বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
বনফুল আদিবাসী গ্রীনহার্ট কলেজে মনমাতানো ক্লাস পার্টি অনুষ্ঠিত ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ

ইকোনমিস্টের দৃষ্টিতে ইউনূসের বিচার এবং…

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৩

বিদেশী দাতা, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্বের অনেক দরিদ্র মানুষের কাছে মুহাম্মদ ইউনূস একজন নায়কের নাম। অতি প্রান্তিক স্তরের মানুষ যেনো প্রচলিত ব্যাঙ্কিং সুবিধাগুলো পায় সেজন্য এই বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ, সামাজিক উদ্যোক্তা, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ক্ষুদ্রঋণ এবং অন্যান্য পরিষেবাগুলোর ব্যবহারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের উন্নয়নে নিজের কাজের জন্য- সবচেয়ে দরিদ্র‍্যদের ক্ষমতায়নে ২০০৬ সালে মিস্টার ইউনূস নোবেল শান্তি পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি যে মডেলটি এগিয়ে নিয়েছিলেন তা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছিল। তারপর সেটি বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।
তবুও ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করে আসা (আগেও একবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাছে মিস্টার ইউনূস এক আপদ। আগামী জানুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে শেখ হাসিনা প্রচারণামূলক বক্তৃতাগুলোতে তাকে আক্রমণ করেন। তিনি উন্নয়নের নায়ককে গরীবের “রক্তচোষা” বলে অভিহিত করেছেন, কথিত সুদের হারের জন্য তাকে অত্যন্ত খারাপ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনেন। দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য তাকে দায়ী করেন। বঙ্গোপসাগর নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মি. ইউনূস হয়তো কোনোভাবে আমেরিকাকে সাহায্য করে নিজ দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, এমনও ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন। মি. ইউনূসের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা অনেকদিন ধরেই এসব করছেন।
২০১১ সালে তিনি তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান থেকে অপসারণের জন্য চাপ দেন; পরে সরকার গ্রামীণ বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ২০০৭ সালে সামরিক শাসনের ভয়াবহ সময়কালে তিনি স্বল্প সময়ের জন্য রাজনীতিতে প্রবেশের কথা ভেবেছিলেন, এটাই হতে পারে তার মূল অপরাধ। কিন্তু সেটা কখনোই খুব সিরিয়াস প্রস্পেক্ট ছিল না জানিয়ে তিনি বেনিয়ানকে (ইকোনমিস্টের এশিয়া বিষয়ক কলামিস্ট) বলেন, “রাজনীতি আমার কম্ম নয়”। বর্তমানে ৮৩ বছর বয়সী মি. ইউনূস স্পষ্টতই শেখ হাসিনার জন্য সরাসরি কোনো হুমকি নন। তবে, প্রধানমন্ত্রীর শুরু করা নিপীড়ন দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে সেটা আওয়ামী লীগ এবং দেশটির অনুগত পুলিশ ও বিচার বিভাগকে বাধা দিচ্ছে না।
মি. ইউনূসকে দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে হাজির করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকি এবং শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের আনা হয়েছে। তিনি আশঙ্কা করছেন, তাকে গ্রেফতার করা হবে। কারো কারো মতে এই আক্রমণ দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোনকে দখল করার আগের ধাপ, যেটি চালু করতেও তিনি সহায়তা করেছিলেন।
কেউ শেখ হাসিনার বিরোধিতা করলে কিংবা তার থেকে বেশি উজ্জ্বল হলে সেটা তার কাছে অসহনীয় বলে মনে হচ্ছে। ৭৫ বছর বয়সী এই নেত্রীর বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি এমনভাবে কথা বলেন যেন তিনি চিরকাল ক্ষমতায় থাকবেন। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশকে একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারে। জুলাই মাসে বিরোধী দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) একটি প্রচারণা সমাবেশে রাবার বুলেট এবং কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যাকে বিরোধীদের উপর “পরিকল্পিত” হামলা বলে বর্ণনা করেছে। ৮০০ জনেরও বেশি বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিরোধী দলটির দাবি, ২০০৯ সাল থেকে তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে ৪০ লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সমালোচকরা বিড়বিড় করে বলেন যে, পারলে তিনি “টার্মিনেটর”কে অনুকরণ করবেন এবং তার জন্য যারা ভবিষ্যতে চ্যালেঞ্জ হবে তাদের হত্যার জন্য যথাযথ সময়ে চলে যাবেন।
বাংলাদেশের জন্য শেখ হাসিনার অধিকারবোধের মূলে রয়েছে মর্মান্তিক এক ক্ষতি: তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রায় সকল নিকটাত্মীয়কে ১৯৭৫ সালে সেনা অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি তার নিহত পিতার এবং এরপর নিজের জন্য যে ‘পারসোনালিটি কাল্ট’ গড়ে তুলেছেন – সেটা ক্ষতিকারক। যারা এই কাল্টে যোগ দেয়, তারা ক্রোনিজম ও দুর্নীতিতে স্থূল হয়ে পড়া সরকারকে সহায়তা করছে। সরকারকে সমর্থন করার বিনিময়ে, পছন্দের টাইকুনরা ব্যাঙ্কিং লাইসেন্স এবং অন্যান্য রসালো ফল পেয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশের কয়েক বছরের শক্তিশালী অর্থনৈতিক পারফরম্যান্সকে বিপন্ন বলে মনে হচ্ছে। দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একটি মাত্র খাত- পোশাক (শিল্প) এবং সেই সাথে প্রবাসী মেহনতি বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্সের উপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। যা কিনা বাংলাদেশের অগ্রগতির জন্য এক ভয়াবহ হুমকি হতে পারে। শেখ হাসিনার জন্যও যা সম্পূর্ণভাবে অপ্রয়োজনীয়। যদি তিনি একটি অবাধ নির্বাচন করতে দেন, তাহলে সম্ভবত তিনি জিততেন; বিরোধী দল খুবই দুর্বল। তবে তিনি এই পরীক্ষায় যাবেন না, কারণ তিনি তার কর্তৃত্ববাদকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে চান। তিনি তার দমন-পীড়নের বিরোধিতা করায় পশ্চিমা দেশগুলোর বিষোদগার করলেও, সত্যি কথা বলতে কি, তার বিরুদ্ধে তাদের সমালোচনা স্তিমিত হয়েছে। কেবল, আমেরিকা (যারা শেখ হাসিনাকে প্ররোচিত করবে বলে চীনের প্রচেষ্টাকে ভয় পায়) সম্প্রতি গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্নকারী বাংলাদেশিদের ভিসা সীমিত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। পশ্চিমের কাছে সাধু ব্যক্তিত্ব এবং (শেখ হাসিনার কাছে বিরক্তিকর) সম্ভবত সবচেয়ে সুপরিচিত বাংলাদেশি মি. ইউনূসের উপর আক্রমণ তার (শেখ হাসিনার) দায়মুক্তির প্রতীক। অশীতিপর এই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলে আমেরিকা ও তার মিত্ররা কি শেষ পর্যন্ত তাতে বাধা দেবে? মি. ইউনূসের জন্য সবচেয়ে ভালো আশা সেটাই হতে পারে। [লেখাটি বিখ্যাত বৃটিশ সাপ্তাহিক ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ এ ২৪ আগস্ট প্রকাশিত হয়েছে। অনুবাদ করেছেন তারিক চয়ন]




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com