর শত শত পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। তিস্তার ভাঙন রোধে ডান তীরের মতো বাম তীর বাঁধে ব্লক পিচিং এর কাজ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বিনবিনা থেকে শংকরদহ পর্যন্ত সাত কিলোমিটার একটি বেড়িবাঁধ খুবই প্রয়োজন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, তিস্তার ডানতীর আপাতত শান্ত। তবে তিস্তার ভাঙন এখন বাম তীরে। সেই ভাঙনের স্থায়ী সমাধানের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদনও হয়ে গেছে। একটি কোম্পানিকে ফিজিকাল স্ট্যাডি করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফিজিকাল স্ট্যাডি হয়ে গেলে তারপর প্রকল্প তৈরি করে পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের একটা প্রস্তাবনা আছে। তবে সেটিও এখন ফাইনাল হয়নি।