হযরত সা’দ ইবনে মুয়াজ [রা.] এর ইন্তেকালে জমিন কেঁপে উঠেছিল। স্পষ্ট হাদিস আছে। তাঁর মৃত্যুর পর জিবরাইল (আ.) রেশমি পাগড়ি পরিধান করে রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বলেন,কে মৃত্যুবরণ করেছে যার জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে এবং যে কারণে আরশে কম্পন সৃষ্টি হয়েছে! রাসুল সা. দৌড়ে সা’দ রা. এর কাছে যান। গিয়ে দেখেন তিনি আর বেঁচে নেই। (বুখারী:হাদিস নং- ৩৮০৩,মুসলিম: হাদিস নং – ২৪৬৬)
আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্বিয়ামাত (কিয়ামত) কায়িম হবে না, যে পর্যন্ত না ইল্ম উঠিয়ে নেয়া হবে, অধিক পরিমাণে ভূমিকম্প হবে, সময় সংকুচিত হয়ে আসবে, ফিতনা প্রকাশ পাবে এবং হারজ বৃদ্ধি পাবে। হারজ খুন-খারাবী। তোমাদের ধন-সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, উপচে পড়বে। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৯৭৯, বুখারী)। ভুমিকম্প এক আযাব, যা জুলুমের জন্য হয়। একজন নিরপরাধ বৃদ্ধ আলেমকে জুলুমের ফলে এটা আসা কি অসম্ভব? ভূমিকম্প ও সূর্য/চন্দ্র গ্রহণ দুটি আলাদা চরিত্রের। সূর্য ও চন্দ্র গ্রহণ নির্ধারিত, আগে থেকে বোঝা যায়। আর ভূমিকম্প হঠাৎ হয় এবং এটা আজাবের নিদর্শন। বহু জাতিকে ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে আাছে মোমেনের মৃত্যুতে আসমান-জমিন কাঁদে: ১.হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মোমেনের মৃত্যুর পর যমীন চল্লিশ দিন পর্যন্ত রোদন করে। ২. হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন, প্রত্যেক মানুষের জন্য আসমানে দু’টি দরজা রয়েছে। এক দরজা দিয়ে তার আমল উপরে উঠে অন্য দরজা দিয়ে তার রিযিক অবতরণ করে। মোমেন যখন মারা যায়, তখন আসমানের উভয় দরজা তার জন্য ক্রন্দন করতে থাকে। ৩. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেছেন, মোমেন বান্দার ইন্তেকালের পর কবরস্থান মোমেনের জন্য নিজকে সজ্জিত করে এবং কবরের প্রতিটি অংশই চায় যে, তার মাঝে সে বান্দাকে দাফন করা হোক। ৪.হযরত আতা খোরাসানী (রহঃ) বলেন, যে বান্দা যমীনের কোন অংশে সেজদা করে, সে অংশ কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে এবং তার মৃত্যুতে সে যমীন রোদন করে থাকে। ৫.হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, কেউ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, (তাদের জন্য আসমান যমীন কাদেনি)- এ আয়াতের অর্থ কি? এবং এও জিজ্ঞেস করলেন যে, আসমান যমীন কি কারো জন্য কাঁদে? তিনি উত্তর দিলেন হাঁ, আসমান যমীন কাঁদে, যত মাখলুক আছে সবার জন্যই আসমান যমীন কাঁদে। আসমানের দু’টি দরজা আছে, এক দরজা দিয়ে মানুষের রিযিক আসে আর অপর দরজা দিয়ে তার সৎকর্ম উপরে যায়। অতএব, মোমেন যখন ইন্তেকাল করে, তখন তার জন্য নির্ধারিত আসমানের উভয় দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং তার জন্য কাঁদতে থাকে। এমনকি যে যমীনে সে নামাজ আদায় করত, সে যমীনও তার নামাজের মোসল্লা না দেখে এবং আল্লাহর যিকির শুনতে না পেয়ে তার জন্য কাঁদতে থাকে। যেহেতু ফেরাআউন সম্প্রদায়ের এমন কোন ভাল কাজ ছিল না যা আসমানে যাবে, তাই এ দরজা তাদের জন্য কাঁদেনি।- (তাফসীরে ইবনে জরীর)
৬.শুরাইহ হাযরামী থেকে বর্ণিত, হুযুর (সাঃ) এরশাদ করেন, মোমেন যদি সফরাবস্থায় মারা যায় এবং তার জন্য সেখানে কেউ কাঁদার না থাকে, তখন আসমান যমীন তার জন্য কাঁদে। তারপর হুযুর (সাঃ) এর প্রমাণে নিম্মোক্ত আয়াত পাঠ করেন, তাদের জন্য আসমান ও যমীন কাঁদেনি। অতঃপর হুযুর (সাঃ) এরশাদ করলেন, কাফেরের মৃত্যুতে আসমান-যমীন কাঁদে না। মুজাহিদ বর্ণনা করেন, মোমেনের মৃত্যুতে আসমান-যমীন চল্লিশ দিন পর্যন্ত কাঁদে। -(নূরুসসুদূর ফী শরহিল কুবুর, পৃঃ ৮৮) ৭.আবু ওবায়দা বর্ণনা করেন, যখন মোমেন মারা যায় তখন যমীন ঘোষণা করতে থাকে, আল্লাহর অমুক বান্দার ইন্তেকাল হয়ে গেছে। অতঃপর আসমান যমীন তার বান্দার জন্য কাঁদছ? তারা উত্তর দেয়, এ বান্দা যেদিক দিয়ে পথ অতিক্রম করত আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করত। মুহাম্মদ ইবনে কায়স থেকে বর্ণিত, আসমান-যমীন যখন মোমেন বান্দার জন্য কাঁদে, তখন আসমান বলে, এ বান্দার পক্ষ থেকে সর্বদা আমার নিকট নেক আমল পৌছত, আর যমীন বলে, সর্বদা সে আমার উপর থেকে নেক আমল করত।
হযরত আতা, সুফিয়ান সাওরী ও হাসান (রাঃ) বর্ণনা করেন, আসমানের কিনারায় যে লাল বর্ণ দেখা যায় তা আসমানের ঐ কাদারই চিহ্ন। হযরত হাসান (রহঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা যখন কোন মোমেন বান্দার আত্মা সফরাবস্থায় সংহার করেন, তখন তার মোসাফেরী অবস্থার উপর দয়া করে তাঁকে আযাব দেন না। অতঃপর তিনি
ফেরেশতাদ্বয়কে নির্দেশ দেন, এ বান্দার জন্য কেউ কাঁদার নেই। অতএব, তোমরা তার জন্য কাঁদ।- (নূরুসসুদূর ফী শারহীল কুবুর, পৃঃ ৮৮-৮৯)। সূত্র: (মৃত্যুর আগে ও হাসরের পরে, ৫১-৫৩)